জল ও জলার জায়গা পটাশপুর। কেলেঘাই ও বাঘুই নদীর তীরের পটাশপুরের বিভিন্ন জলাশয়ে শীতকালে ঝাঁকে ঝাঁকে পরিযায়ী পাখি আসে প্রতি বছর। এ বছর ডিসেম্বরের শুরুর মুখেও শীতের অতিথিদের দেখা যায়নি। অতিথিদের মুখ ফিরিয়ে নেওয়ার পিছনে পরিবেশকর্মীরা কীটনাশকের দূষণের কারণে খাদ্য সঙ্কটকে দায়ী করছেন। জলাজমিতে ভেড়ি তৈরিও পাখিদের না আসার কারণ বলে আশঙ্কা তাঁদের।
শীত পড়লেই পটাশপুরে নদী তীরবর্তী জলাভূমিগুলোতে নানা ধরনের পরিযায়ী হাঁস ও কিছু স্থানীয় পাখি আশ্রয় নিত। কেলেঘাই নদী তীরবর্তী সেলমাবাদ, বাঁকিভেড়ি, গোপালপুর, গোকুলপুর, চিস্তিপুর, মকরামপুর এলাকায় জলাভূমি ও জলাশয়ে পরিযায়ী পাখিদের দেখা যায় প্রতি বছর।
মকরামপুরের একটি জলাশয়ে প্রতিদিন কয়েকশো সরাল ঘুরে বেড়াত। চোরাশিকারিদর হাত থেকে পাখি রক্ষায় গ্রামের যুবকেরা জলাশয় পাহারা দিতেন। সেই জলাশয়ে এ বছর এখনও পর্যন্ত পরিযায়ী পাখিদের দেখা মেলেনি।
পরিবেশকর্মীদের মত, জলাশয় দূষণের কারণেই পাখিরা মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছে। নদী তীরবর্তী জলাভূমি এলাকায় উচ্চ ফলনশীল ধান চাষ হয়েছে এবার। ধান চাষের কারণে জমিতে মাত্রাতিরিক্ত কীটনাশক ও রাসায়নিক সার দেওয়া হয়েছে। সেই বিষে মারা গিয়েছে জলজ প্রাণী ও পোকামাকড়। এর ফলে জলচর প্রাণীরা পর্যাপ্ত খাবার পাচ্ছে না।
নদী তীরবর্তী জলাভূমি দখল করে ভেড়ি তৈরি হচ্ছে। ভেড়িতেও নানা সার ও ওষুধ দিয়ে মাছ চাষ করা হয়। ভেড়ি তৈরি হওয়ায় পরিযায়ী পাখিদের আশ্রয়ের জায়গা ছোট হচ্ছে বলে মত পরিবেশকর্মীদের। কেলেঘাই নদী বাঁধে ১০ কিলোমিটার রাস্তা পাকা করার সময় দু’ধারের শয়ে শয়ে গাছ কাটা পড়েছিল। ওই গাছগুলো ছিল পরিযায়ী পাখির আশ্রয়স্থল।
পটাশপুর-১ ব্লক জীববৈচিত্র কমিটির সম্পাদক সোমনাথ দাস অধিকারী বলেন, ‘‘জলাভূমিগুলোতে এ বছর উচ্চ ফলনশীল ধান চাষের কারণে রাসায়নিক সার ও কীটনাশক ব্যবহারে পরিবেশ দূষিত হয়েছে। তাই পরিযায়ী পাখিদের দেখা মিলছে না।’’