• শর্তসাপেক্ষে জল জীবন মিশনের অর্থ দিতে রাজি কেন্দ্রীয় সরকার, রাজ্যে দ্রুত স্কিম আইডি তৈরির নির্দেশ দিয়েও আশঙ্কায় নবান্ন
    আনন্দবাজার | ২৭ নভেম্বর ২০২৫
  • জল জীবন মিশনে রাজ্যগুলিকে ‘স্কিমভিত্তিক অর্থ’ দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে কেন্দ্রীয় সরকার। শর্তসাপেক্ষে কেন্দ্রীয় জলশক্তি মন্ত্রক এই অর্থ দেবে রাজ্যের জনস্বাস্থ্য ও কারিগরি দফতরকে। কেন্দ্রীয় সরকারের এমন আশ্বাসের পরেও অর্থ পাওয়া নিয়ে সন্দিহান নবান্নের একাংশের শীর্ষকর্তারা। ১০০ দিনের কাজের ক্ষেত্রে প্রথমে কলকাতা হাই কোর্ট এবং পরে সুপ্রিম কোর্ট সরকারকে পশ্চিমবঙ্গের এই প্রকল্প শুরু করে অর্থ বরাদ্দের নির্দেশ দিলেও এখনও তা করা হয়নি। তাই নবান্নের আধিকারিকদের একাংশ মনে করছেন, যত ক্ষণ না বরাদ্দ অর্থ পাওয়া যাচ্ছে, তত ক্ষণ এ বিষয়ে সন্দেহ থেকেই যাচ্ছে।

    এ ক্ষেত্রে জলশক্তি মন্ত্রকের শর্তে বলা হয়েছে, প্রতিটি স্কিমের জন্য আলাদা আইডি নম্বর তৈরি না হলে মিলবে না কেন্দ্রীয় বরাদ্দ। পাশাপাশি প্রতিটি স্কিমে ‘ফিনান্সিয়াল রিকনসিলিয়েশন’ বা আর্থিক সামঞ্জস্য বজায় রাখাও বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। রাজ্য কতটা খরচ করেছে, আর কেন্দ্রীয় বরাদ্দের মধ্যে কোনও অসামঞ্জস্য রয়েছে কি না— টাকা ছাড়ার আগে জলশক্তি মন্ত্রক তা খতিয়ে দেখবে। সেই ভিত্তিতেই মিলবে নতুন বরাদ্দ। কেন্দ্র-রাজ্য যৌথ উদ্যোগে জল জীবন মিশনের খরচ অর্ধেক অর্ধেক ভাগে বহন করা হলেও, রক্ষণাবেক্ষণের সম্পূর্ণ দায় রাজ্যের। নবান্ন সূত্রে জানা গিয়েছে, কয়েক দিন আগেই নতুন নিয়ম সম্পর্কে রাজ্যকে লিখিত ভাবে জানায় কেন্দ্র। মঙ্গলবার নয়াদিল্লির এক উচ্চপর্যায়ের বৈঠকে এই নিয়ম মানা বাধ্যতামূলক বলে স্পষ্ট জানিয়ে দেওয়া হয়। কেন্দ্রীয় সরকারের বার্তা, যত দ্রুত স্কিম আইডি তৈরি ও হিসাবে সামঞ্জস্যের কাজ শেষ হবে, তত তাড়াতাড়ি অর্থ ছাড়ের প্রক্রিয়া শুরু করবে তারা। ফলে বিষয়টিকে বিশেষ গুরুত্ব দিচ্ছে নবান্ন।

    জনস্বাস্থ্য কারিগরি দফতরের সব এগ্‌‌জ়িকিউটিভ ইঞ্জিনিয়ারকে ইতিমধ্যে জরুরি নির্দেশ দেওয়া হয়েছে দ্রুত আইডি নম্বর তৈরির কাজে নামতে। কেন্দ্রীয় পোর্টাল ব্যবহার করে ইতিমধ্যেই ৫৫টি স্কিম আইডি তৈরি হয়েছে বলেও দফতর সূত্রে খবর। এর ফলে আগামী মাসেই কেন্দ্রীয় বরাদ্দ মেলার সম্ভাবনা আছে বলে ইঙ্গিত মিলেছে। রাজ্যে প্রায় ১০ হাজার জল জীবন মিশন স্কিম রয়েছে। তবে একাধিক ছোট স্কিমকে একত্র করে সংখ্যা কমিয়ে আনা হবে সাড়ে ৬ হাজারের মতো। এখনও পর্যন্ত কেন্দ্র রাজ্যকে দিয়েছে ১৩,০২৭ কোটি টাকা, আর রাজ্য খরচ করেছে ১৫,২৫৯ কোটি।

    এক আধিকারিকের কথায়, “রাজ্য সরকার জল জীবন মিশনের নাম ‘জলস্বপ্ন’ করেছে— এই অভিযোগ তুলে কেন্দ্র টাকা আটকে দেয়। পরে দিল্লির বৈঠকে শর্তসাপেক্ষে অর্থ ছাড়ের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। রাজ্য সেই শর্ত মানতে রাজি।” তবে শর্ত পূরণ হলেও কেন্দ্রীয় অর্থ বরাদ্দ আদৌ দ্রুত মিলবে কি না, তা নিয়ে সংশয় রয়েছে নবান্নের আধিকারিকদের একাংশের । তাঁদের আশঙ্কা, প্রশাসনিক ভাবে শর্ত মানলেও রাজনৈতিক কারণে অর্থ ছাড়তে দেরি হতে পারে। তবুও বরাদ্দ নিশ্চিত করতে সব দিক থেকেই জোর তৎপরতা চালাচ্ছে রাজ্য সরকার।
  • Link to this news (আনন্দবাজার)