বিমানে উঠতে পারবে না ঝোলাগুড়, বিদেশে পাড়ি দিচ্ছে শুধু বাংলার পাটালি
বর্তমান | ০১ ডিসেম্বর ২০২৫
নিজস্ব প্রতিনিধি, কলকাতা: বাংলার নতুন গুড় বা পাটালির জনপ্রিয়তা দেশের গণ্ডি ছাড়িয়ে ছড়িয়ে পড়ছে বিদেশে। এশিয়া তো বটেই, ইউরোপেও চাহিদা রয়েছে গুড়ের। কিন্তু এবারের মরশুমে মাথায় হাত ব্যবসায়ীদের। তাঁরা বলছেন, ‘এবারও পাটালি ও ঝোলাগুড়ের জন্য একাধিক দেশ থেকে বরাত আসে। কিন্তু আন্তর্জাতিক বিমানে ঝোলাগুড় নিয়ে যাওয়ার অনুমতি নেই। শুধু পাটালিকে প্লেনে ওঠার অনুমতি দেওয়া হচ্ছে। এর ফলে ব্যবসা সমস্যায় পড়ছে।’
গুড় রপ্তানিতে সমস্যা কোথায়? প্রতি বছরই বিদেশে গুড় রপ্তানি করেন অঙ্কিতা বেরা। তাঁর কথায়, ‘গতবছরও আমরা প্লেনে পাটালি ও ঝোলাগুড় পাঠিয়েছি। এবার কুরিয়ার সংস্থা জানিয়েছে আন্তর্জাতিক বিমানের ক্ষেত্রে নলেন বা ঝোলাগুড়ে নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে। তাই পাটালি দিয়েই এবার মন ভরাতে হচ্ছে বিদেশের ক্রেতাদের। ফিনল্যান্ড, দুবাই, সিঙ্গাপুরে খেজুর গুড় পাঠানো হয়েছে। আপাতত তাইল্যান্ডে তা পাঠানোর তোড়জোড় চলছে। আরও বরাত আসতে শুরু করেছে।’
গুড় ব্যবসায়ীরা জানান, এবার দেশীয় বাজারে যে পরিমাণ চাহিদা রয়েছে, তার তুলনায় জোগান কম। তাই দাম গতবছরের তুলনায় একটু বেশি। শীত এখনও পর্যন্ত কম। সেটাই হয়ত এর কারণ। শোভাবাজারের সুপ্রাচীন ‘শ্রীমন্তর গুড়ের আড়ত’ এর কর্ণধার তন্ময় বেরা বলেন, ‘তাপমাত্রার কারণে উৎপাদন কমেনি। কারণ আমরা যে গুণমানের গুড় অন্যান্য বছর এই সময় পাই এবারও তা আসছে। আসলে এবার শিউলির সংখ্যা কম। এক সঙ্গে অনেক শিউলি মিলে মহল তৈরি করে খেজুর রস আনেন ও গুড় তৈরি করেন। খবর পাচ্ছি, যেখানে একসময় এক হাজার মহল তৈরি হতো, তা এখন তিন-চারশোয় নেমেছে।’ তিনি জানান, বাঁকুড়া, পুরুলিয়া তো বটেই, ঝাড়খণ্ড থেকেও বেশ ভালো ‘দানা’ গুড় আসতে শুরু করেছে শহরে। মুর্শিদাবাদ থেকে আসছে এসটি সুপার গুড়। আছে মন্দির চুড়ার মতো দেখতে মুচি পাটালিও। জলঙ্গী দেবীপুরের পাটালি, টাকি ধোবাপাড়ার থালা পাটালির মানও এবার খুব ভালো। বিজয়পুর, হরিশনগর, গেদের মতো বাংলাদেশ লাগোয়া এলাকাগুলি থেকে আসা গুড়ের মান সবথেকে ভালো।
তন্ময়বাবুর কথায়, ‘কলকাতা ও শহরতলি তো বটেই, আমরা এই সময় প্রায় প্রতিটি রাজ্যেই গুড়ের পাইকারি জোগান দিয়ে থাকি। বড় বরাত থাকলে ট্রেনে পাঠানো হয়। তবে ভিনরাজ্যে বিমানেও আমরা ঝোলাগুড় এবং পাটালি পাঠাতে পারছি।’ এবছর দাম কতটা বেশি? তন্ময়বাবু জানান, ভালো নলেন গুড় কিনতে খোলা বাজারে চারশো টাকা দিতে হবে। পাটালির ক্ষেত্রে ৩০০ থেকে ৩৫০ টাকা কেজি।