• লেনদেন নেই, বাংলায় বন্ধ হয়ে গেল ১ কোটি জনধন অ্যাকাউন্ট
    বর্তমান | ০১ ডিসেম্বর ২০২৫
  • বাপ্পাদিত্য রায়চৌধুরী, কলকাতা: বাংলাকে ‘টাইট’ দিতে গিয়ে নিজেদের ‘ফ্ল্যাগশিপ’ প্রকল্পকেই প্রশ্নের মুখে ফেলে দিয়েছে কেন্দ্রের মোদি সরকার! পশ্চিমবঙ্গে ‘বন্ধ’ হয়ে গিয়েছে প্রায় ১ কোটি জনধন অ্যাকাউন্ট। যার অন্যতম কারণ ১০০ দিনের কাজে রাজ্যকে ধারাবাহিক আর্থিক বঞ্চনা। দেশের সব মানুষকে ব্যাংকিং পরিষেবার আওতায় আনতে জনধন অ্যাকাউন্ট খোলায় জোর দিয়েছিল কেন্দ্র। সেই মতো কোটি কোটি দেশবাসী সেই অ্যাকাউন্ট খুলেছিলেন। শুধু বাংলাতেই জনধন অ্যাকাউন্টের সংখ্যা প্রায় সাড়ে পাঁচ কোটি। এর মধ্যে প্রায় এক কোটি (৯৫ লক্ষের বেশি) অ্যাকাউন্ট নিষ্ক্রিয় হয়ে গিয়েছে। অর্থাৎ এই অ্যাকাউন্টগুলিতে গত দু’বছরের বেশি সময় ধরে কোনও লেনদেন হয়নি। কেন এই অবস্থা? বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এ রাজ্যে জনধন অ্যাকাউন্টগুলির বড় অংশই বেঁচে ছিল ‘মনরেগা’র টাকায়। গ্রামের প্রান্তিক মানুষ ‘১০০ দিনের কাজ’ প্রকল্পে খেটে যে টাকা রোজগার করতেন, তা সরাসরি পৌঁছে যেত ওই অ্যাকাউন্টগুলিতে। কিন্তু বছরের পর বছর বাংলাকে এই খাতে কোনও টাকা দেয়নি কেন্দ্র। টাকা ঢোকা বন্ধ হয়ে যাওয়ায় অনেকেই আর তা চালু রাখা প্রয়োজন বলে মনে করেননি।

    যে অ্যাকাউন্টে সাধারণত দু’বছর বা তার বেশি সময় কোনও লেনদেন হয় না, সেগুলিকে বলা হয় ‘ইনঅপারেটিভ’ বা ‘অকেজো’ অ্যাকাউন্ট। কেন্দ্রের দাবি, জনধন অ্যাকাউন্টগুলি সচল রাখতে তারা একাধিক পদক্ষেপ গ্রহণ করছে। যেমন, ব্যাংকের তরফে সংশ্লিষ্ট গ্রাহককে এ বিষয়ে সচেতন করা হচ্ছে। তিন মাস অন্তর এসএমএস, ই-মেল বা চিঠি দিয়ে অ্যাকাউন্টগুলি সচল করার কথা বলা হচ্ছে। বিশেষত পঞ্চায়েত এলাকায় ক্যাম্প খুলে চালু করা হচ্ছে নিষ্ক্রিয় অ্যাকাউন্ট। তাছাড়া, অ্যাকাউন্টগুলিতে এখনও যে বিভিন্ন সরকারি প্রকল্পের ভরতুকি পৌঁছে দেওয়া হয়, বলা হচ্ছে সেই কথাও। ব্যাংক কর্মীদের সর্বভারতীয় সংগঠন অল ইন্ডিয়া ব্যাংক এমপ্লয়িজ অ্যাসোসিয়েশনের সর্বভারতীয় সভাপতি রাজেন নাগর বলেন, ‘এ রাজ্যে জনধন অ্যাকাউন্টগুলির একটা বড় অংশ বন্ধ হওয়ার কারণ ১০০ দিনের প্রকল্পের টাকা না আসা। বহু মানুষ ওই টাকা তুলতেই ব্যাংকে যেতেন। যেখানে টাকাই নেই, সেখানে লেনদেনের উৎসাহ কীভাবে থাকবে? আমাদের দাবি, শুধু অ্যাকাউন্ট খুললেই হবে না। তাতে জনহিতকর কিছুই হয় না। সাধারণ মানুষ যাতে সেই অ্যাকাউন্ট থেকে পরিষেবা পেতে পারে, তার ব্যবস্থা করতে হবে। দেশে প্রায় ৫৬ কোটি জনধন অ্যাকাউন্ট আছে। বেশিরভাগই রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলির আওতায়। সরকার একদিকে ব্যাংকগুলিতে কাজের বোঝা বাড়িয়ে যাচ্ছে। অথচ পর্যাপ্ত কর্মী নিয়োগ করছে না। ফলে সুষ্ঠু পরিষেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন সাধারণ গ্রাহক। অথচ যে উদ্দেশে অ্যাকাউন্টগুলি খোলা হচ্ছে, তা সাধিত হচ্ছে না।’ সূত্রের খবর, এ রাজ্যে জব কার্ড হোল্ডারের সংখ্যা প্রায় আড়াই কোটি। যেসব মহিলার জব কার্ড আছে, তাঁরা রাজ্য সরকারের লক্ষ্মীর ভাণ্ডারের মতো প্রকল্প থেকে নিয়মিত টাকা পান। তাই তাঁদের অ্যাকাউন্টগুলি  চালু আছে। না হলে নিষ্ক্রিয় অ্যাকাউন্টের সংখ্যা নিশ্চিতভাবেই আরও বাড়ত। 
  • Link to this news (বর্তমান)