আজকাল ওয়েবডেস্ক: খোদ বিজেপি বুথ লেভেল এজেন্টের (বিএলএ) বাড়িতেই মিলল ভুতুড়ে ভোটারের নাম। এসআইআর-এর আবহে এমন অদ্ভুত ঘটনা প্রকাশ্যে এসেছে নদিয়ার শান্তিপুর ব্লকে। যেখানে পাঁচ সদস্যের একটি পরিবারের বাড়িতে পৌঁছে গিয়েছে ছ’জনের এনুমারেশন ফর্ম।
পরিবারে ষষ্ঠ ভোটারের কোনও অস্তিত্বই নেই দাবি করে বিভ্রান্তিতে পড়েছেন ওই পরিবারের কর্তারাই। স্বভাবতই ঘটনাকে কেন্দ্র করে শুরু হয়েছে রাজনৈতিক টানাপোড়েন। যেখানে তৃণমূল কংগ্রেস কটাক্ষ করেছে 'সর্ষের মধ্যেই ভূত'। স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, ঘটনাটি ঘটেছে রানাঘাট উত্তর পশ্চিমের ৮৭ নম্বর বিধানসভার ৬০ নম্বর বুথ এলাকায়।
ওই বুথেরই বিজেপি বিএলএ গোবিন্দ রায়। তাঁর বাবা সুভাষচন্দ্র রায় (বয়স প্রায় ৭৫), মা, স্ত্রী এবং ভাই সব মিলিয়ে পরিবারে মোট সদস্য পাঁচ। কিন্তু সম্প্রতি তাঁদের বাড়িতে এসে পৌঁছয় ছ’জনের ফর্ম। সেখানেই দেখা যায়, সুভাষ রায়ের ‘তৃতীয় পুত্র’ হিসেবে শান্তনু রায় নামে এক অজ্ঞাত ব্যক্তির নাম যুক্ত হয়েছে। বার কোড স্ক্যান করলেও নির্বাচন কমিশনের তথ্য অনুযায়ী শান্তনুকে ওই বাড়ির তৃতীয় সন্তানের মর্যাদাই দেখাচ্ছে।
বাস্তবে সুভাষচন্দ্র রায়ের দুই ছেলেই আছে গোবিন্দ ও তাঁর ভাই। শান্তনু নামে কোনও সদস্য নেই পরিবারে। এমন নামে কোনও সদস্যের অস্তিত্ব নেই বলে দাবি সুভাষের। ফলে প্রশ্ন উঠছে, কীভাবে একটি সম্পূর্ণ অস্তিত্বহীন নাম ঢুকে পড়ল বিজেপি নেতার পরিবারের ভোটার ফর্মে?
গোবিন্দ রায়ের কথায়, “ফর্ম হাতে পাওয়ার পরই বুঝতে পারি আমাদের পরিবারে এক নতুন সদস্য ‘শান্তনু রায়’ দেখানো হয়েছে। বিষয়টি সম্পূর্ণই অজানা আমাদের কাছে। বরং এখন আশঙ্কা হচ্ছে, যদি এই ভুতুড়ে ব্যক্তিই কখনও পরিবারের সদস্য হিসেবে স্বীকৃতি পেয়ে যায়, তাহলে ভবিষ্যতে সম্পত্তি নিয়ে বিরাট সমস্যার সৃষ্টি হতে পারে।”
পরিবারের দাবি, তাঁরা বাকি পাঁচজনের ফর্ম জমা দিলেও এই ভুল ফর্ম জমা দেননি। কারণ ঘটনাটি তাঁদের কাছেও রহস্যময়। স্থানীয় বিএলও আশা মণ্ডলও বিষয়টি নিয়ে বিস্মিত। তাঁর বক্তব্য, “ওই নামে পরিবারের কোনও সদস্য নেই এটা আমি নিশ্চিত জানি। কিন্তু কীভাবে নামটি তাঁদের পরিবারের নথিতে ঢুকল, তা স্পষ্ট নয়। আমি বারবার ফর্মটি ফেরত চাইছি, কিন্তু পরিবার সেটি জমা দিচ্ছে না।”
ঘটনাকে ঘিরে তৃণমূলের আক্রমণ আরও জোরদার হয়েছে। নবলা পঞ্চায়েতের প্রধান তথা তৃণমূল নেতা সুদীপ প্রামাণিক বলেন, “বিজেপির বিএলএ হয়েও কীভাবে নিজের পরিবারের ভোটার তালিকা সম্পর্কে এতদিন অজ্ঞ ছিলেন? বাইরে বসে এসআইআর নিয়ে যতই প্রশ্ন তুলুন, তাঁদের নিজেদের বাড়িতেই ভুতুড়ে ভোটারের নাম ঢুকে গিয়েছে এটা মানুষ দেখেই বিচার করবে।” ঘটনার জেরে অতিরিক্ত এসআইআর ফর্ম নিয়ে নতুন করে সংশয় তৈরি হয়েছে সাধারণ মানুষের মধ্যেও। যদিও এ বিষয়ে শান্তিপুরের বিডিও সন্দীপ ঘোষ বিষয়টি তদন্তের আশ্বাস দিয়েছেন।