সমীর মণ্ডল, মেদিনীপুর
সন্দেশ হোক, লাড্ডু বা গজা, পকেটে বড়জোর তিনটি টাকা থাকলেই যথেষ্ট। তাতেই মিলবে এই মিষ্টিগুলি। এক টাকার কয়েন দিলেই পাওয়া যাবে সন্দেশ ও লাড্ডু। না, কোনও গ্রামে নয়, খোদ মেদিনীপুর শহরের বুকেই রয়েছে এমন মিষ্টির দোকান। শহরের অন্য ঝাঁ চকচকে মিষ্টির দোকানগুলির তুলনায় এই দোকানটি নিতান্তই জীর্ণ। আজও কাঠের আলমারিতেই সাজানো থাকে মিষ্টি।
স্থানীয়দের কাছে এই দোকানটি ‘পচু ময়রার দোকান’ বলেই পরিচিত। মেদিনীপুর শহরের কর্নেলগোলা থেকে মীরবাজার যাওয়ার রাস্তায় ছোট্ট টিনের চালার তলায় পচু ময়রার দোকান। সকাল ন’টা থেকে দুপুর সাড়ে বারোটা পর্যন্ত খোলা থাকে এই দোকান। বিকেল পাঁচটার পরে তা আবার খোলে।
বহু দশকের পুরোনো এই দোকান শহরের নানা পরিবর্তনের সাক্ষী। স্থানীয়রা জানান, এক সময়ে এক আনায় (ছ’ পয়সা) মিলত তিনটি মিষ্টি। বছর কুড়ি আগেও একটি আধুলি, বা পঞ্চাশ পয়সায় বিক্রি হতো মিষ্টি। এখন একটি টাকায় মেলে সন্দেশ ও লাড্ডু। এলাকার অনেকের দাবি, স্বাধীনতারও আগে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল এই দোকান। কেউ কেউ বলেন, একসময়ে বিপ্লবীরাও এখানে যাতায়াত করতেন।
অবশ্য এমন কোনও লিখিত প্রমাণ বর্তমান মালিকদের কাছে নেই। দোকানের বর্তমান মালিক সুজিত কুণ্ডু।
তাঁর কথায়, ‘ঠাকুরদা আশুতোষ কুণ্ডুর সময় থেকে বংশ পরম্পরায় আমরা এই ব্যবসা চালিয়ে আসছি। পূর্বপুরুষদের কথা ভেবেই এত বছর দাম বাড়াইনি। এখন মিষ্টি তৈরির কাঁচামালের দাম বেড়েছে। ফলে সমস্যায় পড়তে হচ্ছে। তবুও সাধারণ মানুষ যাতে কম দামে মিষ্টি কিনতে পারেন, সেই চেষ্টা করছি। যতদিন পারব, এই দামেই মিষ্টি দেব।’
শুধু এক টাকার মিষ্টিই নয়, এখানে বানানো ‘কাঠিভাজা’ বা গজাও খুব জনপ্রিয়। প্রতিদিন সকালে তৈরি হয় এই গজা। দুপুরের মধ্যেই শেষ। কাঠিভাজার স্বাদ নিতে নানা জায়গা থেকে মানুষ আসেন।
স্থানীয় বাসিন্দা পার্বতী দাস বলেন, ‘শহরে এত পুরোনো স্বাদ আর কোথাও নেই। পুজোর সময়ে এই দোকানে ভিড় সামলানো দায় হয়ে যায়। রাত জেগে মিষ্টি তৈরি করেন কুণ্ডু পরিবার। এত কম দামে এমন মানের মিষ্টি মেদিনীপুরে আর কোথাও মেলে না।’
একই মত সাধন মল্লিক–সহ এলাকার অন্য বাসিন্দাদেরও। আধুনিকতার ভিড়ে, চাকচিক্যে মোড়া দোকানের দুনিয়ায় যেন শহরের স্মৃতি, ঐতিহ্য ও সাধারণ মানুষের আবেগের প্রতীক হয়ে রয়ে গিয়েছে পচু ময়রার এক টাকার সন্দেশ।