ভোটার তালিকায় বিশেষ নিবিড় সংশোধনের (এসআইআর) কাজ চলছে। সেই কাজে বুথ লেভল অফিসারদের (বিএলও) সঙ্গে থাকছেন রাজনৈতিক দলগুলির একজন করে বুথ লেভল এজেন্টও (বিএলএ-২)। যে দলের সংগঠন যত বেশি, স্বাভাবিক ভাবে সেই দলের এজেন্ট সংখ্যাও বেশি হওয়ার কথা। কিন্তু চুঁচুড়ায় উল্টো ছবি!
প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, ৩৬১টি বুথবিশিষ্ট চুঁচুড়া বিধানসভায় এ পর্যন্ত তৃণমূল মাত্র ১৭৮ জন বিএলএ-২ দিতে পেরেছে। সেখানে পদ্ম শিবির এবং বামেরা যথাক্রমে ৩০৮ জন ও ৩২৫ জন বিএলএ-২ দিতে পেরেছে। ফলে, সংখ্যার বিচারে বেশি বিএলএ-২ নিয়োগ করতে পারায় বিধানসভা ভোটের আগে উৎসাহিত বিরোধীরা।
কিন্তু হুগলির সদর শহর চুঁচুড়া এবং আশপাশের সাতটি পঞ্চায়েত নিয়ে গঠিত চুঁচুড়া বিধানসভায় তৃণমূলের এই হাল কেন? দলের একাংশ গোষ্ঠীকোন্দলকেই এর কারণ হিসেবে দায়ী করছেন। বস্তুত, কয়েক মাস ধরে এখানকার তৃণমূল বিধায়ক অসিত মজুমদারের সঙ্গে হুগলির দলীয় সাংসদ রচনা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ‘দ্বন্দ্ব’ অব্যাহত। শহর তৃণমূলের নেতার কার্যত দুই পক্ষে ভাগ হয়ে গিয়েছেন। এর সঙ্গে সম্প্রতি যোগ হয়েছে দলের শহর সভাপতি বদল এবং চুঁচুড়ার পুরপ্রধান অমিত রায়কে সরিয়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়ে কয়েক জন নেতার অসন্তোষ। ফলে, বিএলএ নিয়োগের ব্যাপারে অনেকেই উৎসাহ দেখাননি বলে মানছেন শহর তৃণমূলের এক নেতা।
প্রশাসনের কাছে বিএলএ-২ নিয়োগের ব্যাপারে আবেদনপত্র জমায় ঢিলেমির কথা মানছেন অসিত। তিনি বলেন, ‘‘শহর বা পঞ্চায়েতে যাঁদের উপরে দায়িত্ব ছিল, তাঁদের সঙ্গে কথা বলব। কেন, সব আবেদনপত্র জমা পড়েনি, দলীয় ভাবে খতিয়ে দেখা হবে।" তবে, গোষ্ঠীদ্বন্দ্বের কথা উড়িয়ে দিয়ে এর প্রভাব আগামী বিধানসভা ভোটে পড়বে না বলেই তিনি দাবি করেছেন।
দলে অসিত-বিরোধী হিসেবে পরিচিত শহর তৃণমূল সভাপতি শ্যামাপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়ের দাবি, ‘‘সব জায়গাতেই আমাদের বিএলএ আছেন। হয়তো তাঁদের সব আবেদনপত্র সঠিক ভাবে প্রশাসনের কাছে জমা পড়েনি।’’ কিন্তু কেন জমা পড়েনি, তার সদুত্তর তিনি দিতে পারেননি।
বিএলএ-২ নিয়োগে শাসক দলকে হারিয়ে দেওয়ায় বিরোধীদের দাবি, এসআইআরের এই পর্যায় দেখে আসন্ন বিধানসভা নির্বাচনে কোন দল কত এজেন্ট দিতে পারবে, তার একটা সম্যক ধারণা উঠে আসছে। বিজেপির হুগলি সাংগঠনিক জেলার সাধারণ সম্পাদক সুরেশ সাউ বলেন, ‘‘গত লোকসভা ভোটের নিরিখে আমরা চুঁচুড়া বিধানসভায় এগিয়ে রয়েছি। পাশাপাশি, গোটা হুগলি জেলাতেই আমাদের সংগঠন শক্তিশালী হয়েছে। তাই বিএলও-র সংখ্যা এতটা বেড়েছে। আগামী ভোটে আমাদের ফল ভাল হবে।’’ উজ্জীবিত সিপিএমের রাজ্য কমিটির সদস্য তথা চুঁচুড়ার বাসিন্দা মনোদীপ ঘোষের দাবি, ‘‘আমরা বুথভিত্তিক সংগঠন বাড়াতে জোর দিয়েছি এবং কাজও হয়েছে। তাই জেলার প্রায় সর্বত্র বিএলএ নিয়োগ করতে পেরেছি। বিধানসভা নির্বাচনেও বুথভিত্তিক সংগঠনের প্রভাব পড়বে বলেই মনে করছি।’’
তবে, বিএলএ নিয়োগে জেলায় সার্বিক ভাবে এগিয়ে তৃণমূলই। প্রশাসন সূত্রের খবর, হুগলির মোট ৫২৩৭টি বুথের জন্য এ পর্যন্ত মোট ৫০৩৫ জন বিএলএ-২ দিয়েছে তৃণমূল। ৩৯৪১ জন বিএলএ-২ দিতে পেরেছে বিজেপি। সিপিএম দিতে পেরেছে ৩৭০৯ জন।