সংবাদদাতা, মানকর: শীতের আমেজ মানেই তো মন উড়ুউড়ু। আর বাঙালির তো পায়ের তলায় চাকা। সুযোগ পেলেই লটবহর নিয়ে বেড়িয়ে পড়া। তাই তো বাতাসে পারদ নামতেই পূর্ব বর্ধমানের চাকতেঁতুল পঞ্চায়েতের রণডিহায় দামোদর নদের পাড়ে লকগেট দেখতে দিনভর ভিড় করছেন মানুষজন। পাশাপাশি এই সময় মাছ ধরতেও অনেককেই দেখা যায় এই লকগেটে। কিন্তু উপযুক্ত পরিকাঠামো না থাকায় রণডিহা থেকে সামান্য দূরে কসবার বেহুলা, লখিন্দরের লোহার বাসরঘর, চাঁদ সওদাগরের শিবমন্দির দেখতে পর্যটকরা যেতে পারছেন না। অনেকে আবার জানেনও না এই জায়গাগুলি সম্বন্ধে। স্থানীয়দের দাবি, কসবায় শিব মন্দির ও লোহার বাসরঘর থেকে শুরু করে ভরতপুরের বহু প্রাচীণ বৌদ্ধস্তূপ এবং রণডিহা ব্যারেজ নিয়ে ইকো ট্যুরিজম সেক্টর গড়ে উঠলে বাইরে থেকে বহু মানুষ এখানে আসবেন। এলাকায় অর্থনীতিরও উন্নতি ঘটবে। গলসি-১ এর বিডিও ইন্দ্রজিৎ মারিক বলেন, স্থানীয়রা আবেদন করলে ইকো ট্যুরিজমের বিষয়টি দেখা হবে।
স্থানীয়রা জানান, মনসামঙ্গল কাব্যে উল্লেখ আছে চাঁদ সওদাগরের চম্পক নগরের। বর্তমানে সেই নগরের অবস্থান কিন্তু বুদবুদের এই কসবায়। এখানেই রয়েছে চাঁদ সওদাগরের পূজিত রামেশ্বর শিবমন্দির। পাশেই বেহুলা-লখিন্দরের সেই লোহার বাসরঘর। কথিত আছে, দেবী মনসা শিবের উপাসক চাঁদ সওদাগরের বাণিজ্যতরী ডুবিয়ে দিয়েছিলেন। চাঁদ তখন এই অঞ্চলে এসে বসতি স্থাপন করেন। তিনি শিবভক্ত হওয়ায় এখানে শিবলিঙ্গ প্রতিষ্ঠা করেন। স্থানীয়দের কাছে যা রামেশ্বর শিব নামেই খ্যাত। মন্দিরের কাছেই রয়েছে বট গাছ। স্থানীয়দের বিশ্বাস, মন্দির সংলগ্ন বিস্তৃত এলাকা ছিল চাঁদের বসতবাড়ি। এখানেই নাকি লখিন্দর জন্মেছিলেন। শিব মন্দির থেকে কিছু দূরে একটি উঁচু ঢিপি আছে। স্থানীয়দের কাছে যা সাঁতালি পর্বত নামে পরিচিত। মনে করা হয় এখানেই নির্মিত হয়েছিল বেহুলার লোহার বাসর ঘর। কিন্তু শেষরক্ষা হয়নি। বাসরঘরের ক্ষুদ্র ওই ছিদ্রপথে প্রবেশ করে দেবী মনসার আদেশে কালনাগিনী লখিন্দরকে দংশন করেছিল। রামেশ্বর শিব ছাড়াও অপেক্ষাকৃত ছোট, মাথা ভাঙা আর একটি শিবলিঙ্গও দেখা যায় এখানে। এই শিবলিঙ্গের নাম বাণেশ্বর। স্থানীয় প্রাথমিক স্কুলের প্রধান শিক্ষক সুদীপ হাজরার কথায়, কসবায় ঐতিহাসিক স্থান দেখতে বহু মানুষ আসেন। এখানে ইকো ট্যুরিজম গড়ে উঠলে এলাকার অর্থনীতির ভিত মজবুত হবে। স্থানীয় মানুষের কর্মসংস্থান হবে। স্থানীয়রা জানান, দু’টি রাস্তা দিয়ে কসবা যাওয়া যায়। একটি পানাগড় সিলামপুর হয়ে ও অন্যটি বুদবুদের নস্করবাঁধ হয়ে। আগে দু’টি রাস্তা বেহাল অবস্থায় ছিল। প্রশাসন দু’টি রাস্তাই নতুন করে দিয়েছে। ফলে ভিন জেলা থেকেও রণডিহায় এখন বহু মানুষ আসছেন। কিন্তু উপযুক্ত পরিকাঠামো নেই বলে তাঁরা বাকি দর্শনীয় জায়গাগুলি যেতে পারেন না।