• শীতের মরশুমে দূরপাল্লার ট্রেন বাতিলের হিড়িক, টাকা ফেরত পেতে নাকাল আম আদমি
    বর্তমান | ২৮ নভেম্বর ২০২৫
  • দিব্যেন্দু বিশ্বাস, নয়াদিল্লি: দূরপাল্লার মেল, এক্সপ্রেসে ‘কনফার্মড’ টিকিট পেতে হিমশিম খেতে হচ্ছে যাত্রীদের। এর সঙ্গেই এবার যোগ হয়েছে নতুন এক উপসর্গ— শীতের মরশুমে দূরপাল্লার ট্রেন বাতিলের হিড়িক! সাধারণত এই সময় স্কুলের পরীক্ষা শেষ হয়। বড়দিনের ছুটিও রয়েছে সামনে। সেই ছুটিতে ভ্রমণের পরিকল্পনা করেন অনেকেই। কিন্তু একের পর এক ট্রেন বাতিলের জেরে অধিকাংশেরই সেই পরিকল্পনা ভেস্তে যাচ্ছে। যাত্রীদের একটা বড় অংশের অভিযোগ, দু’মাস আগে টিকিট কাটলেও অনেক সময় বুকিংয়ের ২৪ ঘণ্টার মধ্যে সংশ্লিষ্ট ট্রেন বাতিলের এসএমএস চলে আসছে। এমনকি ট্রেন বাতিলের পর নিয়মমতো রিফান্ডের পুরো টাকা ফেরত পেতেও কালঘাম ছুটছে আম আদমির। সব মিলিয়ে চরম হয়রানি। রেলের এহেন অব্যবস্থায় যাত্রীদের মধ্যে ক্ষোভ চরমে উঠেছে।

    রেলের ওয়েবসাইটে দেওয়া নিয়ম বলছে, কোনও দূরপাল্লার ট্রেন বাতিল ঘোষণা করা হলে রিজার্ভেশন কাউন্টার থেকে কাটা টিকিট যাত্রীকে সশরীরে গিয়ে বাতিল করতে হয়। কিন্তু ই-টিকিট বাতিলের প্রয়োজন পড়ে না। স্বয়ংক্রিয়ভাবেই সংশ্লিষ্ট যাত্রীর অ্যাকাউন্টে চলে যায় ‘ফুল রিফান্ড’। তবে এই নিয়মেও রয়েছে শর্ত। ই-টিকিটের ‘ফুল রিফান্ড’ দেওয়ার প্রক্রিয়া শুরু হবে নির্ধারিত যাত্রার তারিখের পরদিন। তার আগে রিফান্ড পেতে হলে যাত্রীকেই অনলাইনে টিকিটটি বাতিল করা বাধ্যতামূলক। বলাই বাহুল্য, এ নিয়ম যাত্রীদের কাছে অজানা। ফলে বাতিল ট্রেনগুলির ই-টিকিটে ‘ফুল রিফান্ড’ পেতে নাকাল হতে হচ্ছে তাদের। আগামী ২৯ ডিসেম্বর লখনউ থেকে কলকাতা ফেরার কথা ছিল বাঁকুড়ার একটি পরিবারের। গত ৩০ অক্টোবর সকাল ৮টায় প্রায় ১৬ হাজার টাকা দিয়ে তাঁরা টিকিট কেটেছিলেন দুর্গিয়ানা এক্সপ্রেসের। কিন্তু সেদিন রাত ৮টাতেই ট্রেন বাতিলের এসএমএস আসে। পরিবারের সদস্যরা রেলের শর্তের কথা জানতেন না। ফলে ‘ফুল রিফান্ড’-এর অপেক্ষায় কেটে গিয়েছে প্রায় গোটা নভেম্বর। শেষপর্যন্ত রেল কর্তৃপক্ষের কাছে ই-মেল করে তাঁরা নিয়ম জানতে পারেন এবং টিকিট বাতিল করে টাকা ফেরত পান। সেটাও ২৮ দিন পর। না হলে আরও একমাস তাঁদের ভোগান্তি ছিল অনিবার্য। এর মধ্যে ট্রেন ‘রি-শিডিউলড’ বা পরিবর্তিত সময় বা যাত্রাপথ ঘোষণা হলে ‘ফুল রিফান্ড’ও মিলত না।

    এব্যাপারে সরকারিভাবে কোনও মন্তব্য করেনি রেল বোর্ড। তবে মন্ত্রকের শীর্ষ সূত্রে ব্যাখ্যা, ঘন কুয়াশার কারণে প্রতি বছর বিশেষত উত্তর ভারতগামী কিছু ট্রেন বাতিল করতে হয়। এবারও সেটা হয়েছে। আগামী ১ ডিসেম্বর থেকে ২৮ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত মূলত উত্তর ভারতগামী কমবেশি ২৪টি দূরপাল্লার মেল, এক্সপ্রেস ট্রেন বাতিল রাখা হতে পারে। এর মধ্যে থাকতে পারে প্রয়াগরাজ জংশন-মুজফ্ফরপুর এক্সপ্রেস, নিউ দিল্লি-মালদহ টাউন এক্সপ্রেস, দেরাদুন-হাওড়া উপাসনা এক্সপ্রেস, আনন্দবিহার-কামাখ্যা এক্সপ্রেসের মতো একাধিক ট্রেন। বিভিন্ন পর্যায়ে এই সংক্রান্ত সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হচ্ছে। যদিও এই ব্যাখ্যায় সন্তুষ্ট নন যাত্রীরা। তাঁদের অভিযোগ, সংশ্লিষ্ট ট্রেনগুলি বাতিলের সিদ্ধান্ত যদি আগেই নেওয়া হয়, তাহলে সেগুলির টিকিট বুকিংয়ের অপশন খুলে রাখা হচ্ছে কেন? আর কুয়াশার কারণে যদি ট্রেন বাতিলই করতে হয়, তাহলে কোটি কোটি টাকা ব্যয়ে ‘ফগ ডিভাইস’ কেনার অর্থ কী? এব্যাপারে একাধিক গালভরা ঘোষণাই বা কেন?
  • Link to this news (বর্তমান)