সংবাদদাতা, বারুইপুর: মৎস্যকন্যারা থাকেন রূপকথা বা উপকথায়। থাকেন হান্স অ্যান্ডারসনের দ্য লিটল মারমেড গল্পে। আর থাকেন ছোট থেকে বুড়োর স্বপ্ন-কল্পনায়। এখন আবার শোনা যাচ্ছে, তিন মৎস্যকন্যা নাকি বইয়ের পাতা থেকে বেরিয়ে, মানুষের স্বপ্নের জাল ছিঁড়ে বেরিয়ে বারুইপুরে চলে এসেছেন। মস্ত অ্যাকোয়ারিয়ামে থাকছেন। দেখাও দিচ্ছেন ফি সন্ধ্যায়।
অ্যাকোয়ারিয়ামে থাকা ফাইটার মাছের পাখনার মতো রঙিন পুচ্ছ তাঁদের। শরীরজুড়ে বিভঙ্গ। সাঁতার কাটলে জলে রঙের ঢেউ খেলে যায়। তাঁরা রূপকথার মতোই সুন্দর। ফরসা। দেখতে যেন রাজকন্যা, যেন পরী। এক হাজার লিটার জলের বিশাল অ্যাকোয়ারিয়ামে তাঁরা সাঁতার কাটলে ‘অবতার, দ্য ওয়ে অফ ওয়াটার’ সিনেমা দেখার রোমাঞ্চ জাগে চোখে। বারুইপুরে নিউ ইন্ডিয়ান মাঠে এক মাস ধরে চলছে মিলনমেলা। সেখানে এসেছেন তিন মৎস্যকন্যা। যাঁর বাড়ি ইন্দোনেশিয়ার যোগকারতায়, তাঁর নাম লুসি মারগারেটা। আর কেরল থেকে এসেছেন দু’জন। তাঁদের একজনের নাম গীতা পুত্রী। অন্যজন হলেন নীহারিকা। তিনজনেই তরুণী। সুন্দরী। ফলে তাঁদের সঙ্গে সেলফি তোলার ভিড় রোজই।
হান্স আন্ডারসনের লিটল মারমেডের জীবনের পুরোটা খুব একটা সুখে কাটেনি। বাস্তবের জলপরীরাও যে খুব আরামে থাকেন এমন ভাবার কোনও কারণ নেই। অ্যাকোয়ারিয়ামের ঠান্ডা জলে এই শীতে নামমাত্র পোশাকে তাঁরা সাঁতার কেটেই চলেন। একবার দম নিয়ে প্রায় দু’মিনিট থাকতে হয় জলে ডুবে।
জলে একটি পাইপ আছে। সেটি দিয়ে অক্সিজেন সাপ্লাই হয়। দু’মিনিট পর শরীরে হিল্লোল তুলে পাইপে ঠোঁট ঠেকিয়ে একটু অক্সিজেন নেন মারগারেটারা। তারপর আবার সাঁতার। তাঁদের চোখে ওয়াটার প্রুফ চশমা। ছ’মাস ধরে হাড়ভাঙা ট্রেনিংয়ের পর মেলে শো’য়ে নামার ছাড়পত্র। এতকিছুর পরও মৎস্যকন্যাদের বাড়িতে অভাব। ফলে পেটের ভাত জোগাতে জলেই থাকা। বিহার, ঝাড়খণ্ড, পাঞ্জাব তাঁদের খেলা দেখে নিয়েছে। এবার দেখছে বারুইপুর। তিনজন বিকেল চারটে থেকে খেলা দেখান। খেলা চলে রাত ১০টা পর্যন্ত। প্রত্যেকের দু’ঘণ্টা ধরে শিফট। ভাগাভাগি করে দেখান শো। মৎস্যকন্যারা বাংলায় কথা বলতে জানেন না। তাই একজন দোভাষী আছেন।
মেলা কমিটির কর্মকর্তা সঞ্জীব সরকার বলেন, ‘জলপরীরাই মূল আকর্ষণ। এছাড়া নতুন রাইড এসেছে সুনামি নাগরদোলা। তাতেও ভিড় উপচে পড়ছে।’ মেলায় ৬৬ টি স্টল বসেছে। ভিন রাজ্যের ব্যবসায়ীরাও এসেছেন।
মৎস্যকন্যারা জলে সাঁতার কাটতে কাটতে অ্যাকোয়ারিয়ামের কাচের দেওয়ালের কাছে চলে আসেন যখন, তখন দর্শকদের তীব্র উল্লাস। দু’পক্ষের শুভেচ্ছা বিনিময়ও হয়। সেলফি ওঠে। মৎস্যকন্যাদের শো দেখার টিকিটের মূল্য খুব একটা বেশি নয়। এখন তাঁদের শো সোশ্যাল মিডিয়াতেও ভাইরাল। বারুইপুরে এখন তিনজনের দৌলতে লাল-নীল-সবুজের মেলা বসেছে। ফলে ধূসর শীতকাল আচমকা রঙিন।