নিজস্ব প্রতিনিধি, নয়াদিল্লি: ‘ড্রামা নেহি ডেলিভারি। নারা (স্লোগান) নেহি নীতি।’ বিরোধীরা সরকারের বিরুদ্ধে সরব হবে আন্দাজ করেই শীতকালীন অধিবেশনের প্রথম দিনেই সুর বেঁধে দিলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। সংসদ চত্বরে দাঁড়িয়ে বললেন, সংসদ নাটক করার জায়গা নয়। তার জন্য অন্য অনেক জায়গা রয়েছে। তাই হারের হতাশা কাটিয়ে জনস্বার্থে কাজ করুন। নিজস্ব স্টাইলে মোদির খোঁচা, কয়েকটি দল এখনও নির্বাচনে পরাজয় মেনে নিতে পারেনি। তবে লাগাতার হার সংসদে আলোচনার বিষয় হতে পারে না। উপহাসের সুরে বলেন, প্রয়োজনে ভোটে জেতার টোটকাও দিতে তৈরি আছি।
সরকার ‘কৌশলে’ বিরোধীদের মধ্যে বিভাজনের চেষ্টাও চালাল। ইশ্যু এসআইআর। সংসদ বিষয়কমন্ত্রী কিরেণ রিজিজু বলেন, স্রেফ ১২টি বিরোধী দল এসআইআর ইস্যু চাইলেই তো হবে না। তারাই সমগ্র বিরোধী নয়। আরও দল আছে। তাদের দাবি অন্য। সব বিবেচনা করেই ঠিক হবে কী নিয়ে আলোচনা হবে। যদিও রিজিজুকে চুপ করিয়ে দেন রাজ্যসভার বিরোধী দলনেতা তথা কংগ্রেস সভাপতি মল্লিকার্জুন খাড়্গে। বিজেপিকে চ্যালেঞ্জ ছুড়ে তাঁর মন্তব্য, আপনারা যত বেশি বিরোধীদের মধ্যে বিভাজনের চেষ্টা করবেন, আমরা ততই শক্তপোক্ত হব।
তৃণমূলের রাজ্যসভার দলনেতা ডেরেক ও’ব্রায়েনও সরকারের উদ্দেশে বলেন, আপনাদের কথা কেউ বিশ্বাস করে না। সর্বদলীয় বৈঠকে, কার্য উপদেষ্টা কমিটিতে তো বলেছিলেন, রবিবার রাত আটটার মধ্যে ফোন করে জানাবেন, সরকার এসআইআর নিয়ে আলোচনা করবে কি না। সেই ফোন তো এলোই না। কবে আসবে? সংসদের অধিবেশন শেষের পর?
সোমবার সংসদের শীতকালীন অধিবেশনের প্রথম দিনেই সংসদ উত্তাল হল। বিরোধীদের প্রতিবাদ, ওয়েলে নেমে বিক্ষোভ, রাজ্যসভা থেকে ওয়াক আউট, লোকসভা দফায় দফায় মুলতুবি। মোদির ‘নাটক’ মন্তব্যের সমালোচনায় সরব বিরোধীরা। প্রিয়াঙ্কা গান্ধীর প্রশ্ন, দূষণ কিংবা এসআইআরের মতো জরুরি বিষয় নিয়ে সংসদে আলোচনার দাবি কি নাটক? আসলে নাটক সেটাই যখন নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিদের জনস্বার্থের বিষয় নিয়ে কথা বলতে দেওয়া হয় না।
লোকসভায় তৃণমূলের দলনেতা অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, এসআইআর প্রক্রিয়ায় সাধারণ মানুষ এবং বুথ লেভেল অফিসার মিলিয়ে ৪০ জন মানুষ মারা গিয়েছেন। এর জবাব কেন্দ্রকে দিতেই হবে। তার জন্য লোকসভায় আলোচনা চাওয়াটাকে আজ নাটক বলছেন? নির্বাচন কমিশন এবং কেন্দ্রীয় সরকার দেশের ১৪০ কোটি মানুষকে লিখিত জানাক, এসআইআর প্রক্রিয়া হবে। কিন্তু তারপর আর কোনও অনুপ্রবেশকারী ভোটার থাকবে না। যদি থেকে যায় তাহলে নির্বাচন কমিশন এবং কেন্দ্রের সরকার ইস্তফা দেবে।
সংসদের যাবতীয় কাজ ফেলে এসআইআর নিয়ে আলোচনার দাবিতে এদিন বিরোধীরা জমা দিয়েছিল মুলতুবি প্রস্তাবের নোটিস। যদিও একটিও গ্রাহ্য হয়নি। তবে দমে যায়নি কংগ্রেস, তৃণমূল, সমাজবাদী পার্টি, ডিএমকে, শিবসেনা (উদ্ধবপন্থী) সহ সম্মিলিত বিরোধীরা। লোকসভায় নেমে আসেন ওয়েলে। স্লোগান ওঠে, ‘ভোট চোর গদ্দি ছোড়। এসআইআর ওয়াপস লো।’ সভায় তখন উপস্থিত রাজনাথ সিং, অমিত শাহ। লোকসভায় এদিন আসেননি মোদি। বিরোধীদের প্রতিবাদের জেরে প্রথমে দুবার, পরে সারাদিনের জন্য মুলতুবি। তারই মধ্যে হইচইয়ে সরকার পেশ করল তিন বিল।