লুকিয়ে তুষার যুগের গল্প, মণিপুরে মিলল ৩৭ হাজার বছরের প্রাচীন বাঁশের জীবাশ্ম
বর্তমান | ০১ ডিসেম্বর ২০২৫
বিশেষ সংবাদদাতা, ইম্ফল: ৩৭ হাজার বছরের পুরনো বাঁশের জীবাশ্মের হদিশ। তা তুষার যুগের। মণিপুরের ইম্ফল উপত্যকার এই আবিষ্কার এশিয়ার উদ্ভিদবিদ্যার ইতিহাসে নয়া মাত্রা জুড়বে বলেই গবেষকদের অনুমান। সেই সঙ্গে তা উন্মোচন করতে পারে তুষার যুগের অজানা রহস্যও। ইম্ফল পশ্চিম জেলার সেনজাম-চিরাং গ্রামে চিরাং নদীতে পলিঢাকা অবস্থায় এই জীবাশ্ম পাওয়া গিয়েছে। এতে রয়েছে কাঁটার দাগ। এর থেকেই স্পষ্ট, তা কাঁটাযুক্ত বাঁশের জীবাশ্ম। প্রাচীন জীবাশ্মের তালিকায় তা একেবারেই বিরল। গবেষকদের মতে, এটি এশিয়ায় কাঁটাযুক্ত বাঁশের জীবাশ্মের প্রথম প্রমাণ। এতে বাঁশের প্রাথমিক বিবর্তনের ধারাটিও প্রতিফলিত হয়েছে বলে মনে করা হচ্ছে।
ফিল্ড সার্ভের সময় কেন্দ্রীয় বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিভাগের আওতাধীন বীরবল সাহনি ইনস্টিটিউশন অব পেলিওসায়েন্সেস (বিএসআইপি)-র গবেষক দল ওই জীবাশ্মের সন্ধান পেয়েছে। গবেষণাগারে বিশ্লেষণে দেখা যায়,এর কাণ্ডের উপর চিহ্নগুলি আদতে প্রাচীন কাঁটার দাগ। বাঁশের জীবাশ্মের হদিশ খুবই বিরল। কারণ ফাঁপা ও তন্তুযুক্ত গঠনের কারণে বাঁশ দ্রুত পচে যায়। তাই কাঁটা, কুঁড়ি ও শিকড়ের সংরক্ষণের কারণে জীবাশ্মটি ব্যতিক্রমী বলেই মনে করা হচ্ছে।
গবেষকরা জানিয়েছেন, ‘৩৭,০০০ বছর আগেকার এই জীবাশ্ম প্রমাণ করে যে, তুষার যুগেও বাঁশ ছিল। সময়ের বিবর্তনে পৃথিবীর কিছু কিছু অংশ থেকে বিলুপ্ত হয়ে গিয়েছে এই বাঁশ। ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চল এবং মায়ানমার এলাকার ঠান্ডা ও শুষ্ক আবহাওয়ার কারণে এই অংশে বাঁশ নিজের অস্তিত্ব বজায় রাখতে সক্ষম হয়েছে। অথচ একই আবহাওয়া থাকলেও ইউরোপের মতো জায়গা থেকে বাঁশ নির্মূল হয়ে গিয়েছে’। গবেষকরা বলছেন, বাঁশের এই জীবাশ্ম তুষার যুগের। ওই সময় ছিল তৃণভোজী প্রাণীদের দাপট। সেই পরিস্থিতিতেও ওই প্রজাতির বাঁশ নিজেকে টিকিয়ে রেখেছিল। আর এর নেপথ্যে রয়েছে বাঁশের কাঁটাযুক্ত অংশ। এর কাঁটাযুক্ত অংশই তৃণভোজী প্রাণীদের থেকে প্রতিরক্ষা হিসেবে কাজ করেছে। এই গবেষণার ফলাফল সম্প্রতি ‘জার্নাল রিভিউ অফ পেলিওবোটানি অ্যান্ড পেলিনোলজি’তে প্রকাশিত হয়েছে।
পরীক্ষানিরীক্ষা করে গবেষক এবং বিজ্ঞানীদের দাবি, এই বাঁশ ‘চিমোনোবাম্বুসা’ প্রজাতির। এই ‘চিমোনোবাম্বুসা’ থেকেই আজকের ‘বাম্বুসা বাম্বোস’-এর বিবর্তনের ধারা বোঝা যাবে। এবার মণিপুরের চিরাং নদীর তীর থেকে উদ্ধার হওয়া এই বাঁশের জীবাশ্ম গবেষণায় এক নতুন মাত্রা যোগ করবে বলে মনে করছেন গবেষকরা। পরীক্ষানিরীক্ষা করে তাঁদের দাবি, এই বাঁশ ‘চিমোনোবাম্বুসা’ প্রজাতির। এই ‘চিমোনোবাম্বুসা’ থেকেই আজকের ‘বাম্বুসা বাম্বোস’-এর বিবর্তনের ধারা বোঝা যাবে।