ব্যাকফুটে নির্বাচন কমিশন, খসড়া তালিকা প্রকাশ পিছিয়ে ১৬ ডিসেম্বর, চূড়ান্ত ভোটার রোল ১৪ ফেব্রুয়ারি
বর্তমান | ০১ ডিসেম্বর ২০২৫
নিজস্ব প্রতিনিধি, নয়াদিল্লি: সুপ্রিম কোর্টের হুঁশিয়ারি, তৃণমূলের লাগাতার চাপ এবং আজ শুরু হওয়া সংসদের বাদল অধিবেশন উত্তাল হওয়ার ইঙ্গিতেই আচমকা স্পেশাল ইন্টেনসিভ রিভিশন প্রক্রিয়ার সময়সীমা বাড়িয়ে দিল নির্বাচন কমিশন। বিজ্ঞপ্তি জারি করে এদিন তারা জানিয়ে দিল, ৪ ডিসেম্বর নয়, ১১ ডিসেম্বর শেষ হবে এসআইআরের ইনিউমারেশন পর্ব। আর খসড়া ভোটার তালিকা প্রকাশ ১৬ ডিসেম্বর। অর্থাৎ দু’টি ক্ষেত্রেই সময়সীমা সাতদিন বাড়ানো হল। খসড়া তালিকায় নাম না থাকলে বা নতুন ভোটাররা নাম অন্তর্ভুক্ত করার জন্য ১৬ ডিসেম্বর থেকে ১৫ জানুয়ারি আবেদন করতে পারবেন। আর ৭ ফেব্রুয়ারি নয়, চূড়ান্ত ভোটার তালিকা প্রকাশ হবে ২০২৬ সালের ১৪ ফেব্রুয়ারি। পশ্চিমবঙ্গ সহ দেশের ১২ রাজ্য ও কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলের ক্ষেত্রেই এই সময়সীমা প্রযোজ্য হবে।
তৃণমূল অবশ্য এরপরও চাপ বজায় রেখেছে। তারা সাফ জানিয়েছে, এই সময়সীমা বৃদ্ধি ভোটার তালিকা শুদ্ধকরণের জন্য যথেষ্ট নয়। দলের রাজ্যসভার নেতা ডেরেক ও’ব্রায়েন এদিন বলেন, ‘কমপক্ষে দু’বছর সময় নেওয়া উচিত। ২০২৭ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত শুদ্ধকরণের কাজ হওয়া প্রয়োজন। আসলে কমিশন চালাচ্ছেন অমিত শাহ। তাঁর নির্দেশেই বাংলাকে টার্গেট করেছে কমিশন। তাই এসসি, এসটি, সংখ্যালঘু ভোটারদের নাম বাদ দেওয়া হচ্ছে। মানুষও মরছে।’
গত ২৭ নভেম্বরই দেশের প্রধান বিচারপতি সূর্য কান্ত জানিয়ে দিয়েছেন, বাংলায় এসআইআর নিয়ে সুপ্রিম কোর্টে শুনানি হবে আগামী ৯ ডিসেম্বর। প্রয়োজনে খসড়া তালিকা প্রকাশের দিন পিছিয়ে দেওয়ার হুঁশিয়ারিও দিয়ে রেখেছিলেন তিনি। ওয়াকিবহাল মহল বলছে, শীর্ষ আদালতে যাতে হোঁচট খেতে না হয়, সেই কারণেই আগেভাগে ভোটার তালিকা প্রকাশের দিনক্ষণ পিছিয়ে দিল কমিশন। এছাড়া বিরোধীদের চাপ তো রয়েইছে। যদিও কমিশনের দাবি, খসড়া তালিকা প্রকাশের আগে মৃত, স্থানান্তরিত, ডুপ্লিকেট এবং ইনিউমারেশন ফর্ম বিলির সময় অনুপস্থিত ভোটারদের নামধাম বুথ লেভেল এজেন্টদের সঙ্গে বিএলও’কে মিলিয়ে দেখার জন্য পর্যাপ্ত সময় দিতেই এই সিদ্ধান্ত। যাতে পরে কোনও অভিযোগ না থাকে। বাংলায় কিন্তু ইতিমধ্যেই ৯৫.২৪ শতাংশ, অর্থাৎ ৭ কোটি ২৯ লক্ষ ৯৩ হাজার ১৮৫ জন ভোটারের ডিজিটাইজেশন শেষ হয়ে গিয়েছে বলে জানিয়েছে কমিশন। সেক্ষেত্রে পশ্চিমবঙ্গে এসআইআরের গতিপ্রকৃতি সময়সীমা বাড়ানোর কারণ না হওয়াটাই স্বাভাবিক। বরং কেন্দ্রের শাসক শিবিরকে কোনও রাজ্য যদি এখনও অস্বস্তিতে ফেলে থাকে, তার নাম উত্তরপ্রদেশ। যোগীরাজ্যে এ পর্যন্ত ৬৯.৫৬ শতাংশ ডিজিটাইজেশন হয়েছে। তাদেরই সময় বাড়ন্ত। বাকি সব রাজ্যই ৮০ শতাংশের গণ্ডি পেরিয়ে গিয়েছে। আজ শুরু হওয়া সংসদের অধিবেশনে এই স্ট্রাইক রেটও যে বিজেপিকে প্রশ্নের মুখে ফেলত, তা একপ্রকার নিশ্চিত। এখন কমিশন কিছুটা হলেও সময় উপহার দিল বিজেপি সরকারকে। তবে শাসক শিবিরের একটা সুবিধা, এই দফায় সংসদ বসবে মাত্র ১৫ দিন। স্মরণকালে সবচেয়ে কমদিনের অধিবেশন। এ নিয়ে রবিবার সর্বদল বৈঠকে বিরোধীরা সমালোচনাও করেছে। ডেরেক বলেছেন, ‘জওহরলাল নেহরুর সময় গড়ে ৩৬-৪৫ দিন হয়েছে এক একটি অধিবেশন। আর নরেন্দ্র মোদির জমানায় ১৮-১৯ দিন!’ তারপরও বিরোধীরা সাফ জানিয়েছে, এসআইআর এবং নির্বাচন কমিশনের কাজকর্ম নিয়ে সংসদে আলোচনা করতেই হবে। কোনও কথা শুনব না। পাশাপাশি সাম্প্রতিক দিল্লি বিস্ফোরণ, বায়ু দূষণ, ১০০ দিনের কাজের বকেয়ার মতো ইশ্যুও রয়েছে। রাজনাথ সিং সহ কেন্দ্রের চার মন্ত্রী বৈঠকে থাকলেও তাঁরা শুধু বিরোধীদের বক্তব্য শুনেই গিয়েছেন। উত্তর দেননি। সরকারের এই অবস্থান দেখে তৃণমূলের কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের কটাক্ষ, ‘সরকার যেভাবে সর্বদল বৈঠকে বিরোধীদের কথা শুনছে, সেটা সংসদেও শুনবে তো? নাকি সেখানে হবে বিরোধীদের কণ্ঠরোধ?’