বাসুদেব চট্টোপাধ্য়ায় ও কিরণ মান্না: রাজ্য পুলিসের কনস্টেবল নিয়োগের (West Bengal Police Recruitment) পরীক্ষায় অর্থের বিনিময়ে প্রশ্ন ফাঁসের একটি বড়সড় চক্রের হদিশ। বর্ধমান, মালদহ, নদীয়া ও মুর্শিদাবাদ জেলায় ছড়িয়ে রয়েছে চক্রটি (West Bengal Police Recruitment Scam)। এই ঘটনায় ১০ জনকে গ্রেফতার করেছে বর্ধমান থানার পুলিস (question paper leak)। ধৃতদের কাছ থেকে বেশ কয়েকটি মোবাইল ফোন বাজেয়াপ্ত করা হয়েছে। ধৃতদের মধ্যে বিএসএফের এক জওয়ানও রয়েছে। ধৃতদের নাম সুজিত প্রামাণিক, কৌশিক ঘোষ, সুরজিৎ অধিকারী, কৌশিক চট্টোপাধ্যায়, সঞ্জু সরকার, রাকেশ ঘোষ, করুণাময় মাহাত, রাধাকান্ত কর্মকার, দিব্যেন্দু মাহাত ও অভিষেক মাহাত। কৌশিক ঘোষ বিএসএফের জওয়ান। ধৃতদের মধ্যে সুজিতের বাড়ি মালদহ জেলার বামুনগোলা থানার ঝকলডাঙায়। কৌশিক ঘোষের বাড়ি নদীয়ার শান্তিপুর থানা এলাকায়। কৌশিক চট্টোপাধ্যায়, সঞ্জু ও সুরজিতের বাড়ি নদীয়ার চাকদহ থানা এলাকায়। বাকিদের বাড়ি নদীয়ার বিভিন্ন এলাকায়।
পুলিস সূত্রে জানা গিয়েছে, রবিবার রাজ্যে কনস্টেবল নিয়োগের পরীক্ষার আগেই পুলিস রিক্রুটমেন্ট বোর্ডের কাছে শনিবার খবর আসে যে, পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁসের বিষয়ে একটি চক্র সক্রিয়। চক্রটি নদীয়া থেকে বর্ধমানে ট্রেনে চেপে আসছে। চক্রটিকে ধরার জন্য সক্রিয় হতে বর্ধমান থানা ও জিআরপিকে জানানো হয়। সেইমতো রাতেই বর্ধমান স্টেশনের প্ল্যাটফর্ম থেকে সুরজিৎ, কৌশিক চট্টোপাধ্যায় ও সঞ্জু সরকারকে ধরা হয়। রাতে তারা পূর্বাঞ্চল এক্সপ্রেসে চেপে বর্ধমানে আসে। সেখানে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদের পর তাদের বর্ধমানের সাইবার থানায় আনা হয়। তিনজনকে টানা জিজ্ঞাসাবাদেই তারা জানায় যে, কনস্টেবল নিয়োগের প্রশ্নপত্র পেতেই তারা বর্ধমানে এসেছে। টাকার বিনিময়ে প্রশ্নপত্র বিভিন্নজনের কাছে পৌঁছনোর পরিকল্পনা রয়েছে তাদের। তারা আরও জানায়, মুর্শিদাবাদের একজন প্রশ্নপত্র পাওয়ার ব্যাপারে তাদের পরিচালনা করছে। তাদের কাছ থেকে মাধ্যমিক পরীক্ষার অ্যাডমিট কার্ড, মার্কশিট ও ১০ হাজার টাকা নিয়েছে মুর্শিদাবাদের সেই বাসিন্দা। এই চক্রে বীরভূমের মীর হাবিব, নদীয়ার জ্যোতিকল্যাণ বিশ্বাস এবং পূর্ব বর্ধমানের আসানুর মণ্ডলও রয়েছে। এর আগেও তারা বিভিন্ন নিয়োগের পরীক্ষায় জালিয়াতি করেছে বলে তিনজন পুলিসের কাছে স্বীকার করে। এরপরই তাদের মোবাইল ফোনগুলি পুলিস বাজেয়াপ্ত করে। হোয়াটস অ্যাপ চ্যাটও পুলিস পরীক্ষা করে। তা থেকে প্রশ্নপত্র ফাঁসে তিনজনের জড়িত থাকার ব্যাপারে নিশ্চিত হয় পুলিস। এই ঘটনায় বর্ধমান থানায় অভিযোগ দায়ের হয়।
এবার এই তিনজনকে জিজ্ঞাসাবাদ করে পাওয়া তথ্যের ভিত্তিতে রবিবার ভোরে পশ্চিম বর্ধমানের বুদবুদ থানার কলমডাঙায় হানা দেয় পুলিস। সেখান থেকে কৌশিক ঘোষ, রাকেশ, সুজিত, দিব্যেন্দু, রাধাকান্ত, করুণাময় ও অভিষেককে পাকড়াও করে পুলিস। তাদের কাছ থেকেও মোবাইল ফোন বাজেয়াপ্ত করা হয়। কৌশিকের মোবাইল থেকে প্রশ্নপত্র ফাঁসের বিষয়ে বেশকিছু ডিজিটাল তথ্য পায় পুলিস। দীর্ঘক্ষণ জিজ্ঞাসাবাদের পর এই ঘটনায় বিএসএফ জওয়ান কৌশিক ও সুজিত মূল পাণ্ডা বলে বুঝতে পারে পুলিস। প্রশ্নপত্র ফাঁস চক্রে আরও বেশ কয়েকজন জড়িত বলেও তারা পুলিসকে জানায়। ধৃতদের রবিবারই বর্ধমান সিজেএম আদালতে পেশ করা হয়।
ওদিকে রাজ্য পুলিসে চাকরির পরীক্ষার আগেই দীঘার হোটেল থেকেও গ্রেফতার দালাল চক্র। দীঘার হোটেলে আত্মগোপন ছিল ৭ দালাল। গোপন সূত্রে খবর পেয়ে তাদের গ্রেফতার করল কলকাতা এসটিএফ। রবিবার ছিল রাজ্য পুলিসে চাকরির পরীক্ষার দিন। সেই পরীক্ষার প্রশ্নপত্র আগে থেকে তুলে দেওয়ার জন্য বিভিন্ন জেলার প্রায় ৩০ থেকে ৩৫ জন পরীক্ষার্থীকে ডেকে পাঠিয়েছিল এই দালাল চক্র। রবিবার ভোর রাত থেকেই দীঘার একটি হোটেলে অভিযান চালিয়ে এসটিএফ-এর একটি দল এই ৭ দালালকে গ্রেফতার করে। আজ ধৃতদের কাঁথি আদালতে পেশ করা হয়। এর পাশাপাশি ৩০ জন পরীক্ষার্থীকে আটক করেও জিজ্ঞাসাবাদ চালাচ্ছে পুলিস।