সংবাদদাতা, হলদিয়া: বুধবার রাতে হলদিয়া স্টেশন সংলগ্ন এলাকা থেকে তিন রেলকর্মীকে অপহরণের ঘটনায় চাঞ্চল্য ছড়াল। রাত সাড়ে ১১টা নাগাদ ওই তিন রেলকর্মী খাবারের খোঁজে বেরিয়েছিলেন। সেইসময় ফিল্মি কায়দায় তাঁদের অপহরণ করা হয় বলে অভিযোগ। একটি সাদা চারচাকা গাড়ি এসে তাঁদের সামনে হঠাৎ দাঁড়িয়ে পড়ে ভয় দেখিয়ে তুলে নিয়ে চম্পট দেয়। এরপর দুর্গাচকের গোপন ডেরায় নিয়ে গিয়ে মারধর করে বলে অভিযোগ। ওই রেল কর্মীদের একজন কোনওমতে পালিয়ে হলদিয়া থানার নম্বর জোগাড় করে পুলিশে খবর দেন। শেষমেষ হলদিয়া ও দুর্গাচক দুই থানার তৎপরতায় অপহৃত রেলকর্মীদের উদ্ধার করা হয়। পুলিশ অপহরণে জড়িত দু’জনকে রাতেই গ্রেফতার করেছে।
পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, ধৃত দুই দুষ্কৃতীর নাম শেখ মহম্মদ ও সইফুল খান। মহম্মদের বাড়ি দুর্গাচকের রঘুনাথচকে এবং দ্বিতীয়জনের বাড়ি পাথরবেড়িয়ায়। বৃহস্পতিবার ধৃতদের হলদিয়া আদালতে তোলা হলে বিচারক চারদিনের পুলিশি হেফাজতের নির্দেশ দিয়েছেন। হলদিয়ার এসডিপিও অরিন্দম অধিকারী বলেন, একটি অপহরণের অভিযোগ হয়েছে। তার ভিত্তিতে মামলা শুরু হয়েছে। দুই দুষ্কৃতীকে হেপাজতে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ চলছে।
জানা গিয়েছে, বুধবার রাত ১১টা নাগাদ আনন্দবিহার-হলদিয়া এক্সপ্রেস হলদিয়া স্টেশনে পৌঁছয়। এরপর ট্রেনের কয়েকজন কোচ অ্যাটেনডেন্ট খাবারের খোঁজে কিছুদূরে দোকানে যান। ওই কোচ অ্যাটেনডেন্টরা রেলের অস্থায়ী কর্মী। খাবারের খোঁজ করার সময়ই তিনজনকে অপহরণ করা হয় বলে অভিযোগ। অপহৃতদের সহকর্মী রাজা মাথুর ওইসময় কোনওক্রমে পালিয়ে দোকানের আড়ালে লুকিয়ে পড়েন। পরে তিনি হলদিয়া থানায় ফোন করে পুলিশকে জানান। হলদিয়া থানা দুর্গাচক থানার সঙ্গে যোগাযোগ করে। রাত ১২টা ৪৫মিনিট নাগাদ দুর্গাচক থানার বালারমোড় এলাকা থেকে তিনজনকে উদ্ধার করে হলদিয়া থানার পুলিশ। দুই দুষ্কৃতী ধরা পড়ে। একটি সাদা চারচাকা গাড়ি বাজেয়াপ্ত হয়েছে।
জানা গিয়েছে, বালারমোড় এলাকায় অপহৃত তিনজনকে গাড়ি থেকে নামানোর সময় পুলিশ দুষ্কৃতীদের পাকড়াও করে। স্থানীয়দের ধারণা, ওই ট্রেনে ধৃতদের কোনও পরিচিত বা ধৃতদের কেউ আসছিল। সেইসময় কোনও বিষয় নিয়ে বচসার জেরে আক্রোশবশত এমন ঘটনা ঘটতে পারে। কোচ অ্যাটেনডেন্টদের সঙ্গে ধৃতদের কোনও একজনের সঙ্গে বচসা হয়েছে বলে মনে করা হচ্ছে। এরপরই রেলকর্মীদের ‘শিক্ষা’ দিতে ট্রেন থেকে খবর দেওয়া হয় পরিচিতদের। তারপরই অপহরণ করার পরিকল্পনা নিয়ে কেউ গাড়ি নিয়ে চলে আসে স্টেশন সংলগ্ন এলাকায়। স্থানীয়রা বলেন, কয়েকদিন আগে ঠিক একই ঘটনা ঘটেছিল হলদিয়াগামী দক্ষিণবঙ্গ পরিবহণ সংস্থার সরকারি বাসে। বচসার জেরে সরকারি বাসের কনডাক্টরকে বাস থেকে নামিয়ে মেরে তাঁর আঙুল ভেঙে দেওয়ার অভিযোগ ওঠে এক যাত্রী ও তার পরিবারের বিরুদ্ধে। হলদিয়ার দেভোগ এলাকার ওই ঘটনায় পুলিশ দু’জনকে গ্রেফতার করেছিল। হলদিয়ায় একের পর এক এধরনের ঘটনায় শিল্পশহরের নিরাপত্তা ও পুলিশের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন বাসিন্দারা।