বাম আমলে বেলাগাম নিয়োগ, মিলছে না নথি, সমস্যা মেটাতে নাজেহাল জলপাইগুড়ি পুরসভা
বর্তমান | ০২ ডিসেম্বর ২০২৫
ব্রতীন দাস, জলপাইগুড়ি: বাম আমলে বেলাগাম নিয়োগের অভিযোগ। আর তারই মাশুল গুনতে হচ্ছে জলপাইগুড়ি পুরসভার বর্তমান বোর্ডকে। পুরসভা সূত্রে খবর, বাম আমলে অস্থায়ী কর্মী থেকে যাঁদের স্থায়ী হিসেবে নিয়োগ করা হয়েছিল, তাঁদের বেশিরভাগেরই নথি মিলছে না। ফলে ওইসব কর্মীদের মধ্যে যাঁরা অবসরগ্রহণ করছেন কিংবা করতে চলেছেন, তাঁদের নথিপত্র রাজ্য সরকারকে জমা দিতে পারছে না জলপাইগুড়ি পুরসভা। এদিকে, নথি না মেলায় অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে ওইসব কর্মীদের পেনশন।
জলপাইগুড়ি পুরসভায় অবসরপ্রাপ্ত বহু কর্মী রয়েছেন, যাঁদের নিয়োগের নথিপত্র রাজ্যের পুর ও নগরোন্নয়ন দপ্তরের ডাইরেক্টরেটে এখনও জমা দিতে পারেনি পুর কর্তৃপক্ষ। ফলে তাঁদের পুরো পেনশন চালু হয়নি। বাধ্য হয়ে নিজেদের ভাঁড়ার থেকে ওইসব অবসরপ্রাপ্ত কর্মীকে প্রভিশনাল পেনশন দিতে হচ্ছে পুরসভাকে। এমনিতেই পুরসভার ভাঁড়ে মা ভবানী অবস্থা, তার উপর কার্যত গোঁদের উপর বিষফোঁড়া হয়ে দাঁড়িয়েছে অবসরপ্রাপ্ত কর্মীদের প্রভিশনাল পেনশন মেটানোর বিষয়টি। কারণ, এই খাতে প্রতিমাসে পুরসভার কয়েক লক্ষ টাকা খরচ হয়ে যাচ্ছে। সেইসঙ্গে ওই অবসরপ্রাপ্ত কর্মীরাও নিত্যদিন পুরসভায় এসে তাঁদের সম্পূর্ণ পেনশনের দাবি জানাচ্ছেন। সবমিলিয়ে সমস্যা মেটাতে নাজেহাল পুর কর্তৃপক্ষ।
সমস্যার কথা স্বীকার করে নিয়ে জলপাইগুড়ি পুরসভার চেয়ারম্যান সৈকত চট্টোপাধ্যায় বলেন, বাম আমলে বহু অস্থায়ী কর্মীকে স্থায়ী হিসেবে নিয়োগ করা হয়েছিল। কিন্তু যে পদ্ধতি মেনে ওই নিয়োগ হওয়া দরকার ছিল, তা হয়নি বলেই মনে হচ্ছে। কারণ, ওইসব কর্মীর ক্ষেত্রে নিয়োগের প্রয়োজনীয় নথিপত্র পাওয়া যাচ্ছে না। তিনি বলেন, অস্থায়ী কর্মীকে স্থায়ী হিসেবে নিয়োগের ক্ষেত্রে বোর্ড অব কাউন্সিলার মিটিংয়ে সিদ্ধান্ত বাধ্যতামূলক। কিন্তু অনেক কর্মীর ক্ষেত্রে এ ধরনের নথিপত্র পাওয়া যাচ্ছে না। ফলে পেনশন পাওয়ার ক্ষেত্রে সমস্যা দেখা দিয়েছে। পুরসভার কোষাগার থেকে তাঁদের প্রভিশনাল পেনশন মেটাতে হচ্ছে।
এমনিতেই জলপাইগুড়ি পুরসভায় প্রতিমাসে অস্থায়ী কর্মীদের মাইনে দিতে গিয়ে ৩৫ লক্ষ টাকা খরচ হচ্ছে। পুরোটাই মেটাতে হচ্ছে পুরসভার তহবিল থেকে। তার উপর স্থায়ী কর্মীদের বেতনের একটা বড় অংশ এবং অবসরপ্রাপ্ত কর্মীদের প্রভিশনাল পেনশন মেটাতে গিয়ে পুরসভার ফি মাসে খরচ হয়ে যাচ্ছে প্রায় ৫৪ লক্ষ টাকা। যা এখন পুর কর্তৃপক্ষের অন্যতম মাথাব্যথার কারণ।
পুরসভার এক আধিকারিক বলেন, পুর ও নগরোন্নয়ন দপ্তর থেকে কোনও কর্মীর পেনশন পেমেন্ট অর্ডারের (পিপিও) ক্ষেত্রে তাঁর নিয়োগ সংক্রান্ত নথিপত্র চাওয়া হচ্ছে। কিন্তু বেশিরভাগ ক্ষেত্রে দেখা যাচ্ছে, ওই কর্মীর নিয়োগ সংক্রান্ত নথিপত্র পুরসভার কাছে নেই। তাহলে ওই কর্মীর নিয়োগ হল কীভাবে? প্রশ্নের উত্তরে জলপাইগুড়ি পুরসভার ওই আধিকারিকের বক্তব্য, সবটাই বাম আমলে নিয়োগ হয়েছে। সেক্ষেত্রে নিয়ম মেনে আদৌও ওই নিয়োগ হয়েছে কি না, তা নিয়ে সংশয় রয়েছে। পুরসভার আর এক আধিকারিক বলেন, আমরা কর্মীদের নথিপত্র জোগাড়ের চেষ্টা করছি। কয়েকটি ক্ষেত্রে সমস্যা মেটানো গিয়েছে। কিন্তু নথি না মেলায় এখনও অনেকের পেনশনের বিষয়টি ঝুলে রয়েছে। • জলপাইগুড়ি পুরসভা।