• প্রতারণায় হাতিয়ার ডেটিং অ্যাপও, সতর্ক করছে পুলিশ
    আনন্দবাজার | ০১ ডিসেম্বর ২০২৫
  • নিঃসঙ্গ জীবনে বন্ধুত্বের হাতছানি! আর সেই বন্ধুত্বের আড়ালেই পাতা প্রতারণার ফাঁদ। ‘বন্ধুত্ব’ করতে গিয়েও কখনও প্রতারকদের খপ্পরে পড়ে সর্বস্ব খোয়াতে হচ্ছে, কখনও পুলিশের কাছে আসছে আটকে রেখে মারধর, ভয় দেখানোর অভিযোগ। এমনকি, ব্যক্তিগত ছবি তুলে নিয়ে সামাজিক সম্মানহানির ভয় দেখিয়ে টাকা হাতানোর অভিযোগও কম নয়। ‘ডেটিং অ্যাপ’-এর আড়ালে লুকিয়ে থাকা এই বিপদ নিয়ে সতর্ক করছেন কলকাতা পুলিশ থেকে সাইবার বিশেষজ্ঞেরাও।

    সম্প্রতি কসবার একটি হোটেলে আদর্শ লোসালকা নামে এক যুবকের খুনের তদন্তে ডেটিং অ্যাপ-যোগ সামনে এসেছে। তদন্তে নেমে পুলিশ জানতে পেরেছে, খুনের অভিযোগে ধৃত তরুণী এবং তাঁর সঙ্গীর সঙ্গে ডেটিং অ্যাপের সূত্রেই পরিচয় হয় আদর্শের। এক দিনের আলাপে তাঁদের সঙ্গে ‘পার্টি’ করতে কসবার হোটেলে এসেছিলেন আদর্শ। হোটেলের ঘর থেকে পরে তাঁর রক্তাক্ত দেহ উদ্ধার করে কসবা থানার পুলিশ। রাতে হোটেলের ঘরে আদর্শের সঙ্গে ‘পার্টি’ করার পরে তাঁকে খুন করে তাঁর মোবাইল এবং এটিএম কার্ড হাতিয়ে নিয়েছিল অভিযুক্তেরা। তাঁর এটিএম কার্ড থেকে ১১ হাজার টাকাও তোলে দুই অভিযুক্ত। ধৃতদের জিজ্ঞাসাবাদ করে পুলিশ জেনেছে, দু’বছর ধরে অভিযুক্তেরা ডেটিং অ্যাপের সঙ্গে যুক্ত ছিল। বন্ধুত্বের আড়ালে একাধিক জন তাদের কাছে প্রতারণার শিকার হয়েছেন বলে প্রাথমিক ভাবে মনে করছে পুলিশ।

    শুধু কসবার ঘটনা নয়, ডেটিং অ্যাপের আড়ালে প্রতারণা চক্র চালানোর অভিযোগে মিন্টো পার্ক থেকে ১৭ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছিল কিছু দিন আগে। তারও আগে পাটুলি থেকে এক দম্পতি-সহ চার জনকে গ্রেফতার করেছিলেন তদন্তকারীরা। বন্ধুত্বের আড়ালে অভিযুক্তেরা প্রতারণা চক্র চালাত বলে অভিযোগ। অভিযুক্ত যুবক এক তরুণীকে ডেকে নিয়ে এসে ফ্ল্যাটে আটকে রেখে মুক্তিপণ চায় বলে অভিযোগ ওঠে। অন্য আর একটি ঘটনায় কলকাতায় বসে মুম্বইয়ের বাসিন্দাদের সঙ্গে আর্থিক প্রতারণা করার অভিযোগও পেয়েছিলেন লালবাজারের তদন্তকারীরা।

    ডেটিং অ্যাপের আড়ালে চলা একাধিক প্রতারণা চক্র নিয়ে সতর্ক করছেন সাইবার বিশেষজ্ঞ থেকে শুরু করে কলকাতা পুলিশের গোয়েন্দারা। বিশেষজ্ঞেরা জানাচ্ছেন, প্রতারকেরা অপরাধ সংগঠিত করতে একাধিক উপায়কে কাজে লাগায়। ডেটিং অ্যাপকে কাজে লাগিয়ে ভুয়ো লিঙ্ক পাঠিয়ে মোবাইল বা কম্পিউটারে ম্যালওয়্যার ইনস্টল করাতে পারে চক্রীরা। এর পরে সেখান থেকে সাইবার প্রতারণার আশঙ্কা থাকে। শুধু তা-ই নয়, ডেটিং অ্যাপকে কাজে লাগাতে প্রতারকেরা অনেক সময় ভুয়ো অ্যাকাউন্টও ব্যবহার করে। সেই অ্যাকাউন্টের সাহায্যে প্রথমে বন্ধুত্ব ও বিশ্বাস অর্জন করা এবং পরবর্তীতে বন্ধুত্বের আড়ালে কারও ব্যক্তিগত ছবি বা তথ্য হাতিয়ে মোটা অঙ্কের টাকা দাবি করে প্রতারকেরা। অনেক সময় হোটেলে নিয়ে গিয়ে ব্যক্তিগত মুহূর্তের ছবি বা ভিডিয়ো তুলে ব্ল্যাকমেল করার ঘটনাও ঘটে। সামাজিক সম্মানহানির ভয়ে অনেকে মোটা টাকা দিয়ে দেন বা প্রতারণার শিকার হয়েও থানা-পুলিশ এড়িয়ে যান। সাইবার বিশেষজ্ঞ সন্দীপ সেনগুপ্ত বলছেন, ‘‘ডেটিং অ্যাপের নির্দিষ্ট অ্যাকাউন্টের আড়ালে যৌন পেশার সঙ্গে যুক্ত বা সাইবার প্রতারক কেউ আছেন কিনা, তা বোঝা সম্ভব নয়। ফলে অল্প দিনের বন্ধুত্ব বা পরিচয়ে কারও সঙ্গে কোনও হোটেল বা জনবিরল স্থানে যাওয়া উচিত নয়। মেসেজ বা কোনও লিঙ্ক পাঠিয়ে ব্যক্তিগত তথ্য বা ছবি চাইলে তা দেওয়ার আগে সতর্ক থাকতে হবে।’’

    কসবার হোটেলে যুবক খুনের ঘটনায় ডেটিং অ্যাপের যোগ মিলতেই লালবাজারের তরফেও সতর্ক করা হচ্ছে। নিজের সম্পর্কে তথ্য বা ব্যাঙ্কের খুঁটিনাটি তথ্য না জানানোর পরামর্শ দিচ্ছেন লালবাজারের গোয়েন্দারা। এক কর্তার কথায়, ‘‘অজানা কাউকে ব্যক্তিগত তথ্য দেওয়া সব সময়েই বিপদের। যে কোনও ধরনের প্রতারণা বা ব্ল্যাকমেলের শিকার হলে দ্রুত পুলিশের সাহায্য নিতে হবে। দেরি করলেই সেক্ষেত্রে বড় বিপদ হতে পারে।’’
  • Link to this news (আনন্দবাজার)