দীর্ঘ লড়াইয়ের অবসান, জিআই ট্যাগ পেল দার্জিলিংয়ের ‘রানি’
বর্তমান | ০২ ডিসেম্বর ২০২৫
সুব্রত ধর, শিলিগুড়ি: দার্জিলিং চায়ের পর কমলা। যা পাহাড়ের ‘রানি’ হিসেবেই পরিচিত। এবার তাতে জুড়ল নয়া পালক! দীর্ঘ লড়াইয়ের পর দার্জিলিংয়ের কমলা লেবু পেল জিআই ট্যাগ। সম্প্রতি এই স্বীকৃতি প্রদান করে শিল্প ও বাণিজ্য মন্ত্রক। এতে উচ্ছ্বসিত জেলা প্রশাসন। তারা এখানকার কমলা রপ্তানিতে ঝাঁপাচ্ছে। এজন্য কাল, বুধবার কার্শিয়াংয়ে কমলা বাগান পরিদর্শনে যাবে শিলিগুড়ির দৈনিক নিয়ন্ত্রিত বাজার সমিতি। তারা চলতি সপ্তাহেই কমলার ৪৫০ কেজির কনসাইনমেন্ট পাঠাতে পারে কলকাতা সহ দক্ষিণবঙ্গে।
দার্জিলিংয়ের জেলাশাসক মণীশ মিশ্র বলেন, পাহাড়ের কমলার চাহিদা সর্বত্র রয়েছে। জিআই ট্যাগ মেলার পর এর চাহিদা আরও বাড়বে। তাই পাহাড়ের কমলা রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্তের মানুষের কাছে পৌঁছে দেওয়ার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এজন্যই দৈনিক নিয়ন্ত্রিত বাজার সমিতি সরাসরি কৃষকদের কাছ থেকে কমলা ক্রয়ের সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
ভৌগোলিক দিক দিয়ে রাজ্যের ব্যাতিক্রমী জেলাগুলির মধ্যে দার্জিলিং অন্যতম। পাহাড় ও সমতল নিয়ে এই জেলা। এখানকার অর্থকারী ফসলগুলির মধ্যে চা অন্যতম। যার সুনাম জগৎ বিখ্যাত। অনেকদিন আগেই এর জিআই ট্যাগ মিলেছে। এখানকার আরএকটি অর্থকারী ফসল কমলা। যার কদরও বিশ্বজোড়া।
প্রশাসন সূত্রে খবর, কমলার জিআই ট্যাগের জন্য ২০২১ সালে উদ্যোগী হয় উত্তরবঙ্গ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়। তারা এ ব্যাপারে কেন্দ্রীয় সরকারের কাছে আবেদন জানায়। ২০২২ সালের ২২ আগস্ট জিআই রেজিস্ট্রেশনে তাদের আবেদন গ্রহণ করা হয়। ২০২৪ সালে শুনানি হয়। মিরিকের কমলাও সেখানে প্রদর্শিত করা হয়। এরপর চার মাসের জন্য এ ব্যাপারে খসড়া প্রস্তাব প্রকাশ করে জিআই কর্তৃপক্ষ। তা নিয়ে কোনও মহল থেকে আপত্তি জমা পড়েনি। তাই চলতি বছরের ২৪ নভেম্বর দার্জিলিংয়ের কমলার নামে জিআই ট্যাগ দেওয়া হয়েছে।
উত্তরবঙ্গ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের অবসরপ্রাপ্ত অধ্যাপক তুলসীস্মরণ ঘিমিরে বলেন, কমলা লেবুর জিআইয়ের জন্য বহুদিন ধরে চেষ্টা চালাচ্ছিলাম। অবশেষে সেই স্বীকৃতি প্রদান করেছে কেন্দ্রীয় সরকার। এতে ভালো লাগছে।
এই খবর চাউর হতেই পাহাড়ের রানিকে নিয়ে বাজার ধরতে ঝাঁপাচ্ছে জেলা প্রশাসন। ইতিমধ্যে কৃষি বিপণন দপ্তর পাহাড়ের কমলা ন্যায্যদামে খরিদ করে বিভিন্ন প্রান্তের সুফল বাংলার স্টলে পাঠানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এজন্য শিলিগুড়ি দৈনিক নিয়ন্ত্রিত বাজার সমিতি প্রথম পর্যায়ে কার্শিয়াংয়ের মহানদী গ্রাম থেকে কমলা কেনার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। তারা এ ব্যাপারে উদ্যানপালন ও কৃষিদপ্তরকে চিঠি দিয়েছে। আগামীকাল সংশ্লিষ্ট দপ্তরগুলির সঙ্গে মহানদী গ্রামে কমলা বাগান পরিদর্শনে যাবে দৈনিক নিয়ন্ত্রিত বাজার সমিতি।
স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, দার্জিলিং পাহাড়ের কমলা তিন ধরনের। গুটি, মাঝারি ও বড়। লেবুগুলি ‘ফাঁপা’ নয়। কমলার ত্বক পাতলা। লেবুর কোয়ার সঙ্গে লেগে থাকে খোসা। স্বাদে অসাধারণ মিষ্টি। নিয়ন্ত্রিত বাজার সমিতি জানিয়েছে, পাহাড় থেকে ২৬৮৭ কেজি কমলা কলকাতা সহ দক্ষিণবঙ্গে পাঠানো হয়েছিল। যা কেনা হয়েছিল ১০ টাকা পিস হিসেবে। এবার প্রথম পর্যায়ে ৪৫০ কেজি কমলা কেনা হবে ১২ টাকা পিস হিসেবে। গোটা শীতের মরশুমে আরও কয়েক ধপে তা চাষিদের কাছ থেকে কেনা হবে।