অংশুপ্রতিম পাল, খড়গপুর: দূরপাল্লার ট্রেনে এবার সিসিটিভি ক্যামেরা বসানোর চিন্তাভাবনা শুরু করেছে আরপিএফ। যাত্রী নিরাপত্তার স্বার্থে এই ভাবনা বলে আরপিএফের খড়গপুর ডিভিশন সূত্রে জানা গিয়েছে। তবে ইতিমধ্যে চলন্ত ট্রেনের মধ্যে নজরদারি বাড়ানোর লক্ষ্যে বিভিন্ন দূরপাল্লার ট্রেনে সিসিটিভি ক্যামেরা বসানোর কাজ শুরু করে দিয়েছে রেল কর্তৃপক্ষ। আরপিএফ সূত্রে জানা গিয়েছে, আগামী মাস ছয়েকের মধ্যেই রেলের খড়গপুর ডিভিশনের প্রতিটি দূরপাল্লার ট্রেনের কামরায় সিসিটিভি ক্যামেরা বসতে চলেছে। তার কাজ ইতিমধ্যে শুরু হয়ে গিয়েছে। ডিভিশনের সাঁতরাগাছি রেল কোচ ডিপোতে খড়গপুর ডিভিশনের অধীনে থাকা বিভিন্ন দূরপাল্লার ট্রেনের কামরায় সিসিটিভি ক্যামেরা বসানোর কাজ শুরু হয়ে গিয়েছে। তার সঙ্গে নতুন করে যে সমস্ত এলএইচবি ও আইসিএফ কোচ তৈরি হচ্ছে, সেখানেও সিসিটিভি ক্যামেরা বসানো হচ্ছে বলে জানা গিয়েছে।
জানা গিয়েছে, প্রাথমিকভাবে প্রতিটি ট্রেনের ভিতরে প্রতিটি কামরায় চারটি করে সিসিটিভি ক্যামেরা বসানো হবে। আরপিএফের দাবি, এর মাধ্যমে ট্রেনের ভিতরে যে কোনও ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনার উপর নজরদারি করতে সুবিধা হবে। এমনকী, দুষ্কৃতীদের চিহ্নিত করতে সুবিধা হবে। বস্তুত, পর্যাপ্ত বাহিনীর অভাবে অধিকাংশ ট্রেনের ভিতরে এসকর্ট দিতে পারছে না আরপিএফ। অরক্ষিত ট্রেনে বারবার অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটছে বলে অভিযোগ উঠেছে। বিপদের মুখে পড়তে হচ্ছে রেলযাত্রীদের। গত সপ্তাহে এরকমই একটি ঘটনা ঘটে গিয়েছে ধৌলি এক্সপ্রেসে। ছিনতাইয়ে বাধা দিতে গিয়ে গুরুতর জখম হতে হয়েছে সুরমা হাজরা নামে এক মহিলা যাত্রীকে। ট্রেনের শৌচাগার থেকে বেরিয়ে হাত ধুয়ে সিটে যাওয়ার সময় দুই দুষ্কৃতী তাঁর গলার সোনার হার ছিনতাইয়ের চেষ্টা করে। বাধা দিতে গিয়ে চলন্ত ট্রেন থেকে পড়ে গিয়ে তাঁর ডান হাতটি খোয়াতে হয়েছে।
আরপিএফ থাকলে এই ঘটনা এড়ানো যেত বলেই সকলের অভিমত। আর সেই ঘটনার পর থেকেই রেলযাত্রার নিরাপত্তা নিয়ে বড়সড় প্রশ্ন উঠে গিয়েছে। তাই পরিস্থিতি মোকাবিলায় ট্রেনের কামরার ভিতরে সিসিটিভি ক্যামেরা বসানোর কাজে বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। দক্ষিণ-পূর্ব রেলওয়ের খড়গপুর ডিভিশনের আরপিএফের সিনিয়র ডিভিশনাল সিকিউরিটি কমিশনার প্রকাশকুমার পান্ডা বললেন, ‘‘নজরদারি নিয়মিত চলে ট্রেনে। কিন্তু সব ট্রেনে কর্মীর অভাবে এসকর্ট দেওয়া যায় না। তাই দূরপাল্লার ট্রেনগুলির কামরার ভিতরে সিসিটিভি ক্যামেরা বসানোর কাজ শুরু হয়েছে। রেল বোর্ডের লক্ষ্য, আগামী ছয় মাসের মধ্যে পুরো কাজ শেষ করার। আমাদের ডিভিশনে সাঁতরাগাছি রেল ডিপোতে এই কাজ চলছে।’’
এদিকে, রেলসূত্রে জানা গিয়েছে, মাস চারেক আগেই রেল বোর্ডের পক্ষ থেকে এই ব্যাপারে একটি নির্দেশিকা এসেছিল। তাতে ঠিক হয়েছে দেশের প্রতিটি ট্রেনেই কামরার ভিতরে সিসিটিভি ক্যামেরা বসানো হবে। দেশজুড়ে মোট ৭৪ হাজার ট্রেনের কামরার ভিতরে সিসিটিভি ক্যামেরা বসানো হবে বলে জানা গিয়েছে। তবে শুধু দূরপাল্লার ট্রেন নয়, লোকাল ট্রেনগুলিতেও অদূর ভবিষ্যতে কামরায় সিসিটিভি ক্যামেরা বসানো হবে বলে জানা গিয়েছে। কারণ, লোকাল ট্রেনে আরপিএফের এসকর্ট থাকে না বললেই চলে। ফলে লোকাল ট্রেনে যাত্রীদের নিরাপত্তা নিয়ে একটি আশঙ্কা থেকেই যায়। আরপিএফের খড়গপুর ডিভিশনের সিনিয়র সিকিউরিটি কমিশনার প্রকাশ কুমার পান্ডা বললেন, ‘‘এখন অগ্রাধিকারের ভিত্তিতে দূরপাল্লার ট্রেনগুলির কামরার ভিতরে সিসিটিভি ক্যামেরা বসানো হচ্ছে। পরবর্তীকালে লোকাল ট্রেনেও সিসিটিভি ক্যামেরা বসানো হবে।’’ যদিও এই কাজ কবে থেকে শুরু হবে, সেটি তিনি এখনই জানাতে রাজি হলেন না।