কৃষকদের পাশে দাঁড়িয়ে আলু সংরক্ষণের সময় বাড়াল রাজ্য সরকার
প্রতিদিন | ২৭ নভেম্বর ২০২৫
স্টাফ রিপোর্টার: আলু সংরক্ষণের সময়সীমা বাড়ছে এরাজ্যে। জানা গিয়েছে, ক্ষুদ্র ও প্রান্তিক কৃষকদের কম দামে আলু বিক্রি রোধ করতে এবং রাজ্যের মানুষকে সুলভ মূল্যে আলু জোগাতে রাজ্য সরকার এবছর হিমঘরগুলিতে আলু সংরক্ষণের (Potato Storage) সময়সীমা ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে। কৃষি বিপণন দপ্তর সূত্রে খবর, ৩০ নভেম্বর নির্ধারিত সময় শেষ হওয়ার কথা রয়েছে। এর সুযোগ নিয়ে কিছু অসাধু ব্যবসায়ী চাষিদের বিভ্রান্ত করে নিজেদের মুনাফা বাড়ানোর চেষ্টা করছে।
বিষয়টি নজরে আসার পরই কৃষকদের পাশে দাঁড়াতে রাজ্য সরকার দ্রুত সিদ্ধান্ত নিয়ে সময়সীমা বাড়িয়েছে। সূত্রের খবর, ‘ওয়েস্ট বেঙ্গল প্রগ্রেসিভ পটেটো গ্রোয়ার্স অ্যান্ড ট্রেডার্স অ্যাসোসিয়েশন’ রাজ্যের হিমঘরগুলোতে আলু সংরক্ষণের সময়সীমা ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত বাড়ানোর জন্য মন্ত্রী বেচারাম মান্না এবং দপ্তরের সচিবকে স্মারকলিপি দেন। সংগঠনের যুক্তি, সময়সীমা বাড়ালে ক্ষুদ্র ও প্রান্তিক কৃষকদের স্বার্থরক্ষা হবে। তাঁদের উৎপাদিত আলুর কম দামে বিক্রি রোধ করা সম্ভব হবে। দপ্তরের কর্তাদের মতে, এই সিদ্ধান্ত চাষিদের ন্যায্য মূল্য পাওয়া নিশ্চিত করবে। একই সঙ্গে রাজ্যের বাজারে আলুর যোগানকে স্থিতিশীল ও সুষম রাখবে এই সিদ্ধান্ত। উৎপাদনকে সুরক্ষিত রাখতে চলতি বছরে রাজ্যের ৫১৯টি কোল্ড স্টোরেজে ৭০.৮৫ লাখ মেট্রিক টন আলু সংরক্ষণ করা হয়েছে। এই খাতে এক নতুন মাইলফলক এই সংখ্যা।
দপ্তর সূত্রে খবর, অক্টোবরের শেষে হঠাৎ বৃষ্টি এবং প্রতিবেশী রাজ্যগুলির বন্যাজনিত কারণে আলু রোপণে দেরি হওয়ায় বর্তমানে নতুন আলুর যোগান সীমিত। ফলে রাজ্যবাসী এখনও সংরক্ষিত আলুর উপরেই নির্ভর করছেন। এমন পরিস্থিতিতে কোল্ড স্টোরেজগুলিতে এখনও প্রায় ১২ লাখ মেট্রিক টন আলু মজুত রয়েছে। প্রচলিত নিয়ম অনুযায়ী, এই আলু যদি ৩০ নভেম্বরের মধ্যে বাজারজাত করতে হয়, তাহলে অতিরিক্ত যোগানের কারণে আলুর দামে অস্বাভাবিক পতন ঘটার আশঙ্কা থাকবে। ফলে চাষিদের ন্যায্য মূল্য পাওয়ার ক্ষেত্রে সমস্যা দেখা দিতে পারে। পাশাপাশি ডিসেম্বর মাসে বাজারে আলুর জোগানে সমস্যা হতে পারে। সেক্ষেত্রে বাইরের রাজ্যের আলুর উপর নির্ভরশীলতা বাড়াবে। অন্যদিকে, উৎপাদন বৃদ্ধির জেরে আলুর দাম কমে যেতে পারে বলে মনে করছে কৃষি বিপণন দপ্তর। তাই ক্ষুদ্র ও প্রান্তিক চাষিদের স্বার্থ সুরক্ষিত রাখতে ‘পটেটো প্রকিওরমেন্ট স্কিম ২০২৫’ চালু করেছে দপ্তর। পাশাপাশি দপ্তরের অধীনে থাকা সুফল বাংলার মাধ্যমে এই ধরনের ক্ষুদ্র ও প্রান্তিক চাষিদের থেকে সরাসরি ৭৫ হাজার কুইন্টাল আলু কিনে আলুর দামের পতন রুখেছে দপ্তর।
রাজ্য সরকার বরাবরই ক্ষুদ্র ও প্রান্তিক চাষিদের স্বার্থকে সুরক্ষিত করতে এবং কৃষিনির্ভর গ্রামীণ অর্থনীতিকে শক্তিশালী করতে ‘ওয়েস্ট বেঙ্গল কোল্ড স্টোরেজ (লাইসেন্সিং অ্যান্ড রেগুলেশন) অ্যাক্ট, ১৯৬৬ এবং রুল, ১৯৬৭’-এর বাস্তবায়ন করেছে। রাজ্যে কৃষি নীতির যথাযথ রূপায়ণের ফলে ২০২৫ সালে পশ্চিমবঙ্গে রেকর্ড ১৪৬.১৩ লাখ মেট্রিক টন আলু উৎপাদিত হয়েছে। উৎপাদনের এই উল্লেখযোগ্য বৃদ্ধির কথা মাথায় রেখে, ক্ষুদ্র ও প্রান্তিক চাষিদের আলু সংরক্ষণের ক্ষেত্রে যাতে কোনও বাধা সৃষ্টি না হয় তা নিশ্চিত করেছে কৃষি বিপণন দপ্তর। হিমঘরগুলিতে ৩০ শতাংশ জায়গা সংরক্ষনের জন্য প্রয়োজনীয় নির্দেশিকা আগেই জারি করা হয়েছে।