• নির্দেশই সার, নিজের নিয়মে চলে স্কুলগাড়ি
    আনন্দবাজার | ২৭ নভেম্বর ২০২৫
  • স্কুলগাড়ি নিয়ে কলকাতা শহর লাগোয়া ভাঙড়েও অভিযোগ বিস্তর। বেসরকারি স্কুলগুলিতেই এ ধরনের গাড়ির ব্যবহার বেশি। প্রতিদিন কয়েক হাজার পড়ুয়া স্কুলগাড়িতে যাতায়াত করে। ভাঙাচোরা রাস্তা, পুকুরপাড়ের সরু গলি, মাটির পথ— এ সবের মধ্যে দিয়ে সময়ে পৌঁছতে ছুটে চলে পনেরো বছরেরও বেশি পুরনো লজঝড়ে গাড়িগুলি।

    এলাকার একাধিক গাড়ি ব্যবসায়ীর অভিযোগ, কম দামে পাওয়া পুরনো গাড়ি কিনে স্কুলের জন্য খাটান অনেকে। আইন ভেঙে বাড়তি সিট বসিয়ে খুদে পড়ুয়াদের তোলা হয় তাতে। এক গাড়ি ব্যবসায়ী বলেন, “একটি গাড়ির বিমা, ফিটনেস সার্টিফিকেট, রেজিস্ট্রেশন পুনর্নবীকরণ করতে বছরে ৪০-৫০ হাজার টাকা লাগে। অথচ, গাড়ি থেকে মাসে আয় হয় ৪-৫ হাজার টাকা। কী ভাবে সব নিয়ম মেনে গাড়ি চালাব?”

    কাশীপুর কিশোর ভারতী স্কুলে এখন প্রায় ১৩০০ পড়ুয়া। আশপাশের ১৪-১৫টি গ্রামের অধিকাংশ ছাত্রছাত্রীর যাতায়াত নির্ভর করে স্কুলগাড়ির উপরে। কিছু গাড়ির ক্ষেত্রে অভিভাবকদের ক্ষোভ আছে। তবে স্কুলের প্রধান শিক্ষক পলাশ গঙ্গোপাধ্যায় জানাচ্ছেন, “স্কুল সরাসরি কোনও পুলকার চালায় না। অভিভাবকেরাই গাড়ির ব্যবস্থা করেন। অধিকাংশ অভিভাবক মাসে ৭০০-৮০০ টাকার বেশি ভাড়া দিতে পারেন না। তাঁদেরও সচেতন হতে হবে।” ঘটকপুকুরে ‘সিটি ইংলিশ স্কুলে’ নার্সারি থেকে দ্বাদশ শ্রেণি পর্যন্ত প্রায় ৮০০ ছাত্রছাত্রী পড়াশোনা করে। ওই স্কুলের কর্মকর্তা মিজানুর রহমান বলেন, ‘‘আমাদের স্কুলের নিজস্ব কোনও পুলকার নেই। তবে আমাদের স্কুলের সঙ্গে যুক্ত যে সমস্ত পুলকার চলাচল করে, তার কাগজপত্র নিয়মিত পরীক্ষা করা হয়।’’

    অভিভাবকদের অনেকের অবশ্য অভিযোগ, ‘‘পুলিশ টাকা নিয়ে বাতিল হয়ে যাওয়া গাড়ি পুলকার হিসাবে চলাচল করার জন্য ছাড় দেয়। গাড়িতে অতিরিক্ত পড়ুয়া তোলা হলেও রাস্তায় পুলিশ আটকায় না। নিরাপত্তার দায়িত্ব তো পুলিশ ও স্কুল কর্তৃপক্ষেরও।’’

    কলকাতা পুলিশের ভাঙড় ট্রাফিক গার্ডের এক কর্তা মানছেন, পথে গাড়ি দাঁড় করিয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করলে শিশুদের অসুবিধা হতে পারে। সে কথা ভেবে পুলকারের কাগজপত্র নিয়মিত চেক করা হয় না। তবে উলুবেড়িয়ার দুর্ঘটনার পরে এ বার নিয়মিত বিভিন্ন স্কুলে গিয়ে পুলকারগুলির কাগজপত্র পরীক্ষা করার আশ্বাস দিয়েছেন তিনি।

    এক অভিভাবকের কথায়, ‘‘অনেক সময়েই গাড়ি দেখে মনে হয় বহু পুরনো। কিন্তু নিজেদের কাজের চাপে বাচ্চাকে স্কুলে দেওয়া-নেওয়া করতে পারি ন। ফলে ওই সব গাড়ির ভরসাতেই থাকতে হয়। গাড়িগুলির রক্ষণাবেক্ষণ, কাগজপত্র পরীক্ষা— এ সব বিষয়গুলি পুলিশ এবং স্কুল কর্তৃপক্ষ নিয়মিত খেয়াল রাখলে আমরা অনেক নিশ্চিন্ত হতে পারি।’’
  • Link to this news (আনন্দবাজার)