• পুরসভায় ভূতুড়ে কর্মীর রমরমা
    আনন্দবাজার | ০১ ডিসেম্বর ২০২৫
  • নিয়োগের ক্ষেত্রে কৃষ্ণনগর পুরসভায় যে অনিয়ম হয়েছে তা পরিষ্কার ভাবে জানালেন মহকুমা শাসক। যার ফলে ‘অনিয়ন্ত্রিত’ ও ‘অপ্রয়োজনীয়’ ব্যায়ের কারণেই পুরসভার আর্থিক অবস্থার উপর ব্যাপক চাপ সৃষ্টি হয়েছে বলেও জানিয়েছেন তিনি।

    সরকারি নিয়মনীতি না মেনে যথেচ্ছ ভাবে নিয়োগ করা কর্মীদের বেতন দিতে গিয়েই পুরসভার ভাঁড়ে মা ভবানীর দশা হয়েছে। যে কারণে অর্থাভাবে কর্মীদের বেতন অনিয়মিত হয়ে পড়াই নয়, কঠিন সংকটের মুখে পড়েছে শহরের নাগরিক পরিষেবাও। পরিস্থিতি সামাল দিতে কার্যত হিমশিম অবস্থা বর্তমান কর্তৃপক্ষের। প্রশাসক হিসাবে দায়িত্ব নেওয়ার পর গোটা বিষয় তাঁর সামনে পরিষ্কার হতেই পরিস্থিতি সামাল দিতে মহকুমা শাসক পুরসভার সংশ্লিষ্ট দফতরগুলির প্রধান ও একজিকিউটিভ অফিসারকে চিঠি দিয়ে একাধিক নির্দেশ দিয়েছেন।

    তৃণমূল পুরবোর্ড গঠন করলেও দলের পুরপ্রতিনিধিদের মধ্যে বিবাদের কারণে শেষ পর্যন্ত তা রক্ষা করতে ব্যর্থ হয়। দুর্নীর্ত ও অনিয়মের বিষয়টি বার বার সামনে আসতে থাকায় কৃষ্ণনগর পুরসভায় পুরবোর্ড ভেঙে দিতে বাধ্য হয় রাজ্য সরকার। প্রশাসক পদে বসানো হয় কৃষ্ণনগর সদর মহকুমা শাসক শারদ্বতী চৌধুরীকে। দায়িত্বভার হাতে নেওয়ার পর বেশ কয়েকটি ক্ষেত্রে অনিয়ম তাঁর চোখে পড়ে। যার মধ্যে অন্যতম দৈনিক মজুরি ভিত্তিক কর্মী নিয়োগ। যাঁদের একটা বড় সংখ্যক হল ‘ভুতুড়ে’ কর্মী অর্থাৎ তাঁরা পুরসভা থেকে বেতন নিলেও কাজ করেন না। শুধু তাই নয়, তাঁদের নিয়োগ প্রক্রিয়া ও বেতন দেওয়ার ক্ষেত্রেও বড়সড় অনিয়ম দেখা গিয়েছে।

    কৃষ্ণনগর পুরসভা সূত্রে জানা গিয়েছে, এই মুহূর্তে কর্মীসংখ্যা প্রায় ১ হাজার ৩২৬ জন। তার মধ্যে মাত্র ২৯১ জন স্থায়ী পদে কর্মরত আছেন। বাকিরা চুক্তিভিত্তিক। দৈনিক মজুরির ভিত্তিতে নিয়োগ করা হয়েছে। সেই নিয়োগও বৈধ নয় বলে মহকুমা প্রশাসনের দাবি। কারণ, ২০১৯ সালের ১৩ অগস্ট নগর ও পুর উন্নয়ন দফতর স্পষ্ট নির্দেশিকা জারি করেছিল, তাদের অনুমোদন ছাড়া নতুন করে কোনও নিয়োগ করা যাবে না। কিন্তু সেই নির্দেশ অমান্য করে প্রচুর সংখ্যক কর্মী নিয়োগ করা হয়েছে।

    শুধু তাই নয়, এদের মধ্যে একটা বড় সংখ্যক কর্মী আছে যাদের নিয়োগের প্রয়োজন ছিল না বলেই মনে করছেন মহকুমা শাসক। সংখ্যাটা প্রায় ছ’শোর বেশি। যাদের অনেকেই আবার ভুতুড়ে কর্মী। অর্থাৎ খাতা কলমে তাদের অস্তিত্ব খাকলেও কর্মক্ষত্রে তাদের দেখা মেলে না। যদি মাসের শেষে তাঁদের বেতন নিয়মিত ছিল। এছাড়াও শনি ও রবিবারের পাশাপাশি অন্যান্য ছুটির দিন বা অনুপস্থিতির দিন কাজ না করলেও দৈনিক মজুরির ভিত্তিতে নিয়োগ হওয়া কর্মীদের বেতন কাটা হত না। নামে দৈনিক মজুরি হলেও তাঁদের পুরো মাসেরই বেতন দেওয়া হচ্ছিল বলে জানিয়েছেন মহকুমা শাসক। তিনি বলেন, “কাজ না করলেও মজুরি দেওয়া হচ্ছিল। সেটা তো হতে পারে না। তা ছাড়া প্রচুর ভুতুড়ে কর্মী আছেন কর্মক্ষেত্রে যাঁদের কোনও অস্তিত্বই খুঁজে পাওয়া যায় না। গোটা বিষয়টি নিয়ে সরকারি নিয়ম অনুযায়ী পদক্ষেপ করা হবে।”
  • Link to this news (আনন্দবাজার)