• সারানো ঘরে বিএলও-বন্ধু এখন সমর্থ
    আনন্দবাজার | ০১ ডিসেম্বর ২০২৫
  • ধুলিয়ানের গঙ্গা দিয়ে জল গড়িয়ে গিয়েছে অনেক! সমর্থ কুমার দাসের জীবনও বদলে গিয়েছে আট মাসে। বিচার চেয়ে এক দিন আদালতের মুখাপেক্ষী যুবক এখন বুথ লেভল অফিসারের (বিএলও) সহযোগী হয়ে ভোটার তালিকার বিশেষ নিবিড় সংশোধনের (এসআইআর) তথ্য সরবরাহ করছেন।

    সমর্থের পরিচয়? মুর্শিদাবাদের শমসেরগঞ্জে গত এপ্রিলে ওয়াকফ সংশোধনী আইনের প্রতিবাদকে ঘিরে হিংসার বলি হয়েছিলেন হরগোবিন্দ দাস ও তাঁর বড় ছেলে চন্দন দাস। হরগোবিন্দের ছোট ছেলে সমর্থ তখন কাজের সূত্রে তামিলনাড়ুর কোয়ম্বত্তূরে। এলাকার অনেকেই মনে করেন, সে দিনের ভয়াবহ হামলার মূল লক্ষ্য সম্ভবত সমর্থই থেকে থাকতে পারেন। জোড়া খুনের ঘটনার পরে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় যখন শমসেরগঞ্জের জাফরাবাদে ওই বাড়িতে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন, বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারীর উদ্যোগে সমর্থের মা ও বৌদি-সহ পরিবারকে বিজেপির প্রতিনিধিরা নিয়ে চলে এসেছিলেন কলকাতার কাছে বিধাননগরে। ক্ষুব্ধ মুখ্যমন্ত্রী ওই বাড়ি যাওয়া বাতিল করছিলেন, সরকারি ক্ষতিপূরণও দাস পরিবার নেয়নি। পুলিশে অনাস্থা দেখিয়ে কেন্দ্রীয় সংস্থার তদন্ত চেয়ে কলকাতা হাই কোর্টের দ্বারস্থ হতে গিয়েছিল ওই পরিবার।

    তার পরে? নীরবে‌ এক সময়ে জাফরাবাদের পুরনো পাড়ায় মা-বৌদিকে নিয়ে ফিরে গিয়েছেন সমর্থ। ভিন্ রাজ্যে আর যাননি বাবা-দাদাকে হারানো যুবক। ক্ষত পুরোপুরি মেরামত না-হলেও বাড়ি সারানো হয়েছে, কাজের বিকল্প ব্যবস্থা হয়েছে। এসআইআর-এ গণনা-পত্র পূরণ করে জমা হয়েছে। এলাকায় খোঁজ রেখে ফর্ম জমা হওয়া নিশ্চিত করেছেন তৃণমূল কংগ্রেসের নেতা-কর্মীরা। বিজেপি খবর রাখছে দূর থেকে! সমর্থ বলছেন, ‘‘আমাদের ওই মামলার আর কিছু হয়নি। পুলিশের করা মামলাই এগোচ্ছে। হামলার দিন কেন পুলিশ-প্রশাসন আসতে পারেনি, জানি না। তবে শমসেরগঞ্জ থানার এখনকার আইসি (সুব্রত ঘোষ) যে কোনও প্রয়োজনে সহায়তা করছেন।’’

    তিনপাকুড়িয়া গ্রাম পঞ্চায়েতের ৮৭ নম্বর জাফরাবাদ প্রাথমিক বিদ্যালয়ের বুথের ভোটার তালিকায় নাম রয়েছে হরগোবিন্দ, চন্দন, সমর্থদের। জঙ্গিপুর গণনা-পত্র পূরণের কাজে সব চেয়ে এগিয়ে। সেই এলাকার বাসিন্দা (যদিও মালদহ দক্ষিণ লোকসভার ভোটার) সমর্থ নিজের গণনা-পত্র পূরণ করেছেন অনলাইনে, বাকিদের ফর্ম দিয়েছেন বিএলও-র হাতে। তাঁর কথায়, ‘‘নিয়ম মেনে বাবা আর দাদার নামে ‘মৃত’ বলে লিখে দিয়েছি। আমাদের বিএলও-কে ফর্ম সংগ্রহ এবং আপলোড করার কাজে সাহায্য করেছি। পদ্ধতিটা ভালই।’’ ওই বুথের বিএলও অনুরূপা দাস পেশায় পার্শ্ব-শিক্ষক, চাপ কমাতে সহযোগিতার হাত পেয়ে তিনিও আশ্বস্ত। সমর্থের সংযোজন, ‘‘এসআইআর অবশ্যই হওয়া উচিত। মৃত, ভুয়ো ভোটারের নাম রেখে ভোট হবে কেন? চাই, ভাল ভাবে কাজটা হয়ে যাক।’’

    ‘সনাতনী’ ভাবাবেগ সামনে রেখে দাস পরিবারকে দিয়ে পুলিশ-প্রশাসনের বিরুদ্ধে লড়াই চালাতে বিজেপি যখন তৎপর হয়েছিল, সেই প্রক্রিয়ার শরিক ছিলেন দলের আইনজীবী-নেতা কৌস্তভ বাগচী। তিনিও মানছেন, কেন্দ্রীয় সংস্থার হস্তক্ষেপ চেয়ে আইনি পথে আর এগোনো হয়নি। আর তৃণমূলের জঙ্গিপুর সাংগঠনিক জেলার সভাপতি ও সাংসদ খলিলুর রহমান বলছেন, ‘‘কেন ওই নৃশংস ঘটনাটা ঘটে গিয়েছিল, আমরা এখনও বুঝিনি। পুলিশ এখনও কারণ খুঁজছে। তবে আমরা দলের তরফে সব রকম ভাবে চেষ্টা করেছি স্বাভাবিক পরিস্থিতি ফিরিয়ে আনার। ওই পরিবার ফিরে এসেছে। সাংসদ তহবিলের টাকা থেকে টোটো-সহ জীবিকার ব্যবস্থা, নতুন করে মন্দির গড়ে দেওয়া, অনেক কাজই করা হয়েছে এবং হচ্ছে। এসআইআর-ফর্মের ক্ষেত্রেও আমরা সহায়তা করেছি।’’

    মুখ্যমন্ত্রী ফের মুর্শিদাবাদ জেলায় যাওয়ার মুখে সমর্থ বলছেন, ‘‘যে ওয়াকফ আইনের প্রতিবাদে এত কিছু ঘটে গেল, এখন শুনছি রাজ্য সরকার সেই আইন মেনে নিচ্ছে? কে যে কী করাচ্ছে!’’ বদলে যাওয়া পরিস্থিতিতে প্রশ্ন শুধু মরেনি!
  • Link to this news (আনন্দবাজার)