৭মাসে পশ্চিম মেদিনীপুরে আক্রান্ত শতাধিক! বিশ্ব এডস দিবসে স্বাস্থ্যদপ্তরের পরিসংখ্যানে উদ্বেগ
প্রতিদিন | ০১ ডিসেম্বর ২০২৫
সম্যক খান, মেদিনীপুর: সরকারি হিসেবে গত সাত মাসে কেবলমাত্র পশ্চিম মেদিনীপুরেই এডস আক্রান্ত শতাধিক রোগী। ঘাটাল, খড়গপুর ও মেদিনীপুর সদরেই এই রোগের প্রভাব বেশি বলা যেতেই পারে। গর্ভবতীদের ক্ষেত্রেও এই হার রীতিমতো উদ্বেগজনক। বিগত বছরগুলির তুলনায় কম হলেও বিষয়টি যথেষ্ট চিন্তার বলে মনে করছে জেলা স্বাস্থ্যদপ্তর।
স্বাস্থ্য দপ্তরের রিপোর্ট অনুযায়ী, চলতি বছরের এপ্রিল থেকে অক্টোবর মাস পর্যন্ত অর্থাৎ গত সাত মাসে ৩২,৪৫৩ জনের নমুনা পরীক্ষা করা হয়। তার মধ্যে ১০৬ জনের শরীরে এইচআইভি পজিটিভ জীবাণু পাওয়া যায়। প্রায় সকলেই এই মুহূর্তে চিকিৎসাধীন। ওই সময়কালে ৪৭২০ গর্ভবতীর রক্ত পরীক্ষা করা হয়। যার মধ্যে ১৩ জনের নমুনায় এইচআইভি পজিটিভ পাওয়া গিয়েছে। শুধু তাই নয়, এই সময়কালে ৬ জন গর্ভবতী সিফিলিসেরও শিকার হয়েছেন। ২০২৪-২৫ অর্থবর্ষে ডেবরায় ১৬, ঘাটালে ২৪, খড়গপুরে ২৮ এবং মেদিনীপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ৭৩ জনের রক্তের নমুনায় এইচআইভি পজিটিভ জীবাণু ধরা পড়ে। এবছর অক্টোবর পর্যন্ত সেই সংখ্যা যথাক্রমে ডেবরায় ৫, ঘাটালে ১৮, খড়গপুরে ১৫ ও মেদিনীপুরে ৩৫।
একসময় এডসের আঁতুড়ঘর বলা হত ঘাটাল মহকুমাকে। অভিযোগের আঙুল তোলা হত সেখানকার ‘পরিযায়ী শ্রমিক’দের দিকে। মূলত, সোনা ও জরির কারবারি তথা শ্রমিকদের দায়ী করা হত। কারণ, তাঁদের মধ্যেই এইচআইভি পজিটিভের সংখ্যা বেশি পাওয়া যেত বলে অভিযোগ উঠত। জেলার মধ্যে ঘাটাল মহকুমা থেকেই দলে দলে যুবকরা মুম্বই ও দিল্লিতে ঘাঁটি গেড়ে সোনা-রুপো ও জরির কারিগর হিসাবে প্রসিদ্ধিলাভ করেছেন। দিনের পর দিন, মাসের পর মাস এইসব পরিযায়ী শ্রমিকদের ঘর সংসার ছেড়ে ভিন রাজ্যে পড়ে থাকতে হয়। অনেকেই এতে বিপথগামী হন। যদিও অন্যান্য কয়েকটি কারণেও এডস রোগ জেলায় মেদিনীপুর ছড়ানোর আশঙ্কা আছে। তবে সেই সংখ্যা এখন অনেকটাই কমেছে।
এবিষয়ে জেলা মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক সৌম্যশংকর সারেঙ্গী বলেছেন, চিহ্নিত এডস রোগীদের প্রায় সকলকেই চিকিৎসার আওতায় আনা হয়েছে। নিয়মিত তাঁদের চিকিৎসা চলছে। এডস রোগ নিয়ন্ত্রণে তাঁরা বছরভর সচেতনতা শিবির থেকে শুরু করে নানা কর্মসূচি করেন। আরও বেশি করে এবিষয়ে উদ্যোগ নেওয়ার কথাও জানিয়েছেন তিনি। এগিয়ে এসেছে সম্পূর্ণা, স্পর্শ, অগ্রগামী মহিলা ও শিশু মঙ্গল সমিতির মতো স্বেচ্ছাসেবী সংস্থাগুলিও। তারাও স্বাস্থ্য দপ্তরের সঙ্গে যোগাযোগ রেখে বিভিন্ন জায়গায় শিবির করে জনগণকে সচেতন করে চলেছে।