• নথি নিয়ে হয়রানির মুখে বাংলার লক্ষাধিক ভোটার, কমিশনের ভুল ম্যাপিংয়ে আপলোড হয়নি ফর্ম
    বর্তমান | ২৮ নভেম্বর ২০২৫
  • শুভঙ্কর বসু, কলকাতা: ইনিউমারেশন ফর্ম পূরণ করে বিএলওর কাছে জমা দিয়েছিলেন। বিএলও সেই ফর্ম অ্যাপ মারফত ডিজিটাইজ করতে গিয়ে দেখেন, অন্য কোনও জেলা থেকে সেই ভোটারের ফর্ম জমা পড়ে গিয়েছে। এমনই অভিজ্ঞতার শিকার হয়েছেন এগরার বাসিন্দা শরৎ চন্দ, গাইঘাটার সুপর্ণা বন্দ্যোপাধ্যায় কিংবা হাওড়ার শ্যামপুরের হাসানুজ্জামান। শুধু এই তিন ভোটারই নন। একাধিক জেলা প্রশাসন সূত্রে রাজ্যজুড়ে অন্তত লক্ষাধিক ‘নির্দোষ’ ভোটারের সঙ্গে এমন ঘটনা ঘটেছে। বিনা দোষে তাঁরা যে হয়রানির মুখে পড়তে চলেছেন, তা বলার অপেক্ষা রাখে না। নথি নিয়ে তাঁদেরও ছুটতে হবে হিয়ারিংয়ে। প্রমাণ করতে হবে নিজেদের ‘অস্তিত্ব’।

    কমিশন সূত্রে খবর, রাজ্যজুড়ে এমন লক্ষাধিক ভোটার রয়েছেন, যাঁদের নাম ২০০২ সালের তালিকায় থাকা সত্ত্বেও অন্য ভোটারের নামে তাঁদের ফর্ম আপলোড হয়ে গিয়েছে। উত্তর ২৪ পরগনা, মুর্শিদাবাদ, নদীয়া, পূর্ব মেদিনীপুর, মালদহ, দক্ষিণ ২৪ পরগনার মত জেলায় ভূরি ভূরি ঘটেছে এমন ঘটনা। কিন্তু কেন? বুথ লেভেল অফিসার থেকে শুরু করে ইআরও—কারও কাছে উত্তর নেই। আসলে কমিশনের ম্যাপিংয়ের (বর্তমান তালিকার সঙ্গে ২০০২ সালের ভোটার তালিকার তথ্য যাচাই) ভুলেই এই বিপত্তি। সেটাই সরাসরি বলতে চাইছেন না তাঁরা। জানা যাচ্ছে, শেষ এসআইআর অর্থাৎ, ২০০২ সালের ভোটার তালিকার সঙ্গে বর্তমান অর্থাৎ, ২০২৫ সালের ভোটার তালিকার ম্যাপিংয়ের পর বিএলও অ্যাপে যাবতীয় তথ্য তুলে দেওয়া হয়েছে। একাধিক ক্ষেত্রে সঠিকভাবে সেই তথ্য তোলার কাজ করা হয়নি। ম্যাপিংয়ের তথ্য অ্যাপে আপলোডের সময় এক ব্যক্তির ক্রমিক নম্বরে ভুল করে অন্য কোনও ব্যক্তির তথ্য তুলে দেওয়া হয়েছে। ফলে ২০০২ সালের তালিকা অনুযায়ী সঠিক তথ্য লিখে ফর্ম জমা দেওয়ার পর বিএলও সেই তথ্য আপলোডের সময় ওই ভোটারকে অ্যাপ ‘নট ফাউন্ড’ বলে দেখাচ্ছে। অর্থাৎ ওই ব্যক্তি তালিকা অনুযায়ী তাঁর বিধানসভা ক্ষেত্র, অংশ নম্বর ও ক্রমিক সংখ্যা সঠিকভাবে লিখে থাকলেও অ্যাপে তা মিলছে না। 

    এগরার বাসিন্দা শরৎ চন্দর অভিযোগ, তিনি ২০০২ সালের তালিকা অনুযায়ী বিধানসভা ক্ষেত্র, অংশ নম্বর ও ক্রমিক সংখ্যা সঠিকভাবে লিখে জমা দিয়েছিলেন। কিন্তু বিএলও জানাচ্ছেন, তাঁর দেওয়া তথ্য সম্বলিত ফর্ম দক্ষিণ ২৪ পরগনার সোনাপুরের কোনও শরৎ চন্দ্র হালদারের নামে জমা পড়েছে। গাইঘাটার ঘোজা এলাকার বাসিন্দা সুপর্ণা বন্দ্যোপাধ্যায়ের অভিযোগ, তার দেওয়া তথ্য অনুযায়ী ইনিউমারেশন ফর্ম জমা পড়েছে হাওড়ার উলুবেড়িয়ার কোনও সুপর্ণা ব্যানার্জির নামে। এখন বিএলওরা বলছেন, তাঁদের কিছু করার নেই। ফলে নথির বিভ্রাটে চরম আতান্তরে শরৎবাবু বা সুপর্ণার মতো প্রায় লক্ষাধিক ভোটার। 

    কমিশন সূত্রে খবর, এই ধরনের আপলোড না হওয়া ফর্মগুলি ইআরওদের কাছে জমা দিতে বলা হয়েছে। কিন্তু ফর্মগুলি নিয়ে ঠিক কী করা হবে, তা অজানা। যদিও এসআইআর বিজ্ঞপ্তি অনুযায়ী যাঁরা ইনিউমারেশন ফর্ম জমা দেবেন না, তাঁদের নাম খসড়া তালিকায় থাকবে না। এক্ষেত্রে এই সমস্ত নির্দোষ ভোটার বিএলওর কাছে ইনিউমারেশন ফর্ম জমা দিলেও তা আপলোড না হওয়ার কারণে, ওই সব ইনিউমারেশন ফর্ম জমা পড়েনি বলেই গণ্য হবে। স্বাভাবিকভাবে এই ভোটারদের নাম খসড়া তালিকায় উঠবে না। কমিশনের এক কর্তা জানাচ্ছেন, যাঁদের নাম উঠবে না, তাঁদের হিয়ারিংয়ের সুযোগ থাকছে। ফলে সমস্যার কিছু নেই। কিন্তু এই ভোটারদের প্রশ্ন, কমিশনের ভুলের কারণে তাঁদের কেন এই হয়রানির শিকার হতে হবে? 
  • Link to this news (বর্তমান)