• দলিত যুবক খুনের পিছনে পুলিশি উস্কানি? গুরুতর অভিযোগ প্রেমিকের মৃতদেহকে বিয়ে করা আঁচলের
    এই সময় | ০১ ডিসেম্বর ২০২৫
  • মহারাষ্ট্রের নান্দেদে জাতিগত বিদ্বেষের শিকার হয়েছেন ২০ বছরের যুবক সক্ষম তাটে। গত বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় তাঁকে হত্যা করেছে তাঁর প্রেমিকা আঁচল মামিদ্বারের বাবা ও ভাইরা বলে অভিযোগ। এর পরের দিন প্রেমিকের মৃতদেহকেই বিয়ে করেছিলেন আঁচল। সোমবার এই মর্মান্তিক ঘটনার প্রেক্ষিতে দুই পুলিশকর্মীর বিরুদ্ধে গুরুতর অভিযোগ করলেন আঁচল। তাঁর অভিযোগ, সক্ষমকে পিটিয়ে খুন করার জন্য তাঁর ভাইদের নাকি ওই পুলিশকর্মীরাই উস্কানি দিয়েছিলেন।

    এক সর্বভারতীয় সংবাদমাধ্যমকে আঁচল জানিয়েছেন, তাঁর পরিবার তাঁদের সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করেছে। তাঁর দাবি, প্রথমে তাঁদের সম্পর্ক মেনে নেয়নি তাঁর পরিবার। এমনকী তাঁর বাবা নাকি এও বলেছিলেন, ‘আমরা গ্যাংস্টার পরিবার। সক্ষমের সাহস হয় কোথা থেকে আমার মেয়ের সঙ্গে কথা বলার?’ মূল আপত্তি ছিল জাতের পার্থক্য। মমিদ্বাররা হলেন বিশেষ অনগ্রসর জাতি। অন্যদিকে সক্ষম তাটেরা ছিলেন আঁচলের পরিবারের ভাষায় ‘জয় ভিমওয়ালা’ অর্থাৎ, দলিত।

    পরে ধীরে ধীরে তাদের সম্পর্ক মেনে নেওয়ার আশ্বাস দিয়েছিল তাঁর পরিবার। সক্ষমের সঙ্গে স্বাভাবিক ভাবে মেলামেশা শুরু করেছিল তাঁর পরিবারের সদস্যরা। আঁচলের বাবা নাকি সক্ষমকে বলেছিলেন, আঁচলকে বিয়ে করতে গেলে তাঁকে ধর্ম বদলে হিন্দু ধর্ম গ্রহণ করতে হবে। তাতে রাজিও হয়েছিল সক্ষম। আঁচল বলেছেন, ‘আমার ভাইয়েরা আমায় বলেছিল ওরাই আমাদের বিয়ের আয়োজন করবে। কিন্তু শেষ মুহূর্তে ওরা আমাদের সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করেছে।’

    পরিবারের সদস্যদের বিরুদ্ধে বিশ্বাসঘাতকতার অভিযোগ করার পাশাপাশি, ধীরজ কোমলওয়ার এবং মাহিত আসারওয়ার নামে স্থানীয় থানার দুই পুলিশকর্মীর বিরুদ্ধে তাঁর ভাইদের হত্যা করতে উস্কানি দেওয়ার গুরুতর অভিযোগও করেছেন আঁচল। তাঁর দাবি, খুনের দিন সকালে তাঁর ছোট ভাই তাঁকে থানায় নিয়ে গিয়ে সক্ষমের বিরুদ্ধে মিথ্যা অভিযোগ দায়ের করতে বলেছিল। আঁচল তাতে রাজি হননি।

    আঁচলের অভিযোগ এর পরেই থানায় উপস্থিত ওই দুই পুলিশকর্মী তাঁর ভাইকে বলেছিল, ‘তুমি এতজনকে মেরে জেলে গিয়েছ। তোমার বোনকে যে ফাঁসিয়েছে, তাকে খুন করছ না কেন?’ জবাবে আঁচলের ভাই নাকি বলেছিলেন, ‘ঠিক আছে, আমি সন্ধ্যার মধ্যে ওকে মেরে ফেলব। তার পরেই তোমাদের কাছে আসব।’

    এর পরেই বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় সক্ষমকে বেধড়ক মারধর করে আঁচলের ভাই হিমেশ ও সাহিল এবং তাঁর বাবা গজানন মমিদ্বার। হিমেশের বিরুদ্ধে সক্ষমকে গুলি করার অভিযোগও রয়েছে। গুলিটি সক্ষমের পাঁজরে লেগেছিল। শেষে হিমেশ একটি টালি দিয়ে সক্ষমের মাথায় সজোরে আঘাত করে। যার ফলে ঘটনাস্থলেই তাঁর মৃত্যু হয়। এই ঘটনায় হিমেশ, সাহিল এবং তাঁদের বাবা গজানন মমিদ্বার-সহ আরও তিনজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তাঁদের বিরুদ্ধে হত্যা, এসসি/এসটি (নৃশংসতা প্রতিরোধ) আইন এবং অস্ত্র আইনে মামলা দায়ের হয়েছে।

    আঁচল জানিয়েছেন, তাঁর পরিবার তাঁকে বলেছে, তার জন্য বাড়ির দরজা চিরতরে বন্ধ। এই অবস্থায় সক্ষমের পরিবার তাঁকে গ্রহণ করেছে এবং তিনি চিরকাল তাঁদের সঙ্গেই থাকবেন বলে জানিয়েছেন। তিনি আরও জানিয়েছেন দোষীদের ফাঁসি চান তিনি। তিনি জানিয়েছেন, তিনি ন্যায়বিচার পাবেনই। এই বিষয়ে তিনি নিশ্চিত। আঁচল বলেছেন, ‘এত লোক আমার সঙ্গে আছে। জাতপাতের কারণে কাউকে হত্যা করা ঠিক নয়।’

  • Link to this news (এই সময়)