• পশ্চিমবঙ্গ পুলিশ নিয়োগ পরীক্ষার র‍্যাকেট ধানবাদেও
    দৈনিক স্টেটসম্যান | ০২ ডিসেম্বর ২০২৫
  • পশ্চিমবঙ্গে শিক্ষক নিয়োগ দুর্নীতির রেশ কাটতে না কাটতেই ফের নতুন বিতর্ক। এবার রাজ্য পুলিশের চাকরির লোভ দেখিয়ে মোটা টাকার বিনিময়ে তৈরি হয়েছিল এক ভয়ংকর প্রতারণা চক্র। সেই চক্রের শেকড় এবার পৌঁছে গেল ঝাড়খণ্ডের ধানবাদ পর্যন্ত। রবিবার পুলিশের গোপন সূত্রের তথ্যের ভিত্তিতে ঝাড়খণ্ড পুলিশ ধানবাদের ঝরিয়া এলাকায় বিশেষ অভিযান চালিয়ে উদ্ধার করেছে বিপুল পরিমাণ নথি, মোবাইল ফোন, পরীক্ষার অ্যাডমিট কার্ড— আর গ্রেপ্তার করেছে ১৭ জনকে।

    প্রাথমিক তদন্তে উঠে এসেছে বিস্ময়কর তথ্য— ধানবাদের একটি লজে বসেই সাজানো হচ্ছিল পশ্চিমবঙ্গ পুলিশ কনস্টেবল নিয়োগ পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ও উত্তর। পশ্চিমবঙ্গের নানা জেলা— নদিয়া, বীরভূম, রানাঘাট, চাকদাহ, হাসখালি— এসব জায়গা থেকে পরীক্ষার্থীদের লজে এনে দিন কয়েক আগেই তাঁদের কাছ থেকে অ্যাডমিট কার্ড ও মোবাইল ফোন কেড়ে নেওয়া হয়েছিল। তদন্তকারীরা জানতে পেরেছেন, প্রতিটি পরীক্ষার্থীর জন্য নেওয়া হতো ২ থেকে ৫ লক্ষ টাকা। পরিবর্তে পরীক্ষার আগে তাঁদের ‘উত্তরপত্র’ তৈরি করে দেওয়া হতো।

    Advertisement

    অভিযানে উদ্ধার হয়েছে—





    – বহু পরিচয়পত্র

    – ব্যাঙ্ক সংক্রান্ত নথি

    – স্মার্ট ঘড়ি

    – একাধিক রেজিস্টার

    – প্রশ্ন-উত্তরের নোট ও বিভিন্ন এডুকেশন সার্টিফিকেট

    এই লজটিকেই তদন্তকারীরা বলছেন ‘চলমান পরীক্ষাকেন্দ্র’। কারণ একই জায়গায় ১০০–রও বেশি পরীক্ষার্থীকে থাকার ব্যবস্থা করা হয়েছিল বলে লজের রেজিস্টারে পাওয়া গেছে।

    ধানবাদ সিটি এসপি ঋত্বিক শ্রীবাস্তব বলেন,

    ‘রবিবার ধৃতদের ধরা গেলেও লজে কোনও পরীক্ষার্থী পাওয়া যায়নি। কিন্তু রেজিস্টার খতিয়ে দেখে প্রমাণ মিলেছে— ১০০–রও বেশি পরীক্ষার্থী সেখানে উঠেছিল। তারপরেই লজ মালিক-সহ ১৭ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়। ধৃতদের মধ্যে ১৬ জনই পশ্চিমবঙ্গের বাসিন্দা।’

    পুলিশ জানিয়েছে, ধৃতদের কয়েক দিন ধরে ঝরিয়ার ওই লজেই রাখা হয়েছিল। পরীক্ষার্থীদের এক জায়গায় জড়ো করে তাঁদের নথি আগে থেকেই নিজেরাই নিয়েছিল চক্রটি। তারপর সেখানে বসেই উত্তর তৈরি করে দেওয়ার প্রস্তুতি চলছিল।

    এই ঘটনায় পশ্চিমবঙ্গ পুলিশ–ঝাড়খণ্ড পুলিশের মধ্যে যৌথ তদন্ত শুরু হয়েছে। ধৃতদের জিজ্ঞাসাবাদ করতে পশ্চিমবঙ্গ পুলিশের একটি বিশেষ টিম ইতিমধ্যে ধানবাদ পৌঁছেছে।

    তদন্তের মূল প্রশ্ন তিনটি—

    ১. পশ্চিমবঙ্গের এই র‍্যাকেট কীভাবে ধানবাদে ঘাঁটি গেড়েছে?

    2. কত দিন ধরে এই প্রতারণা চক্র সক্রিয় ছিল?

    3. পুলিশের প্রকৃত প্রশ্নপত্র কীভাবে পাচার হচ্ছিল?

    পুলিশের শীর্ষ মহল মনে করছে, এটি কোনও ছোটখাট চক্রের কাজ নয়— এর পিছনে বড় মাথা থাকার সম্ভাবনা প্রবল।

    দুই রাজ্যের পুলিশই বলছে, ‘পুরো র‍্যাকেট দুরমুশ না হওয়া পর্যন্ত তদন্ত চলবে।’
  • Link to this news (দৈনিক স্টেটসম্যান)