• অযত্নের সাঁতরাগাছি ঝিল থেকে মুখ ফিরিয়েছে শীতের অতিথিরা
    আনন্দবাজার | ০১ ডিসেম্বর ২০২৫
  • এক ঝলক দেখলে আদিগন্ত আগাছার জঙ্গল বলে ভুল হতে পারে। আদতে এটি রাজ্যে পরিযায়ী পাখিদের অন্যতম ঠিকানা সাঁতরাগাছি ঝিল। অভিযোগ, এক দিকে প্রশাসনিক অবহেলা আর অন্য দিকে সাফাই নিয়ে দায় ঠেলাঠেলি, এই দুইয়ের জন্য ঝিলের কার্যত পঞ্চত্বপ্রাপ্তি ঘটেছে আগেই। তাই নভেম্বরেরগোড়া থেকে যে জলাশয় পরিযায়ী পাখিদের কলরবে মুখর থাকত, সেই জায়গা এখন কচুরিপানা আর আগাছায় ঢাকা। একই সঙ্গে অভিযোগ, এলাকার বাসিন্দাদের একাংশ এবং প্রশাসনের চরম উদাসীনতায় ঝিলের আশপাশে গজিয়ে ওঠা বহুতলের নিকাশি বর্জ্য সরাসরি জলাশয়ে এসে মেশায় গোটা এলাকায় দুর্গন্ধেটেকা দায়।

    পরিবেশকর্মী সুভাষ দত্তের করা মামলার পরিপ্রেক্ষিতে ২০১৬ সালের ৪ জুলাই জাতীয় পরিবেশ আদালত নির্দেশ দিয়েছিল, এলাকার যে সব নিকাশি নালা সাঁতরাগাছি ঝিলে এসে পড়েছে, সেগুলির মুখ ঘুরিয়ে দিতে হবে। ঝিলের পাশে তৈরি করতে হবে নিকাশি পরিশোধন প্লান্ট (এসটিপি)। কিন্তু খরচ বেশি হওয়ার আশঙ্কায় পরে আদালতই বলে, ঝিলের চারপাশে নর্দমার মালা তৈরি করে পাশের একটি জলাশয়কে ‘অক্সিডেশন পন্ড’ হিসাবে ব্যবহার করে সেখানে বর্জ্য শোধন করতে হবে। পরে সেই জল ফেলতে হবে নাজিরগঞ্জ খালে। এলাকার পাখিপ্রেমীদের আক্ষেপ, আদালতের সেই নির্দেশের পরে কেটে গিয়েছে ন’বছরেরও বেশি সময়। এখনও তৈরি হয়নি নর্দমার মালা বা ‘অক্সিডেশন পন্ড’।

    দক্ষিণ-পূর্ব রেলের সাঁতরাগাছি রেল স্টেশনের পাশে এই বিশাল ঝিলে প্রতি শীতকালে পরিযায়ী-সহ অন্তত ৪৫টি প্রজাতির পাখির আনাগোনা লেগে থাকে। যার মধ্যে আছে পিনটেল, গ্যাডওয়াল, করমোরেন্ট, পন্ড হেরন, ইন্ডিয়ান মুরহেন, লেসার হুইসলিং ডাক-এর মতো পাখি। কিন্তু চলতি বছরে এখনও একটি পাখিরও দেখা মেলেনি বলে জানাচ্ছেন স্থানীয় লোকজনই।

    এলাকার বাসিন্দা এবং পাখিপ্রেমী গৌতম পাত্র বলেন, ‘‘এর প্রধান কারণ ঝিল সংরক্ষণে চূড়ান্ত অবহেলা। ঝিলের পাশে তৈরি হয়েছে একাধিক বেআইনি বহুতল। সেই বহুতলগুলির নিকাশি বর্জ্য সরাসরি ঝিলের জলে ফেলা হচ্ছে।’’

    অভিযোগ, সাঁতরাগাছি ঝিলের রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্ব থেকে আগেই অব্যাহতি নিয়েছে দক্ষিণ-পূর্ব রেল। অন্য দিকে, জেলা প্রশাসন ও হাওড়া পুরসভা ব্যস্ত একে অন্যের উপরে দায় চাপাতে।

    ঝিলের দুরবস্থা নিয়ে হাওড়া জেলা প্রশাসনের ওসি (পরিবেশ) পার্থপ্রতিম সাধুখাঁ বলেন, ‘‘এই বিষয়টা সরাসরি জেলা প্রশাসন দেখে না। ঝিল সংস্কারের প্রয়োজন হলে আমরা হাওড়া পুরসভাকে জানাই। পুরসভা আবার পুর ও নগরোন্নয়নদফতরের নির্বাচিত একটি সংস্থাকে চিঠি দিয়ে জানালে তারা ঝিল সাফাইয়ের কাজ করে। পুরসভা সেই চিঠি দিয়েছে কিনা, জানতে চাইব।’’ হাওড়া পুরসভার এক পদস্থ কর্তা বলেন, ‘‘আমরা অনেক আগেই ওই সংস্থাকে ঝিল পরিষ্কারের ব্যাপারে চিঠি দিয়েছি। তার পরেও কেন কাজ হয়নি, বলতে পারব না।’’
  • Link to this news (আনন্দবাজার)