নিজস্ব প্রতিনিধি, নয়াদিল্লি: এসআইআরের পর চূড়ান্ত ভোটার তালিকা প্রকাশিত হবে ২০২৬ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে। দু’মাস পর এপ্রিলে শুরু হবে সেন্সাসের প্রথম পর্ব। আর তারপর সেন্সাস রিপোর্টের সঙ্গে সংগতি রেখে ডিলিমিটেশন প্রক্রিয়া। অর্থাৎ, লোকসভা ও বিধানসভার আসন পুনর্বিন্যাস। সে জন্য গঠন হবে ডিলিমিটেশন কমিশন। তার প্রাথমিক প্রস্তুতি শুরু হয়ে গিয়েছে। স্থির হয়েছে, ২০২৬ সালে যেহেতু ডিলিমিটেশন পর্ব হওয়ার কথা, সেই কারণে আগামী বছরই ডিলিমিটেশন বিল সংসদে আনা হবে। সম্ভবত বাদল অধিবেশনেই। সেখানেই অন্তর্ভুক্ত হবে মহিলা সংরক্ষণ। অর্থাৎ লোকসভা ও বিধানসভার বহু আসন সংরক্ষিত হয়ে যাবে মহিলাদের জন্য। ডিলিমিটেশনের মাধ্যমে লোকসভা ও বিধানসভা এলাকার সীমানা পুনর্নির্ধারণ হবে এবং এই দুই ক্ষেত্রেই আসন সংখ্যা বাড়বে। তার বড়সড় প্রভাব পড়তে চলেছে বাংলাতেও। প্রাথমিক অনুমান, এ রাজ্যে লোকসভা আসন ৪২ থেকে বেড়ে ৫০ ছাড়িয়ে যেতে পারে। আর বিধানসভা কেন্দ্র ২৯৪ থেকে বেড়ে পৌঁছে যেতে পারে ৩২০’র আশপাশে। যদিও রাজ্যসভার আসন সংখ্যা একই রেখে দেওয়ার প্রস্তাব নিয়ে ইতিমধ্যে আলোচনা শুরু হয়েছে। রাজ্যসভায় এমপি নির্বাচনে বিধায়করাই অংশগ্রহণ করেন এবং ভোট দেন। বিধায়ক সংখ্যার উপরই নির্ধারিত হয় রাজ্যসভার ইলেক্টোরাল কলেজ। এমএলএ সংখ্যা বৃদ্ধি পেলে রাজ্যসভার আসনও বৃদ্ধি পাওয়ার কথা। এরপরও কিন্তু রাজ্যসভার আসন একই রেখে দেওয়ার পক্ষে সরকারের একাংশ। কারণ হিসেবে টানা হচ্ছে সুপ্রিম কোর্টের একটি রায়। যেখানে বলা হয়েছিল, রাজ্যসভার প্রাথমিক দায়িত্ব হল, লোকসভার ক্ষমতা ও সিদ্ধান্তকে পুনরায় বিবেচনা এবং প্রয়োজনে সংশোধন করা। রাজ্যের প্রতিনিধিত্ব করা প্রাথমিক অগ্রাধিকার নয়। এই কারণেই রাজ্যসভার সদস্য সংখ্যা একই রাখার পক্ষপাতী সরকার।
ডিলিমিটেশন প্রক্রিয়া শুরু হওয়ার জন্য দরকার রিপ্রেজেন্টেশন অব দ্য পিপলস অ্যাক্টের (১৯৫০) সংশোধন। সংবিধানের ৫৫, ৮১, ৮২, ১৭০, ৩৩০ এবং ৩৩২ নম্বর ধারা অনুযায়ী যে অধিকার দেওয়া রয়েছে, সেগুলির প্রতিটিই অনুসরণ করতে হবে। ২০২৩ সালে সংসদে পাশ হওয়া মহিলা সংরক্ষণ বিলের ৩৩ শতাংশ সংরক্ষণের ব্যবস্থাও অন্তর্ভুক্ত হবে। অর্থাৎ বহু আসন ডিলিমিটেশনের পর মহিলাদের জন্য সংরক্ষিত হয়ে যাবে। সেই নিয়েও টার্মস অব রেফারেন্স দেওয়া হবে। ১৯৫২ সালে প্রথম ডিলিমিটেশনে লোকসভার আসন সংখ্যা হয়েছিল ৪৯৪, ১৯৬২ সালে ৫২২, ১৯৭৩ সালে ৫৪৩। সেটাই এখনও রয়েছে। ২০২৬-২৭ সালের ডিলিমিটেশনে লোকসভার আসন সংখ্যা অন্তত সাড়ে ৭০০ হওয়ার জল্পনা রয়েছে। পাশাপাশি জল্পনা দক্ষিণ ভারতে কমে যাবে লোকসভার আসন। উত্তর ভারতে বাড়বে। সেই সমস্যা কীভাবে এড়ানো সম্ভব, সেটাও চ্যালেঞ্জ সরকারের। কারণ সেন্সাস অনুযায়ী যদি সীমানা পুনর্বিন্যাস হয়, তাহলে জনসংখ্যার বৃদ্ধিহারে দক্ষিণ ভারত লাগাম দিয়েছে অনেক বেশি। আর তাই দক্ষিণ ভারত একজোট হয়ে প্রতিবাদ করছে।