আজকাল ওয়েবডেস্ক: নদিয়ার নবদ্বীপ স্বরূপগঞ্জ পঞ্চায়েতের রেল কলোনি এলাকায় শোরগোল পড়ে গিয়েছে সদ্যোজাত এক শিশুকে ঘিরে। সোমবার ভোরের নিস্তব্ধতা ভেঙে বাড়ির লোকজন ও প্রতিবেশীরা হঠাৎই শুনতে পান শিশুর কান্নার শব্দ। পরে খোঁজ করতে গিয়ে জানা যায় সেই কান্না আসছে স্থানীয় পঞ্চায়েত সদস্য নির্মল ভৌমিকের বাড়ির শৌচাগার থেকে। অভিযোগ, অন্ধকার রাতে কে বা কারা সেখানে রক্তাক্ত অবস্থায় ফেলে রেখে গিয়েছে সদ্যোজাত একটি শিশুকে। কান্নার শব্দ শুনে মুহূর্তেই ছুটে আসেন প্রতিবেশীরা। প্রথমে কিছুটা হকচকিয়ে যান সকলেই। এরপর শিশুটিকে উদ্ধার করা হয়। উদ্ধারের পর তাঁরা জানান, শৌচাগারের ভিতরে পড়ে থাকা শিশুটির চারপাশেই সারমেয়রা ছিল। যারা সারা রাত বাচ্চাটিকে পাহারা দিয়ে রেখেছিল। যা অবাক করেছে স্থানীয় বাসিন্দাদের।
ঘটনা প্রসঙ্গে স্থানীয় বাসিন্দা দীনবন্ধু দেবনাথ বলেন, যেখানে এই ঘটনা ঘটেছে সেই এলাকায় শিয়ালের প্রচুর উৎপাত রয়েছে। অন্ধকার নামলেই তাদের আনাগোনা শুরু হয়। বাসিন্দারা সকলেই তাদের চলাফেরা করতে দেখেন। শিশুটি যদি একা পড়ে থাকত তাহলে তার বিপদ হওয়ার সমূহ সম্ভাবনা ছিল। কিন্তু সারমেয়দের সজাগ উপস্থিতির কারণেই শিশুটি অক্ষত অবস্থায় উদ্ধার সম্ভব হয়েছে। তাঁর মতে, যেই শিশুটিকে ফেলে রেখে যাক না কেন, তাদের বাড়ি সম্ভবত খুব দূরে নয়, কাছাকাছিই হবে। তদন্তে করলেই সঠিক ঘটনা সামনে আসবে।
উদ্ধার হওয়া শিশুটিকে প্রথমে নবদ্বীপ মহেশগঞ্জ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। পরে সেখান থেকে কৃষ্ণনগর সদর হাসপাতালে স্থানান্তরিত করা হয়। হাসপাতাল সূত্রে জানা গিয়েছে, শিশুটি আপাতত সুস্থ রয়েছে এবং প্রাথমিক চিকিৎসার পর তাকে যথাযথ সুরক্ষার জন্য 'চাইল্ডলাইন'-এর কর্তৃপক্ষের হাতে তুলে দেওয়া হবে। এদিকে, কে বা কারা এই নবজাতককে ফেলে রেখে গিয়েছে তা এখনও স্পষ্ট নয়। খবর দেওয়া হয়েছে নবদ্বীপ থানায়। গোটা ঘটনার তদন্ত শুরু করেছে পুলিশ। খোঁজ নিচ্ছে ওই এলাকা এবং আশেপাশের এলাকায়। তবে এই ঘটনা নিঃসন্দেহে সারমেয়দের একটি স্নেহের দৃষ্টান্ত হয়ে থাকবে। যেভাবে তারা শিশুটিকে পাহারা দিয়ে রেখেছিল তা কোনো প্রশংসার অপেক্ষায় থাকে না। পাশাপাশি খবর পাওয়ার পর যেভাবে এলাকার বাসিন্দারা ছুটে এসে শিশুটির যথোপযুক্ত যত্নের ব্যবস্থা করেছেন সেই বিষয়টিও প্রশংসনীয়। তবে এত কাণ্ডের পরেও ওই সারমেয়দের ভিতরে কোনো ভ্রুক্ষেপ নেই। এদিন এলাকায় গিয়ে দেখা গিয়েছে উদাস দৃষ্টিতে তারা এদিক ওদিক ঘুরে বেড়াচ্ছে বা গা এলিয়ে রোদ পোহাচ্ছে। মাঝে মাঝেই ভিড় দেখে এদিক ওদিক তাকিয়ে খুঁজছে কেউ কোনো বিস্কুট বা অন্য কিছু খাবার দিয়ে যায় কি না।