মহম্মদ মহসিন, গড়চুমুক
জল্পনা চলছিল বহু দিন ধরেই। মন্ত্রীর আশ্বাসও এসেছে বার বার। অবশেষে মিলল সবুজ সঙ্কেত। চলতি শীতের মরশুমেই যে কোনও দিন গড়চুমুক চিড়িখানায় চলে আসছে নেকড়ে ও হায়না। তাদের থাকার জন্য দু’টি খাঁচার কাজ শেষ।
একটি চিড়িয়াখানায় নতুন কোনও পশু–পাখি আনতে গেলে, খাঁচার পাশাপাশি প্রয়োজনীয় ছাড়পত্র লাগে ‘ন্যাশনাল জ়ু অথিরিটির’ কাছ থেকে। সেই ছাড়পত্রও মিলেছে বলে জানান গড়চুমুক জ়ুলজিক্যালের দায়িত্বপ্রাপ্ত রেঞ্জ অফিসার এষা বোস।
মাস খানেকের মধ্যে নতুন দু’জোড়া (পুরুষ এবং স্ত্রী হায়না ও নেকড়ে) অতিথিকে চিড়িয়াখানায় পাওয়া যাবে বলে বন দপ্তরের আধিকারিকরা আশা প্রকাশ করেছেন।পাশাপাশি, শিলিগুড়ির বেঙ্গল সাফারি থেকে বাঘ আনারও পরিকল্পনা রয়েছে। ন্যাশনাল জ়ু অথরিটির কাছে এখানে বাঘ রাখার অনুমোদনের জন্য প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে।
জ়ু কর্তৃপক্ষ আশাবাদী, খুব শ্রীঘ্রই মিলবে অনুমোদন। জ়ু অথরিটির কাছে বাঘের খাঁচার অনুমোদন নিয়ে আবেদন জানানো হয়েছে। চিড়িয়াখানায় যেখানে বাঘের এনক্লোজ়ার থাকবে, তার জায়গা ইতিমধ্যেই চিহ্নিত। বেঙ্গল সাফারি থেকে আসবে দু’টি বাঘ। চিড়িয়াখানা হলেও, গড়চুমুকে পশু–পাখিদের রাখার জন্য অভয়ারণ্যের একটা রূপ দেওয়ারও চেষ্টা চলছে। এই চিড়িয়াখানাটি প্রাথমিক পর্যায়ে হরিণ দিয়ে শুরু হয়েছিল। তখন এর নাম ছিল গড়চুমুক ‘ডিয়ার পার্ক।’
এখন হরিণের সংখ্যা প্রায় শতাধিক। রেঞ্জ অফিসার এষা বলেন, ‘ওই হরিণদের জন্য বড় এনক্লোজ়ার আছে। সেখানে বড় বড় লম্বা বাঁশ দিয়ে নিচু, মাঝারি ও উঁচু র্যাক করা হয়েছে, যাতে ক্ষিদে পেলে ওই র্যাক থেকে নিজেদের খাবার নিজেরাই সংগ্রহ করতে পারে তারা। একই ব্যবস্থা করা আছে বিভিন্ন প্রজাতির হাঁস ও জলজ পাখিদের জন্য এনক্লোজ়ারেও। সেখানে ছোট জলাশয় তৈরি করে, তাতে পানা, গেঁড়ি–গুগলি রাখা হয়েছে। ওই জলজ প্রাণীরা তাদের সময় করে খাবার সংগ্রহ করতে পারে।
কর্মীরা মুখের সামনে খাবার ধরিয়ে না দিয়ে, এই ব্যবস্থা করেছেন, যাতে পশু–পাখিদের জীবনধারণের স্বাভাবিকতা বজায় থাকে। বনবিড়াল ও অন্যদের ক্ষেত্রেও এই ব্যবস্থা করা হয়েছে। উল্লেখ্য, বেশ কয়েক মাস আগে গড়চুমুকে আনা হয়েছে বেশ কয়েকটি সবুজ ইগুয়ানা। তারপর এখানে তৈরি হয়েছে লেপার্ড ক্যাট, লেসার ক্যাট, মনিটর লিজ়ার্ড রাখার জন্য কয়েকটি এনক্লোজ়ার।
বর্তমানে হাওড়ার একমাত্র চিড়িয়াখানা এটিই, যা মিনি থেকে স্মল জ়ু–তে রূপান্তরিত হয়েছে। কয়েক বছর আগে রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এই জ়ু–র ভার্চুয়াল উদ্বোধন করেন। প্রসঙ্গত, গড়চুমুকে ১২.৪৩ হেক্টর জায়গাজুড়ে গড়চুমুক চিড়িয়াখানার অবস্থান।
জানা যায়, রাজ্যে তৎকালীন সিদ্ধার্থশংকর রায় মুখ্যমন্ত্রী থাকাকালীন, তদানীন্তন সেচমন্ত্রী প্রয়াত বরকত গনি খান চৌধুরীর উদ্যোগে গড়চুমুক এলাকায় হুগলি ও দামোদরের নদীর মিলনস্থলের কাছে ৫৮টি স্লুইস গেট নির্মাণ করা হয়। পরে, বাম সরকারের তদানীন্তন বনমন্ত্রী, প্রয়াত চিকিৎসক অম্বরীশ মুখোপাধ্যায়ের আমলে এই জায়গায় পর্যটনকেন্দ্রের পাশাপাশি একটি ডিয়ার পার্ক গড়ে তোলা হয়।
সরকার গঠনের পরে গড়চুমুক ডিয়ার পার্কের উন্নতির লক্ষ্যে কাজ শুরু করে তৃণমূল। বর্তমানে গড়চুমুক জ়ু–র অন্যতম আকর্ষণ রাজ্যপ্রাণী বাঘরোল। কর্তৃপক্ষের দাবি, এত সংখ্যায় বাঘরোল রাজ্যের কোনও চিড়িয়াখানায় নেই। এই তালিকায় সংযোজিত হতে চলেছে হায়না ও নেকড়ে। আর বাঘ দেখার অপেক্ষায় প্রহর গুনছেন পর্যটকরা।