সঞ্জিত সেনগুপ্ত, শিলিগুড়ি: শীত পড়তে শুরু করেছে। কিন্তু শিলিগুড়ি শহরের উপকণ্ঠে ফুলবাড়িতে দেখা নেই পরিযায়ী পাখিদের। প্রতি বছর নভেম্বর মাসের তৃতীয় সপ্তাহ থেকেই ঝাঁকে ঝাঁকে পরিযায়ী পাখি ভিড় করে ফুলবাড়ির মহানন্দা ব্যারেজে। এবার ডিসেম্বর মাস পড়ে গেলেও সেভাবে পরিযায়ী পাখিদের দেখা মিলছে না।
এনিয়ে চিন্তায় পড়েছেন ব্যারেজ সংলগ্ন খাবারের দোকানিরা। পরিযায়ী পাখিদের বাঁচাতেই ফুলবাড়ির এই চত্বরে পিকনিক বন্ধ করে দিয়েছে প্রশাসন। ডিজের বিকট শব্দের পাশাপাশি হই-হুল্লোড়, খাবার, জঞ্জাল ফেলে যে পরিবেশ তৈরি হত তাতে পরিযায়ী পাখি কমতে শুরু করেছিল। সেকারণেই এখানে পিকনিক বন্ধ করা হয়েছে। তাই এখানকার দোকানিরা প্রতি বছর পরিযায়ী পাখিদের প্রত্যাশায় বসে থাকেন। ঝাঁকে ঝাঁকে পাখি এলে তা দেখতে শিলিগুড়ির বিভিন্ন প্রান্ত তো বটেই বাইরে থেকেও বহু পর্যটক ভিড় করেন। তাতে তাঁদের বেচাকেনা বাড়ে।
এরকমই এক ফাস্টফুড বিক্রেতা ধনমতি কর্মকার বলেন, গত বছর এসময়ে প্রচুর পাখি এসে গিয়েছিল। কিন্তু এবার পাখি আসেনি বললেই চলে। কেন এমনটা হল বুঝতে পারছি না। যদি শেষ পর্যন্ত এবার পরিযায়ী পাখি কম আসে তাহলে আমাদের ব্যবসার ক্ষেত্রে অবশ্যই চিন্তার কারণ। ব্যারেজ সংলগ্ন আর এক দোকানি প্রফুল্ল সাহা ২৫ বছর ধরে এখানে দোকান করছেন। তিনিও বলেন, এবার পরিযায়ী পাখির সংখ্যা কম হবে মনে হচ্ছে। গত বছর এই সময়ে ঝাঁকে ঝাঁকে পরিযায়ী পাখি চলে এসেছিল।
শিলিগুড়ি শহর লাগোয়া ফুলবাড়ি ব্যারেজে পরিযায়ী পাখিদের রক্ষা করতে অনেকদিন আগেই এগিয়ে এসেছিল স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন। তারাই স্থানীয় মানুষদের বুঝিয়ে পাখি শিকার বন্ধ করে। পরিযায়ী পাখিদের বাঁচাতে গাছ লাগিয়ে আদর্শ পরিবেশ তৈরি করা থেকে শুরু করে নানা বিষয়ে পদক্ষেপ করে থাকে। সেই সংগঠনের সভাপতি দীপজ্যোতি চক্রবর্তী বলেন, গত বছর এই সময়ে প্রচুর পাখি চলে এসেছিল। এবার এখনও পর্যন্ত সেই তুলনায় খুব কমই পাখি এসেছে। পাখি নিয়ে কাজ করতে গিয়ে বুঝেছি এরা কোনও জায়গায় প্রাকৃতিক বিপর্যয় ঘটে থাকলে তার খবর পেয়ে যায়। সেই মতো তারা সেখানে উপস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করে। এবার যে বন্যা হয়ে গিয়েছে তাতে এই ফুলবাড়ি এলাকার নদীর দু’ধারে থাকা ঝোপঝাড় নষ্ট হয়ে গিয়েছে। আর এখানেই এদের এরা বাসস্থান গড়ে তোলে। ডিম পাড়ে, বাচ্চা বড় করে আবার ফিরে যায়। বন্যায় বাসস্থান ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার কথা হয়ত তারা বুঝতে পেরেছে। সে কারণেই হয়ত এখন পর্যন্ত বিগত বছরগুলির তুলনায় অনেক কম পাখি এসেছে। তবুও আশায় রয়েছি ঠান্ডা জাঁকিয়ে পড়তে শুরু করলেই পরিযায়ী পাখির ভিড় বাড়বে ফুলবাড়িতে।