নিজস্ব প্রতিনিধি, শিলিগুড়ি: দেশের তিনটি থানার পুলিশের হাতে তিন-তিনবার গ্রেফতার হওয়ার পরেও ডিজিটাল প্রতারণার ‘ব্যবসা’ রমরমিয়ে চালাচ্ছিল পাঞ্জাবের এক যুবক। কয়েক মাসের হাজতবাসের পর বারবার ঠেক পাল্টে প্রতারণার ফাঁদ পেতে কোটি কোটি টাকা লুট করতে রীতিমতো সিদ্ধহস্ত সে। লুটের টাকায় রাতভর পার্টিতেই কাটে তার। বুক ফুলিয়ে সাইবার কাফের আড়ালেই চালায় কোটি কোটি টাকার ডিজিটাল প্রতারণার কাজ।
শিলিগুড়ির এক ব্যবসায়ী কাছ থেকে সাড়ে ৪৭ লক্ষ টাকা প্রতারণার মামলায় পাঞ্জাব থেকে চক্রের মাস্টারমাইন্ডকে গ্রেফতার করে নিয়ে আসার পর এমন চাঞ্চল্যকর তথ্য পেয়েছে রাজ্য পুলিশ। পাঞ্জাব থেকে গ্রেফতার করে ট্রানজিট রিমান্ডে সাত দিনের জন্য শিলিগুড়ি নিয়ে আস হয়। বৃহস্পতিবার ধৃতকে মহকুমা আদালতে পেশ করে ১৪ দিনের হেপাজতে কলকাতার ভবানীভবনে নিয়ে গিয়েছে সিআইডি। পুলিশ জানিয়েছে, ধৃতের নাম কার্তিক ধুরিয়া। বাড়ি পাঞ্জাবের মুক্তসারে। এই ঘটনায় এখনও পর্যন্ত ন’জনকে গ্রেফতার করল সিআইডি।
এ প্রসঙ্গে শিলিগুড়ি আদালতের আইনজীবী সুকান্ত নাগ বলেন, শিলিগুড়ির এক ব্যবসায়ী থেকে সাড়ে ৪৭ লক্ষ টাকা শেয়ার বাজারে লগ্নি করে দেওয়ার নাম করে প্রতারণা করা হয়েছিল। সেই ঘটনাতে মূল অভিযুক্তদের মধ্যে অন্যতম কার্তিককে গ্রেফতার করেছে সিআইডি। আমরা আশাবাদী, প্রতারিত হওয়া অর্থও দ্রুত উদ্ধার করা সম্ভব হবে।
পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, শিলিগুড়ির ওই ব্যবসায়ীকে ২০২৩ সালে একটি নামী শেয়ার বাজারে লগ্নি করার ওয়েবসাইটের আদলে তৈরি হওয়া একটি ভুয়ো লিংক পাঠানো হয়। সেই লিংকে ক্লিক করতেই ওই ব্যবসায়ী একাধিক নামী শেয়ার বাজারের পরামর্শদাতার ভিডিও দেখতে পান। সেখানে জানানো হয় একটি হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপে যোগ দিতে হবে। সেখানেই অনেক কম টাকা দিয়ে ভালো ভালো শেয়ারে লগ্নি করার সুযোগ মিলবে। সেই মোতাবেক গ্রুপে যোগ দেন ওই ব্যবসায়ী। এরপরেই তিনি দেখেন একাধিক ব্যক্তি কম লগ্নি করেই একের পর এক শেয়ার থেকে লক্ষ লক্ষ টাকা আয় করছেন। লোভে পড়ে গ্রুপে কয়েকজনের সঙ্গে লগ্নি নিয়ে আলোচনাও করেন তিনি। তাঁরা উৎসাহ দিতেই একে একে সাড়ে ৪৭ লক্ষ টাকা লগ্নি করেন ওই ব্যবসায়ী।
২০২৪ সালে ওই টাকা তুলতে চাওয়া হলেই ওই গ্রুপ আচমকা অকেজো হয়ে যায়। এরপরেই ওই ব্যবসায়ী শিলিগুড়ির সাইবার ক্রাইমের দ্বারস্থ হন। কিন্তু তদন্তের গতিপ্রকৃতি নিয়ে খুশি হননি তিনি। এরপর আদালতের দ্বারস্থ হলে বিচারপতি এই ঘটনার তদন্তভার সিআইডিকে দেন। তদন্তে নেমে প্রথমে দিল্লি থেকে একজনকে গ্রেফতার করেন তদন্তকারীরা। প্রায় তিন মাস আগে আরও তিনজনকে গুজরাত থেকে গ্রেফতার করা হয়। তাদের প্রত্যেকের ব্যাংক অ্যাকাউন্টেই টাকা লেনদেন করা হয়েছিল। তাদের হেপাজতে নিয়ে জেরা করেই তদন্তকারীরা জানতে পারেন, ওই হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপ থেকে প্রতারণার টাকা লেনদেনের সমস্ত প্রক্রিয়ার কাজ করে থাকে এই কার্তিক। এরপরেই পাঞ্জাব গিয়ে সেখানকার পুলিশের সাহায্য নিয়ে কার্তিকের সাইবার কাফেতে হানা দিয়ে তাকে ধরেন। • নিজস্ব চিত্র।