চেনেন এলাকার সব বাড়ি, ৭৬ বছরের বিএলএ-ই মুশকিল আসান বহু বিএলও-র!
প্রতিদিন | ২৮ নভেম্বর ২০২৫
রমণী বিশ্বাস, তেহট্ট: এলাকার বহু মানুষের মুশকিল আসান বাসুদেব রজক। বয়স প্রায় ৭৬ বছর পেরলেও কাজকর্মে তিনি এখনও যুবক। সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত একটি ভাঙা সাইকেলে কিছু কাগজপত্র নিয়ে এলাকায় ঘুরে ঘুরে মানুষের খোঁজ নেন এখনও। এসআইআর-এর চাপে একের পর এক অসুস্থ হচ্ছেন বহু মানুষ। কিন্তু এখনও নিজের কাজে অবিচল ৭৬ বছরের বিএলএ বাসুদেব।
পরপর তিন বার তিনি বেতাই-২ গ্রাম পঞ্চায়েতের নির্বাচিত সদস্য ছিলেন। এমনকি তেহট্ট-১ ব্লকের বেতাই-২নম্বর গ্রাম পঞ্চায়েতে বিরোধী দলনেতাও ছিলেন। যে কারণে পঞ্চায়েতের আইন কানুন, বিভিন্ন প্রকল্প সম্পর্কে সব তথ্য তিনি অন্যদের তুলনায় অনেক ভাল জানেন। বর্তমানে তিনি পঞ্চায়েত সদস্য বা পঞ্চায়েতের কোনও পদে নেই। তারপরেও এখনও বহু কাজে পঞ্চায়েতের কর্মীরা তাঁর পরামর্শ নেন। এই পঞ্চায়েত এলাকার প্রায় প্রতিটি মানুষকেই তিনি চেনেন। তাঁর বুথের প্রতিটা মানুষের নাম এবং কার বাড়িতে কতজন ভোটার সব তাঁর মুখস্ত। তাই এক কথায় এই এলাকায় মুসকিল আসান হলেন বাসুদেব রজক। এই বয়সেও, তাঁর মানুষের জন্য কাজ করার আগ্রহ অনেককেই অবাক করে।
জানা গিয়েছে বৃহস্পতিবারই বাসুদেব রজক জানতে পারেন প্রায় এক মাসেও জব কার্ডের কেওয়াইসি-র কাজ করেননি অনেকেই। সেই খবর পেয়েই বেতাই-২ গ্রাম পঞ্চায়েতে এসে লিস্ট ধরে সকলের বাড়িতে খবর পাঠান। অন্য একটি লিস্ট দিয়ে স্থানীয় এক যুবককে বলেন এই সকল মানুষকে বাড়িতে গিয়ে খবর দিতে। ওই যুবক জানান, “জেঠু আমাকে ফোন করে গ্রাম পঞ্চায়েত অফিসে ডেকে নিয়ে বলেন, এখনও বেশ কিছু মানুষের জব কার্ডের কেওয়াইসি করতে বাকি আছে। এই বৃদ্ধ বয়সে মানুষের জন্য কাজ করবার যে খিদে দেখলাম তা আমাকে অবাক করল।” নাম জানাতে অনিচ্ছুক একজন বিএলও জানান, ‘এই বৃদ্ধ বয়সে এখনও গ্রামে গ্রামে ঘুরে বেড়ান মানুষের সুবিধা অসুবিধা জানতে। উনি বুথের বিএলএ, উনি বুথের প্রতিটা বাড়ি চেনেন এবং আমার মত অনেক বিএলও-কে সম্পূর্ণ সহযোগিতা করছেন।
বেতাই-২ গ্রাম পঞ্চায়েত প্রধান জানান, ‘বাসুদেব রজক শুরু থেকেই বাম কর্মী। তিনি তিনবারের পঞ্চায়েত সদস্য। এমনকি পঞ্চায়েতের বিরোধী দলনেতাও ছিলেন। অনেক সময় পঞ্চায়েতে কাজের বিষয়ে তার পরামর্শ নিয়ে থাকি।’ তেহট্ট দক্ষিণ এরিয়া কমিটির সদস্য সুলগ্ন ভট্টাচার্য জানান, ‘লোকটার সততা ও জনসংযোগের দক্ষতা অনেক। এই বয়সে তিনি পার্টির জন্য যে কাজ করেন, দলের অনেকের পক্ষে কষ্টকর। প্রতিদিন, প্রতি মুহূর্ত পার্টির কাজ করে যাচ্ছেন।’