পাঞ্জাবের নামে লোকাল আলুবীজ বিক্রি, চাঞ্চল্য, বাঁকুড়ার চাষিদের সতর্ক করল জেলা কৃষিদপ্তর
বর্তমান | ০২ ডিসেম্বর ২০২৫
নিজস্ব প্রতিনিধি, বাঁকুড়া: বাজারে আলু বীজের দাম হু হু করে কমছে। এবার আরও বেশি করে চাষিরা আলু চাষের দিকে ঝুঁকছেন। ফলে গতবারের তুলনায় এবার বাঁকুড়ায় আলু চাষের এলাকা বৃদ্ধি পাবে বলে কৃষিদপ্তর আশা করছে। আলু চাষের ব্যাপারে কৃষকদের উৎসাহিত করা হলেও সঠিক গুণমানযুক্ত বীজ কেনা নিয়ে কৃষিদপ্তর তাঁদের সতর্ক করে দিচ্ছে। গতবছর জেলার বেশ কয়েকজন চাষি আলু চাষ করেও ফসল ঘরে তুলতে পারেননি। গাছ হলেও আলু হয়নি বলে চাষিদের অভিযোগ। পাঞ্জাবের বীজের নাম করে নকল আলু চাষিদের অসাধু ব্যবসায়ীরা বিক্রি করেছিল। সেই কারণে চাষিদের ক্ষতির মুখে পড়তে হয়। তাই এবার আগেই সতর্ক করা হচ্ছে।
জেলা কৃষিদপ্তরের এক আধিকারিক বলেন, গতবছর বাঁকুড়ায় ৫৬ হাজার হেক্টরের কিছু বেশি জমিতে আলু চাষ হয়েছিল। সবমিলিয়ে মোট আড়াই লক্ষ চাষি আলু লাগিয়েছিলেন। এবার চাষের এলাকা বৃদ্ধি পাবে বলে মনে করা হচ্ছে। চাষিদের বীজের ব্যাপারে সতর্ক থাকতে হবে।
আলু ব্যবসায়ী সমিতির রাজ্য নেতা বিভাস দে বলেন, মাসখানেক আগেও প্রতি বস্তা(৫০কিলোগ্রাম) আলু বীজের দাম দু’হাজার টাকা ছিল। বর্তমানে বস্তা পিছু আলু বীজ ১০০০-১২০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। আরও দাম কমার আশায় চাষিরা রয়েছেন। ফলে তাঁরা এখনও বীজ কেনার জন্য অপেক্ষা করছেন। চাহিদা ও জোগানের মধ্যে ফারাক তৈরি হওয়ায় দাম ক্রমাগত হ্রাস পাচ্ছে। তিনি আরও বলেন, গতবার কয়েকজন চাষি নকল বীজ কিনে প্রতারিত হয়েছিলেন। অসাধু ব্যবসায়ীরা পাঞ্জাবের নাম করে লোকাল আলু বস্তায় ভরে বীজ হিসেবে বিক্রি করেছিল। তা জমিতে লাগিয়েও চাষিরা আলু পাননি। পরিচিত ব্যবসায়ীর কাছ থেকে বীজ কেনার জন্য চাষিদের পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে।
বড়জোড়ার আলু চাষি মিলন সরকার বলেন, আমি প্রতিবছর ৫-৬ বিঘা জমিতে আলু লাগাই। গতবার আবহাওয়া প্রতিকূল থাকায় প্রথম দিকে কিছুটা সমস্যা হয়েছিল। এবার বীজের দাম কম থাকার পাশাপাশি আবহাওয়া ভালো রয়েছে। ফলে চাষিরা বেশি জমিতে আলু বসানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।
উল্লেখ্য, এখনও বাংলার চাষিদের ভিনরাজ্যের আলু বীজের উপর নির্ভর করতে হয়। ফলে তাঁদের নানা ঝক্কি পোহাতে হয়। সমস্যা সমাধানের লক্ষ্যে গত কয়েকবছর ধরেই রাজ্য কৃষিদপ্তর চেষ্টা করছে। ২০৩০ সালের মধ্যে আলু বীজ উৎপাদনের ক্ষেত্রে স্বনির্ভর হওয়ার লক্ষ্যে এগোচ্ছে রাজ্য কৃষি বিভাগ। বাঁকুড়া সহ অন্যান্য জেলায় দপ্তরের তরফে চাষিদের ভর্তুকি দিয়ে বীজ উৎপাদনে উৎসাহ দেওয়া হচ্ছে। গতবার বিষ্ণুপুর, জয়পুর, গঙ্গাজলঘাটি, তালডাংরা, রাইপুর, পাত্রসায়র ব্লক এলাকার চাষিদের নিয়ে বিশেষ ‘হাই-টেক’ আলু বীজ চাষ হয়। বাঁকুড়া জেলা কৃষিদপ্তরের আধিকারিক ও মেদিনীপুর থেকে আসা বীজ গবেষকরা জেলার বিভিন্ন ব্লক পরিদর্শন করেন।
এবারও বীজ আলু উৎপাদনের জন্য চাষিদের উৎসাহ দেওয়া হবে বলে কৃষি দপ্তরের আধিকারিকরা জানিয়েছেন। এভাবে চললে বাংলা আগামী ১০ বছরে স্থানীয় চাষিদের প্রয়োজন মিটিয়ে অন্য রাজ্যে আলু বীজ রপ্তানি করবে বলেও কৃষিদপ্তরের কর্তারা আশা করছেন।