• জামবনীতে জঙ্গলের মাঝে স্কুল, পড়ুয়াদের সুরক্ষায় বিদ্যালয়ের সীমানা প্রাচীরের দাবি
    বর্তমান | ০২ ডিসেম্বর ২০২৫
  • নিজস্ব প্রতিনিধি, ঝাড়গ্রাম: জঙ্গলে দাপিয়ে বেড়ায় হাতির পাল। মাঝেমধ্যে শিয়াল, বুনো শুয়োর ঘুরে বেড়ায়। ঝরে পড়া শুকনো পাতার স্তূপের নীচ দিয়ে সন্তর্পণে চলে যায় নানা বিষধর সাপ। সেই জঙ্গলের মাঝে রয়েছে জামবনী ব্লকের কয়মা প্রাথমিক বিদ্যালয়। জঙ্গল এলাকার রাস্তা ধরে খুদে পড়ুয়ারা স্কুলে আসে। অথচ স্কুলের কোনও সীমানা প্রাচীর নেই। এহেন অবস্থায় শিক্ষক থেকে অভিভাবকরা পড়ুয়াদের সুরক্ষা নিয়ে উদ্বেগে রয়েছেন।

    জামবনী ব্লকের দুবড়া গ্ৰাম পঞ্চায়েতের আদিবাসী অধ্যুষিত গ্ৰাম কয়মা। জঙ্গলঘেরা গ্ৰামের মাঝেই স্কুলটি রয়েছে। প্রি-প্রাইমারি থেকে চতুর্থ শ্রেণি পর্যন্ত স্কুলটিতে ২০জন পড়ুয়া রয়েছে। শিক্ষকের সংখ্যা দুই। স্কুলে শৌচালয় ও পরিস্রুত পানীয় জলের ব্যবস্থা রয়েছে। দু’টি শ্রেণিকক্ষে পড়ুয়ারা মেঝেতে বসেই পড়াশোনা করে। স্কুল কর্তৃপক্ষ সীমানা প্রাচীর তৈরির জন্য প্রশাসনের কাছে একাধিকবার আবেদন করেছে। অসুরক্ষিত অবস্থাতেই দীর্ঘদিন ধরে স্কুলে পঠনপাঠন চলছে।

    জানা গিয়েছে, ১৯৪৮ সালে স্কুলটি প্রতিষ্ঠিত হয়। তখন থেকেই আদিবাসী অধ্যুষিত এলাকায় শিক্ষার বিস্তার শুরু হয়। বর্তমানে স্কুলভবন পাকা হয়েছে। পড়ুয়ারা মিড ডে মিল খায়। গ্ৰামবাসীদের বক্তব্য, স্কুলটি জঙ্গলের মধ্যে রয়েছে। অথচ পড়ুয়াদের সুরক্ষার্থে এখনও পর্যন্ত সীমানা প্রাচীর-ই গড়ে ওঠেনি। বাবা-মায়েরা ছেলেমেয়েদের স্কুলে পাঠিয়ে উদ্বেগে থাকেন। জেলা পরিষদ, পঞ্চায়েত সমিতি ও বিধায়কের তরফেও এবিষয়ে কোনও পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি। 

    বছরের পর বছর পড়ুয়াদের সুরক্ষার বিষয়টি উপেক্ষিতই থেকে গিয়েছে। কয়মা গ্ৰামের বাসিন্দা ঘনশ্যাম সরেন বলেন, জঙ্গলের রাস্তায় নাতনিকে একা ছাড়তে ভয় হয়। তাই ওকে স্কুলে পৌঁছে দিয়ে আসি। আবার বাড়ি নিয়ে আসি। তাছাড়া, ক্লাস চলাকালীন বন্যপ্রাণীরা স্কুল চত্বরে ঢুকে পড়তে পারে। স্কুলের সীমানা প্রাচীর গড়ার জন্য শিক্ষকদের বলা হয়েছে।

    প্রধান শিক্ষক জয়ন্ত সিংহ বলেন, স্কুলে ১২জন ছাত্রী ও আটজন ছাত্র রয়েছে। বেশিরভাগ ছাত্রছাত্রী আদিবাসী ও জনজাতি পরিবারের। খুদে পড়ুয়াদের সুরক্ষায় সীমানা প্রাচীর থাকা খুব দরকার। ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে আমরা বিষয়টি জানিয়েছি। স্কুলের অপর শিক্ষক উত্তম মুর্মু বলেন, জঙ্গলের ভিতরে স্কুল হওয়ায় বন্যপ্রাণীদের আসার সম্ভাবনা রয়েছে। কয়মা, ঝাড়াগেরিয়া, জমিদারডাঙার জঙ্গল কাছাকাছি রয়েছে। হাতির পাল দূরের জঙ্গল দিয়ে চলে যায়। এদিকে চলে আসার ঝুঁকি রয়েছে। তবে, স্কুল চলাকালীন আমরা সতর্ক থাকি।

    জেলা প্রাথমিক শিক্ষা সংসদের চেয়ারম্যান জয়দীপ হোতা বলেন, জেলা পরিষদ, পঞ্চায়েত সমিতি, স্থানীয় বিধায়ককে বিষয়টি জানাব। স্কুলের সীমানা প্রাচীর যাতে দ্রুত গড়া যায়, তার উদ্যোগ নেওয়া হবে। ঝাড়গ্রাম জেলা প্রাথমিক বিদ্যালয় পরিদর্শক অজয় মহাপাত্র বলেন, পড়ুয়াদের সুরক্ষার বিষয়টি নিঃসন্দেহে গুরুত্বপূর্ণ। তবে, স্কুলের সীমানা প্রাচীর গড়ার বিষয়টি আমরা দেখি না। সেটি স্থানীয় প্রশাসন দেখাশোনা করে।-নিজস্ব চিত্র
  • Link to this news (বর্তমান)