• দুর্গাপুর গণধর্ষণ কাণ্ডে বিচারকের ভর্ৎসনার মুখে ভূমি রাজস্ব কর্তা
    বর্তমান | ২৮ নভেম্বর ২০২৫
  • নিজস্ব প্রতিনিধি, আসানসোল: দুর্গাপুর গণধর্ষণকাণ্ডে এবার বিচারকের ভর্ৎসনার মুখে পড়লেন ভূমি রাজস্ব আধিকারিক। গণধর্ষণের মতো গুরুত্বপূর্ণ ঘটনার রিপোর্ট পেশে চূড়ান্ত গাফিলতি সামনে আসে আদালতে। যার তীব্র সমালোচনা করেন দুর্গাপুর আদালতের বিচারক লোকেশ পাঠক। গণধর্ষণের ঘটনার অবস্থান চিহ্নিত করতে ভূমিদপ্তরের সাহায্য নিয়েছিল পুলিশ। বৃহস্পতিবার তারই সাক্ষ্য দিতে আদালতে হাজির হয়েছিলেন দুর্গাপুর ফরিদপুর ব্লকের ভূমিদপ্তরের রেভিনিউ ইন্সপেক্টর বিশ্বজিৎ বন্দ্যোপাধ্যায়। তাঁরা পুলিশের কাছে কাগজে হাতে লেখা যে রিপোর্ট জমা করেছিলেন তার উল্টোপিঠে লেখা নজর এড়ায়নি অভিযুক্ত পক্ষের আইনজীবীদের। তাঁরা প্রশ্ন করেন, যে পাতায় গণধর্ষণের মতো অভিযোগের চূড়ান্ত রিপোর্ট লেখা হচ্ছে তার উল্টোপিঠে বিএলএলআরওকে একটি অসম্পূর্ণ আবেদনপত্র লেখা রয়েছে। রিপোর্টের হাতের লেখা এবং ওই উল্টোপাতার হাতের লেখা একই। 

    এরপরই বিচারক ভূমিদপ্তরের এই কাজের সমালোচনা করেন। সাক্ষ্য দিতে আসা আধিকারিককে লক্ষ্য করে বলেন, বিএলআরও অফিসে কি কাগজ কম পড়েছে? এত গুরুত্বপূর্ণ মামলার চূড়ান্ত রিপোর্ট লিখছেন। তার উল্টোপিঠে হ্যান্ডরাইটিং প্র্যাকটিস করছিলেন? তখনই অভিযুক্তের আইনজীবীরা দাবি করেন, বিএলআরও অফিসের আধিকারিকরা ঘটনাস্থলে না গিয়ে অফিসে বসে রিপোর্ট তৈরি করেছেন। পুলিশের কথায় এই কাজ করতে গিয়েই এমন ভুল হয়েছে।

    গত ১০অক্টোবর ওই ডাক্তারি পড়ুয়াকে গণধর্ষণের অভিযোগ ওঠে। দুর্গাপুরের নিউ টাউনশিপ থানার সেই মেডিকেল কলেজ লাগোয়া জঙ্গলে এই ঘটনা ঘাটে বলে অভিযোগ। জমিটির মালিকানা চিহ্নিতকরণ, অবস্থান ও শ্রেণি নির্ণয়ের জন্য থানার পক্ষ থেকে দুর্গাপুর ফরিদপুর ব্লকের বিএলএলআরওকে লিখিত আবেদন করা হয়। বিএলএলআরওর নির্দেশমতো দু’জন রেভিনিউ ইন্সপেক্টর ও একজন সার্ভেয়ার ঘটনাস্থলে গিয়ে রিপোর্ট তৈরি করেন। তাঁরা গুগল ম্যাপ ও বাংলার ভূমি পোর্টালের সাহায্যে অবস্থান  চিহ্নিত করে রিপোর্ট তৈরি করেন। বিষয়টি নিয়েই সাক্ষ্যগ্রহণ শুরু হয়। অভিযুক্তদের আইনজীবী শেখর কুণ্ডু ও সৌমেন মিত্র  দফায় দফায় জেরা করেন। তাঁরা বলেন, গুগল ম্যাপ, বাংলার ভূমি পোর্টালে সহযোগিতায় আপনারা যে জমিটি চিহ্নিত করেছেন তা ৪৪বিঘার। এই বিশাল এলাকার মধ্যে কোন অংশে ধর্ষণ হয়েছিল তা চিহ্নিত করতে পেরেছেন? তাঁরা প্রশ্ন করেন, গুগল ম্যাপ ও বাংলার ভূমি ছাড়া আপনারা হাতে স্কেচ করে কোন জমি চিহ্নিতকরণের কাজ করেছিলেন? উভয় ক্ষেত্রেই সাক্ষী বিশ্বজিৎ বন্দ্যোপাধ্যায় ‘না’ উত্তর দেন। এরপরই মূল রিপোর্টের উল্টোপাতায় একটি অসম্পূর্ণ আবেদন দেখিয়ে দাবি করেন, রিপোর্টটি মনগড়া। যদিও তা মানতে চাননি ওই অফিসার। কিন্তু কেন রিপোর্টের উল্টোপাতায় এই ধরনের একটি অসমাপ্ত লেখা ছিল তার উত্তর দিতে পারেননি।
  • Link to this news (বর্তমান)