নয়াদিল্লি: লাগাম টানা যাচ্ছে না ‘ডিজিট্যাল অ্যারেস্টে’। বিশ্বজুড়ে ক্রমেই বাড়ছে অনলাইন অপরাধ ও হ্যাকিং। সাইবার হানা ঠেকাতে তৎপর হয়েছে রাশিয়া সহ একাধিক দেশ। পিছিয়ে নেই ভারতও। কয়েকদিন আগে হোয়াটসঅ্যাপ-টেলিগ্রামের মতো চ্যাট অ্যাপে সিম লকিং বাধ্যতামূলক করেছে কেন্দ্রীয় টেলিকমিউনিকেশন দপ্তর। আর এবার গেল আরও এক ‘গোপন’ নির্দেশ—সব স্মার্টফোনে সরকারি সাইবার নিরাপত্তা অ্যাপ ইনস্টল করতেই হবে। সেই অ্যাপটি হল, ‘সঞ্চার সাথী’! তবে সাধারণ মানুষকে এনিয়ে ব্যতিব্যস্ত হতে হবে না। সূত্রের খবর, কেন্দ্রের তরফে ২৮ নভেম্বর এই নির্দেশিকা সরাসরি পাঠানো হয়েছে বড় বড় স্মার্টফোন নির্মাতা সংস্থাগুলির কাছে। জানানো হয়েছে, ফোন তৈরির পরেই তাতে ‘লোড’ করে দিতে হবে ‘সঞ্চার সাথী’। ৯০ থেকে ১২০ দিনের মধ্যে করতে হবে এই ব্যবস্থা। ‘প্রি-ইনস্টলড’ ওই অ্যাপ চাইলেও আনইনস্টল করা যাবে না। কেন্দ্রের দাবি, সাইবার জালিয়াতি মোকাবিলাতেই এই পদক্ষেপ।
যদিও বিষয়টিকে ভালো চোখে দেখছে না বিরোধীরা। উসকে গিয়েছে পেগাসাস সফটওয়্যার বিতর্ক! বিরোধী দলগুলির অভিযোগ, পেগাসাসের মতো বিশেষ এই অ্যাপও আসলে নজরদারির নয়া হাতিয়ার! প্রশ্ন উঠেছে, সুরক্ষা-নিরাপত্তার দোহাই দিয়ে এবার কি বিরোধী থেকে আম জনতা, সকলের গতিবিধি, আলাপ-আলোচনার উপরে নজর রাখবেন মোদি-শাহ? তৃণমূলের রাজ্যসভার সাংসদ ঋতব্রত বন্দ্যোপাধ্যায় তো স্পষ্ট বলেছেন, ‘এটা এক ধরনের আগ্রাসী ফ্যাসিবাদী মনোভাব। নজরদারি কায়েমের প্রয়াস। ফ্যাসিস্ট রাষ্ট্রগুলি এসব করে।’ কংগ্রেস নেতা কে সি বেণুগোপালের তোপ, ‘এটি নাগরিকদের প্রতিটি পদক্ষেপ, কথোপকথন ও সিদ্ধান্তে নজরদারির চেষ্টা।’ গত আগস্টে ফোনে ‘ম্যাক্স’ নামে একটি অ্যাপ বাধ্যতামূলকভাবে ইনস্টল করার নির্দেশ দিয়ে সমালোচনার মুখে পড়েছিল রাশিয়া। ব্যবহারকারীর নিরাপত্তার স্বার্থে এই ধরনের যে কোনও অ্যাপ বা সরকারি নির্দেশের বরাবর বিরোধিতা করেছে ‘অ্যাপল’ও। কেন্দ্রের নির্দেশের পর মার্কিন এই বহুজাতিক সংস্থা কী পদক্ষেপ নেয়, তা নিয়েও জল্পনা চলছে।
কেন্দ্রের এই সংক্রান্ত নির্দেশটি নির্দিষ্ট কিছু সংস্থাকে গোপনে পাঠানো হয়েছে। তাতে আরও বলা হয়েছে, এই মুহূর্তে যে সমস্ত ফোন বাজারে রয়েছে, সেগুলিকেও এর আওতায় আনতে হবে। কীভাবে? সফটওয়্যার আপডেটের মাধ্যমে আম জনতার স্মার্টফোনে ঢুকে পড়বে ‘সঞ্চার সাথী’ অ্যাপটি। কিন্তু কেন এই অ্যাপ প্রয়োজন? কেন্দ্রের দাবি, আইইএমআই নম্বর জালিয়াতি করে তৈরি নকল ফোন যাতে কেউ ব্যবহার না করে কিংবা ফোন চুরি করে কেউ যাতে অপরাধমূলক কোনও কাজে ব্যবহার করতে না পারে, তা নিশ্চিত করার জন্য এই অ্যাপের গুরুত্ব অপরিসীম। চলতি বছরের জানুয়ারি মাসে চালু হয়েছে ‘সঞ্চার সাথী’। তার পর থেকে এই অ্যাপের মাধ্যমে ৭ লক্ষেরও বেশি ফোন উদ্ধার করা সম্ভব হয়েছে। মোদি সরকারের এই পদক্ষেপ অত্যন্ত উদ্বেগজনক বলে মন্তব্য করেছেন প্রযুক্তি-আইন বিশেষজ্ঞরা। ইন্টারনেট অধিকারকর্মী মিশি চৌধুরী বলেন, ‘ব্যবহারকারীর সম্মতিকে কার্যত অর্থহীন করে ফেলছে সরকার।’ একনজরে ‘সঞ্চার সাথী’ টেলিকম দপ্তরের অফিশিয়াল মোবাইল অ্যাপ। মূলত মোবাইল ব্যবহারকারীদের সাইবার অপরাধ থেকে বাঁচাতে অ্যাপটি চালু করে মোদি সরকার।