সম্পত্তির লোভে পিটিয়ে খুনের চেষ্টা বৃদ্ধ বাবা-মাকে, পাইকপাড়ায় গ্রেফতার দুই ছেলে
বর্তমান | ০১ ডিসেম্বর ২০২৫
নিজস্ব প্রতিনিধি, কলকাতা: কথায় বলে, বিষয় বিষ! এ যে কেবল নীতিকথা নয়, বরং ঘোর বাস্তব, সেটাই এখন হাড়ে হাড়ে টের পাচ্ছেন চিৎপুর থানা এলাকার পাইকপাড়ার রাজা মণীন্দ্র রোডের প্রবীণ রায়চৌধুরী দম্পতি। সম্পত্তি দিতে না চাওয়ায় তাঁদের বেধড়ক মারধরের অভিযোগ উঠেছে দুই ছেলের বিরুদ্ধে। সন্তানদের মারে বাবার পাঁজরের হাড় ভেঙেছে। শরীরের একাধিক জায়গায় রয়েছে আঘাতের চিহ্ন। বৃদ্ধ তপন রায়চৌধুরীর স্ত্রী গোপাদেবীর অভিযোগের ভিত্তিতে চিৎপুর থানা খুনের চেষ্টার মামলা রুজু করে তদন্তে নেমেছে। শনিবার গভীর রাতে তারা গ্রেফতার করেছে দুই ভাই সুরজিত চৌধুরী ও অভিজিৎ চৌধুরীকে।
পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, তপনবাবু একটি ছোটো সংস্থায় কাজ করতেন। রাজা মণীন্দ্র রোডে তাঁদের পুরোনো বাড়ি রয়েছে। এক ছেলে অ্যাপ নির্ভর একটি ফুড ডেলিভারি সংস্থায় কাজ করে। অন্যজন এলাকায় ছোটোখাটো কাজকর্ম করে। দু’জনে প্রায়শই নেশা করে বলে অভিযোগ। স্থানীয় সূত্রে খবর, মণীন্দ্র রোডের বাড়ির দখল চাইছিল এই দুই ভাই। এর জন্য তারা সম্পত্তি তাদের নামে লিখে দিতে বলে বাবাকে। তাতে কাজ না হওয়ায় মানসিক চাপ বাড়াতে থাকে। তারপরও সম্পত্তি হাতে না আসায় শুরু হয় শারীরিক নির্যাতন। অভিযোগ, বাবা-মাকে দুই ছেলে মাঝেমধ্যেই মারধর করত। দিনের পর দিন অত্যাচারে তপনবাবু অসুস্থ হয়ে পড়েছিলেন। আতঙ্কে ঘুমোতে পারতেন না। এর জন্য নিয়মিত ঘুমের ওষুধ খেতে হত তাঁকে। গত কয়েকদিন ধরে বাবা-মার উপর দুই ছেলের অত্যাচারের মাত্রা বেড়ে গিয়েছিল। দিন তিনেক আগে দুই ভাইয়ের সঙ্গে মা-বাবার সম্পত্তি নিয়ে ঝগড়া শুরু হয়। তখনই তারা বাবা-মাকে বেধড়র মারধর করে বলে অভিযোগ। লাঠি দিয়ে মারা হয় প্রবীণ দম্পতিকে। প্রতিবেশীরাই তাঁদের উদ্ধার করে। তপনবাবু ও তাঁর স্ত্রীকে হাসপাতালে ভর্তি করাতে হয়। ছেলেদের মারে বৃদ্ধের পাঁজর ভেঙেছে। কোমর সহ শরীরের অন্যান্য অংশে রয়েছে জোরালো আঘাত। গোপাদেবী হাসপাতাল থেকে ছাড়া পেলেও তপনবাবু এখনও চিকিৎসাধীন। তাঁর অবস্থা সংকটজনক। এই অবস্থায় হাসপাতাল থেকে ছাড়া পেয়ে শনিবার গোপাদেবী চিৎপুর থানায় লিখিত অভিযোগ করেন। হাসপাতালে গিয়ে তদন্তকারীরা তপনবাবুর সঙ্গে কথা বলেন। রাতেই গ্রেফতার করা হয় অভিযুক্ত দুই ভাইকে।
সূত্রের খবর, জেরায় দুই ধৃত প্রথমে তদন্তকারীদের বিভ্রান্ত করার চেষ্টা করে। তপনবাবু পড়ে গিয়ে আঘাত পেয়েছেন এবং পাঁজর ভেঙেছে বলে দাবি করে দু’জনেই। তারা আরও দাবি করে, বাবা প্রচুর ঘুমের ওষুধ খান। তাঁকে ভালো রাখার জন্য এত বেশি ঘুমের ওষুধ খেতে তারাই নাকি নিষেধ করেছিল! এর সঙ্গে সম্পত্তির কোনও বিষয় নেই। কিন্তু তদন্তকারীরা মেডিকেল রিপোর্ট দেখে স্পষ্ট বুঝতে পারেন, মারধরের ফলেই পাঁজর ভেঙেছে বৃদ্ধের। সেই রিপোর্ট তাদের সামনে তুলে ধরতেই ঘাবড়ে যায় দু’জনে।