মানিকতলার প্রাচীন খ্রিষ্টান কবরস্থানে নেশার আসর, হেরিটেজ কবরে শুকোয় জামাকাপড়
বর্তমান | ২৮ নভেম্বর ২০২৫
নিজস্ব প্রতিনিধি, কলকাতা: খান্না থেকে শিয়ালদহ আসার পথে বাঁদিকে পড়ে একটি হেরিটেজ কবরখানা। সেটি মানিকতলার শতাব্দীপ্রাচীন খ্রিষ্টান কবরস্থান। গাছের আড়ালে ঢেকে থাকায় সেভাবে মানুষের নজরে পড়ে না। গত কয়েক দশক ধরে কবরখানাটির হাল খারাপ হয়েছে। ভেঙেছে পাঁচিল, দখলদার বসেছে। কবি তরু দত্তের কবরের উপর শুকোচ্ছে জামা-কাপড়। প্রায় সারাদিন ধরে চলে মদ-গাঁজার ঠেক। এই অভিযোগ তুলেছে চার্চ। এবার নতুন করে সেই কবরখানার চেহারা বদলের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। রাজ্য সংখ্যালঘু বিষয়ক ও মাদ্রাসা শিক্ষাদপ্তর বরাদ্দ করেছে ৪২ লক্ষ টাকা।
আমহার্স্ট স্ট্রিটে রাজা রামমোহন রায় সরণিতে অবস্থিত হোলি ট্রিনিটি চার্চ। সেই চার্চের আওতাধীন মানিকতলার এই একশো বছরের পুরনো খ্রিস্টান কবরস্থানটি। একসময় নিয়মিত এখানে কবর দেওয়া হতো। এখানে বিশিষ্ট কবি তরু দত্তের সমাধি রয়েছে। রয়েছে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের অপারেশন করা চিকিৎসক লোহিতমোহন বন্দ্যোপাধ্যায়ের সমাধিও। কলকাতা পুরসভা হেরিটেজ তকমা দিয়েছে। সেই হেরিটেজ কবরখানাটির বেহাল দশা। সেখানে গিয়ে দেখা গিয়েছে দরজা ভাঙা। ভিতরে স্থানীয় কিছু যুবক আড্ডা দিচ্ছেন। কবরখানার দেওয়াল ধরে উঠেছে বটগাছ। চারপাশের পাঁচিল বহু জায়গায় ভাঙা। কবরখানার পাঁচিল ধরে দেওয়াল তুলে তৈরি হয়েছে ঘর। কবরের উপর শুকোতে দেওয়া হয়েছে জামা-কাপড়। চার্চ কর্তৃপক্ষের অভিযোগ, স্থানীয় বাসিন্দারা এভাবেই দিনের পর দিন কবরখানার দখল নিয়েছেন। তাঁদের অনেকে সিকিউরিটি গার্ডকে মারধর করতেন। তাই কোনও নিরাপত্তাকর্মী এখানে ডিউটি করতে চান না। মানিকতলার এই কবরখানা ২৮ নম্বর ওয়ার্ডের অন্তর্গত হলেও হোলি ট্রিনিটি চার্চ ৩৭ নম্বর ওয়ার্ডের অন্তর্গত। এই কবরখানাকে নতুন রূপ দিতে বিশেষভাবে উদ্যোগ নিয়েছেন ৩৭ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলার সোমা চৌধুরী ও এবং তৃণমূল কংগ্রেসের ওয়ার্ড প্রেসিডেন্ট প্রিয়াল চৌধুরী। হোলি ট্রিনিটি চার্চের পাদ্রি (ফাদার) সৈকত নাথ ফাদার বলেন, হোলি ট্রিনিটি চার্চ, সেন্ট মার্ক চার্চ, ক্রাইস্ট চার্চ ও ডাফ চার্চের সদস্যদেরই এখানে কবর দেওয়া হয়। দখলদার সরাতে অনেক চেষ্টা করেছি। কোনও লাভ হয়নি। সারাদিন এখানে গাঁজা-মদের আসর বসে। অসামাজিক কাজকর্ম চলে। স্থানীয় বাসিন্দারা কবরের উপর কাপড়-জামা মেলে রেখেছেন। এই জায়গাটির হাল ফেরানোর জন্য আমরা সোমাদেবী ও এবং প্রিয়ালবাবুর দ্বারস্থ হয়েছিলাম। প্রিয়াল চৌধুরী বলেন, বাড়ির পাশেই রয়েছে এই হোলি ট্রিনিটি চার্চ। ছোটবেলা থেকে এই চার্চের মাঠে খেলা করেছি। এখানকার সকলেই হয় আমার বন্ধুবান্ধব না হলে আমার থেকে বড়ো। তাঁরা যখন এই সমস্যার কথা জানালেন তখন আমি তাঁদের বলেছিলাম, লিখিতভাবে বিষয়টি জানাতে। শতাব্দীপ্রাচীন ঐতিহ্যশালী চার্চের এমন অবস্থা! ওঁদের সমস্যার কথা মেয়র ফিরহাদ হাকিমকে জানাই। তারপর মেয়রের উদ্যোগে সংখ্যালঘু দপ্তর থেকে অর্থবরাদ্দ হয়েছে। কাজও শুরু হয়ে গিয়েছে। পরিকল্পনা, কবরখানায় নতুন করে পাঁচিল তোলা হবে। তৈরি হবে অন্দরের নিকাশি ব্যবস্থা, হাঁটার রাস্তা। সেই সঙ্গে কবরখানা সাজিয়ে তোলা হবে। যাতে ক্রিস্টান ধর্মাবলম্বী মানুষ এখানে কবর দিতে আসতে পারেন। মাটি ফেলে জঙ্গল পরিষ্কার করে জায়গাটিকে নতুন রূপ দেওয়ার চেষ্টা চলছে।-নিজস্ব চিত্র