• ভ্লগারদের দাপাদাপিতে বন্ধ শালবনীর রানি শিরোমণির গড় সংস্কারের কাজ
    বর্তমান | ২৮ নভেম্বর ২০২৫
  • নিজস্ব প্রতিনিধি, শালবনী: ভ্লগারদের দাপাদাপি! আর তাতেই শালবনী থানার রানি শিরোমণির গড় সংস্কার করার কাজ বন্ধ। এমনকি সংস্কার হওয়া অংশের চারিপাশ ঘিরে দেওয়া হয়েছে। জানা গিয়েছে, বৃহস্পতিবার শিরোমণির গড় পরিদর্শনে যান হেরিটেজ কমিশনের পাঁচ সদস্যের প্রতিনিধি দল। সেই প্রতিনিধি দলের সদস্যরা সংস্কার হওয়া বিভিন্ন অংশ খতিয়ে দেখেন। এদিন প্রতিনিধি দলের সদস্যরা সমস্ত কাজ নথিভুক্ত করার নির্দেশ দেন। এছাড়া ইঞ্জিনিয়াদের সুক্ষভাবে কাজ করার কথা বলেন। এই পরিদর্শন কর্মসূচিতে উপস্থিত ছিলেন জেলার তথ্য ও সংস্কৃতি দপ্তরের আধিকারিক বরুণ মণ্ডল, শালবনী পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি নেপাল সিংহ প্রমুখ।  

    প্রশাসনের আধিকারিকরা জানান, এই মন্দির সংস্কারের সময় মাটির স্তূপ সরাতেই বেরিয়ে এসেছিল প্রাচীন মন্দির, আটচালা। এতেই উপচে পড়ছে মানুষের ভিড়। আর তাতেই ঘটে বিপত্তি। খবরের কাগজে প্রকাশিত হওয়ার পরেই এই চত্বরে ভ্লগারদের ঢল নামতে শুরু করে। অনেক ভ্লগার বেশি সংখ্যক ভিউ পাওয়ার চক্করে ঝুঁকি নিয়ে ভগ্ন প্রায় মন্দিরের উপরে উঠে যায়। একইসঙ্গে সংস্কারের কাজ নিয়ে ভুল প্রচার শুরু করে। এরপর জেলা প্রশাসন সংস্কারের কাজ বন্ধ করতে বাধ্য হয়।

    জেলার তথ্য ও সংস্কৃতি দপ্তরের আধিকারিক বরুণবাবু বলেন, হেরিটে. কমিশনের বিশেষ দল পরিদর্শন করেছে। সরকারি নিয়ম মেনেই গোটা প্রক্রিয়া সম্পন্ন হচ্ছে। শালবনী পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি নেপালবাবু বলেন, মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নির্দেশ অনুসারে ইতিমধ্যেই এই কাজের জন্য প্রায় আড়াই কোটি টাকা বরাদ্দ করা হয়েছে। গোটা কাজের প্রক্রিয়া মনিটরিং করা হচ্ছে। তবে ভুল প্রচারের জন্য কাজ বন্ধ হয়ে গিয়েছিল। দ্রুত এই সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে।

    স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, চুয়াড় বিদ্রোহের সময় ব্রিটিশ বিরোধিতায় লড়াই শুরু হয়েছিল। সেই লড়াইয়ে নেতৃত্ব দিয়েছিলেন রানি শিরোমণি। সেই ইতিহাস আজও মানুষের মনে গাঁথা রয়েছে। জানা যায়, কর্ণগড়ের রাজা অজিত সিংহের স্ত্রী ছিলেন শিরোমণিদেবী। ইংরেজরা কর্ণগড় দখলের সিদ্ধান্ত নিলে রুখে দাঁড়ান রানি। এই লড়াইয়ে তিনি পাশে পেয়েছিলেন আদিবাসী সমাজের মানুষদের। ইংরেজ বাহিনী আধুনিক অস্ত্র নিয়ে লড়াইয়ে নামলেও, দেশীয় লাঠি-বল্লম, তির-ধনুক নিয়ে লড়াই চালান রানি শিরোমণি। তবে চারিপাশ জঙ্গলে ঘেরা এলাকায় লড়াই বেশি সময় ধরে করতে পারেনি ইংরেজ বাহিনী। তাঁরা কার্যত পিছু হটতে বাধ্য হয়েছিল। পরবর্তীতে এই এলাকা রানি শিরোমণির গড় হিসেবেই পরিচিত হয়। 

    কালের নিয়মে ওই গড় ভগ্নদশায় পরিণত হয়েছিল। এর ফলে পর্যটকরা নিরাশ হয়ে ফিরে যেতেন। সেকথা মাথায় রেখেই তা সংস্কারের উদ্যোগ নেওয়া হয়। রানি শিরোমণি ঐক্য মঞ্চ আহ্বায়ক নিসর্গ নির্যাস মাহাত বলেন, সকলের আবেদন রানির অন্দরমহল বলে পরিচিত এলাকায় যেন সংস্কার হয়। বর্তমান সংরক্ষিত গড়ের বাইরে থাকা আরও দু’টি প্রাচীন মন্দিরের সংস্কারও প্রয়োজন।

    স্থানীয় এক বাসিন্দার কথায়, দক্ষ নির্মাণকর্মীরা এই সংস্কারের কাজ করছেন। প্রায় ৩০০ বছরের ইতিহাস এই মন্দিরের সঙ্গে জড়িয়ে রয়েছে। তবে এই এলাকায় পর্যটকদের জন্য খাবারের দোকান, রাত্রিবাসের জন্য বেশি সংখ্যক কটেজ তৈরি হলে কর্মসংস্থানও বাড়বে। এদিন কর্ণগড় বেড়াতে এসেছিলেন ঝাড়গ্রামের বাসিন্দা শুভজিৎ রানা। তিনি বলেন, দেখলাম, গোটা এলাকা সাজিয়ে তোলা হচ্ছে। অনেকেই রিলস বানাতে আসছেন।
  • Link to this news (বর্তমান)