এসআইআর প্র্ক্রিয়া শেষের পথে। ৪ ডিসেম্বর এনুমারেশন ফর্ম জমা দেওয়ার শেষ তারিখ। শেষ মুহূর্তের ব্যস্ততা তুঙ্গে। ফর্ম বিলি ও সংগ্রহের কাজ প্রায় শেষ। সংগ্রহ করা তথ্য ডিজিটাইজেশনের কাজও শেষ পর্যায়ে। শেষ মুহূর্তের কাজের চাপে হাঁসফাঁস অবস্থা বিএলও-দের। মঙ্গলবার উত্তর ও দক্ষিণ পরগনার গোপালনগর ও নামখানায় ফের দুই বিএলওর গুরুতর অসুস্থ হওয়ার খবর সামনে এসেছে। অফিস থেকে দ্রুত কাজ শেষ করার জন্য অতিরিক্ত চাপ দিচ্ছিল বলে অভিযোগ করেছেন দুই বিএলও-র পরিবারের সদস্যরা।
সাগর বিধানসভার নামখানা ব্লকে অতিরিক্ত কাজের চাপে গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়েন ২৭৬ নম্বর বুথের বছর ৫০-এর বিএলও দেবাশিস দাস। মঙ্গলবার গভীর রাতে আচমকা ব্রেন স্ট্রোক হয়। সঙ্গে সঙ্গে তাঁকে ডায়মন্ড হারবারের একটি বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। বর্তমানে তিনি আইসিইউতে সংজ্ঞাহীন অবস্থায় ভর্তি। চিকিৎসকদের মতে, তাঁর অবস্থা অতিমাত্রায় সঙ্কটজনক। অন্যদিকে, বনগাঁর গোপালনগরে হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে বিএলও সুশান্ত টিকাদার চিকিৎসাধীন কল্যাণীর একটি হাসপাতালে। এসআইআর নিয়ে কাজের চাপ ও টেনশন থেকেই তিনি হৃদরোগে আক্রান্ত হয়েছেন বলে দাবি পরিবারের।
মাতঙ্গিনী শিক্ষাকেন্দ্রের প্রধান শিক্ষক হিসেবে কাজ করেন দেবাশিস দাস। এনুমারেশন ফর্ম দ্রুত ডিজিটাইজ করার কাজে পিছিয়ে পড়ছিলেন বলে দাবি পরিবারের। গত এক সপ্তাহ ধরে বিডিও অফিস থেকে তাঁকে দ্রুত ডেটা আপলোড করার চাপ দেওয়া হচ্ছিলে বলে জানিয়েছেন পরিবারের সদস্যরা। অসুস্থ দেবাশিসের স্ত্রী রিনা দাস জানিয়েছেন, ‘রাতেও অফিসের ফোন আসত। চাপটা আর নিতে পারছি না বলে জানিয়েছিলেন। কাল রাতে হঠাৎ মাথা ঘুরে পড়ে যায়।’ অসুস্থ বিএলও–র পরিবারের অভিযোগ খতিয়ে দেখা হবে বলে জানিয়েছে জেলা প্রশাসন।
অন্যদিকে, বনগাঁ উত্তর বিধানসভার গোপালনগর–১ পঞ্চায়েতের ১০৬ নম্বর বুথের বিএলও হিসেবে কাজ করছেন ৫৩ বছরের সুশান্ত টিকাদার। প্রাইমারি স্কুলে শিক্ষকতা করেন সুশান্ত টিকাদার। সুগার এবং ব্লাড প্রেশারের সমস্যা ছিল বলে জানিয়েছে পরিবার। বিএলওর দায়িত্ব পাওয়ার পর থেকে অত্যধিক কাজের চাপে টেনশন করছিলেন। সময় মতো এনুমারেশন ফর্ম কমিশনের অ্যাপে আপলোড করা নিয়ে সমস্যা হচ্ছিল তাঁরও। সোমবার রাতে হৃদরোগে আক্রান্ত হন সুশান্ত। প্রথমে বনগাঁ হাসপাতালে ও পরে অবস্থার অবনতি হলে সুশান্তকে কল্যাণীর জওহরলাল নেহরু হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।
সুশান্তর স্ত্রী সবিতা বলেন, ‘ওঁর প্রেশারের সমস্যা ছিল। ফর্ম বিলির পর সংগ্রহ করা ঠিকঠাক হচ্ছিল। কমিশনের অ্যাপে সার্ভারের সমস্যায় আপলোড করতে পারতেন না। অতিরিক্ত চাপে টেনশন থেকেই তাঁর হার্ট অ্যাটাক হয়েছে।’ বনগাঁ সাংগঠনিক জেলার তৃণমূলের সভাপতি বিশ্বজিৎ দাস এ প্রসঙ্গে বলেন, ‘নির্বাচন কমিশনের মাধ্যমে বিজেপি এ সব করে মানুষকে মৃত্যুমুখে ঠেলে দিচ্ছে।’ বনগাঁ উত্তরের বিজেপি বিধায়ক অশোক কীর্তনিয়া পাল্টা বলেন, ‘উনি আগে থেকেই অসুস্থ ছিলেন। তৃণমূল যে ভাবে প্রচার করছে তাতেই বিএলওরা অসুস্থ হয়ে পড়ছেন।’
এসআইআরের কাজের চাপে মঙ্গলবার আরও এক বিএলও অসুস্থ হয়ে পড়েন। তিনি বাঁকুড়ার পাত্রসায়র ব্লকের নারায়ণপুর ২২৪ নম্বর বুথের বিএলও। নাম সবিতা সর্দার। তিনি অঙ্গনওয়ারিতে সুপারভাইজার হিসেবে কাজ করেন।