পশ্চিম মেদিনীপুরে কমল এইডস রোগী, সচেতনতামূলক প্রচারেই মিলেছে সাফল্য
বর্তমান | ০২ ডিসেম্বর ২০২৫
সংবাদদাতা, ঘাটাল: পশ্চিম মেদিনীপুর জেলায় এইচআইভি পজিটিভ রোগীর সংখ্যা বৃদ্ধির হার আগের থেকে অনেকটাই কমেছে। বিশ্ব এইডস দিবসে এমনই সুখবর পাওয়া গেল পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা স্বাস্থ্যদপ্তর থেকে। পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক সৌম্যশঙ্কর সারেঙ্গী বলেন, এইচআইভি পজিটিভ রোগীর সংখ্যা সে অর্থে বাড়ছে না। বরং বৃদ্ধির হারটা অনেকটাই কমেছে। আমাদের জেলায় এইডস নিয়ে ধারাবাহিক সচেতনতা শিবির এবং প্রচারের জন্যই এই সাফল্য এসেছে।
ইন্টিগ্রেটেড কাউন্সেলিং অ্যান্ড টেস্টিং সেন্টার থেকে প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী, চলতি বছরে সাধারণ নাগরিকদের মধ্যে ১০৬জন এইচআইভি পজিটিভ হিসেবে শনাক্ত হয়েছেন। এর তুলনায় গত বছর, অর্থাৎ ২০২৪ সালে পজিটিভের সংখ্যা ছিল ১৯৭জন। শুধুমাত্র সাধারণ মানুষের মধ্যেই নয়, গর্ভবতী মহিলাদের মধ্যেও এইচআইভি পজিটিভ শনাক্তকরণের হার কমেছে। গতবছর ১৯জন গর্ভবতী মহিলা পজিটিভ ছিলেন, সেখানে ২০২৫ সালে সংখ্যাটি কমে ১৩ হয়েছে।
জেলাস্তরে ঘাটাল, খড়্গপুর এবং ডেবরা আইসিটিসি কেন্দ্রগুলির তথ্য বিশ্লেষণ করেও পজিটিভের সংখ্যা হ্রাসের চিত্র দেখা যাচ্ছে। ঘাটাল কেন্দ্রে গত বছরের ২৪জন পজিটিভ থেকে কমে চলতি বছরে ১৮ জন, খড়্গপুর কেন্দ্রে ২৮জন থেকে কমে ১৫জন এবং ডেবরা কেন্দ্রে ১৬জন থেকে কমে মাত্র পাঁচ জনে দাঁড়িয়েছে।
যদিও ২০২৪ সালে ৪৩ হাজার ৫৮৫জন সাধারণ নাগরিকের পরীক্ষা হয়েছিল, সেখানে ২০২৫ সালে অক্টোবর পর্যন্ত ৩২ হাজার ৪৫৩জনের পরীক্ষা হয়েছে। তবে, পরীক্ষার সংখ্যা কমা সত্ত্বেও মোট পজিটিভের সংখ্যা কম হওয়াটা নিঃসন্দেহে স্বাস্থ্যদপ্তরের জন্য একটি ইতিবাচক দিক।
জেলার সম্পূর্ণ সুরক্ষা কৌশল প্রকল্পের অধীনে ঝুঁকিপূর্ণ গোষ্ঠীগুলিকে নিয়ে সচেতনতামূলক কার্যক্রমের প্রসার ঘটেছে। গত বছরের তুলনায় চলতি বছরে স্বাস্থ্য শিবির ও সচেতনতা কর্মসূচির সংখ্যা বাড়ানো হয়েছে। যার ফলে আইসিটিসিতে রেফার হওয়া রোগীর সংখ্যাও বহুগুণ বৃদ্ধি পেয়েছে। ২০২৪ সালে ৪০০জন থেকে বেড়ে ২০২৫ সালে ৮৯৯জন হয়েছে। জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক বলেন, এই রিপোর্ট প্রমাণ করে জেলার প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা এবং সচেতনতা বৃদ্ধির কারণে এইচআইভির নতুন সংক্রমণের হার নিয়ন্ত্রণে আনা সম্ভব হয়েছে।
জেলা স্বাস্থ্যদপ্তর সূত্রে জানা গিয়েছে, জেলার মধ্যে দাসপুর থানা এবং খড়্গপুর এলাকায় এইচআইভি পজিটিভ রোগীর সংখ্যা বেশি। জনপ্রতিনিধিরা বলেন, আমাদের থানার অধিকাংশ যুবক কম বয়সে পড়াশোনা ছেড়ে দিয়ে মুম্বই, দিল্লি, আমেদাবাদ, সুরাট, নেপাল, দুবাই সহ বিভিন্ন জায়গায় হাতের কাজে চলে যান। কর্মস্থলে গিয়ে কম দিনের মধ্যে হাতে পারিশ্রমিক বাবদ প্রচুর টাকা আসে। সেই টাকা দিয়ে বেপরোয়া জীবনযাপন করার ফলে অনেকেই এইচআইভি পজিটিভ হয়ে পড়ছেন। তাঁদের সঙ্গীনীও সংক্রামিত হন।
তবে, বর্তমানে স্বাস্থ্যদপ্তরের ধারাবাহিক প্রচার, সামাজিক মাধ্যমে বিভিন্ন ভিডিও ক্লিপ দেখে আম জনতা অনেকটাই সচেতন হয়েছেন। তাই আক্রান্তের সংখ্যাটাও অনেকটা কমেছে। স্বাস্থ্যদপ্তর জানাচ্ছে, তাছাড়া এইচআইভি পজিটিভ রোগীদের মধ্যে ভীতিটাও অনেকটা কমে গিয়েছে। আগেওই আক্রান্ত হলে বিষয়টি রোগী গোপন রাখতেন। এখন সেই ধারণা দূর হয়েছে। দেবাশিসবাবু বলেন, বহু এইচআইভি পজিটিভ রোগী সুস্থ হয়ে স্বাভাবিক জীবনযাপন করছেন। অনেকে কর্মক্ষেত্রে ফিরে গিয়ে কাজ করছেন। নিজস্ব চিত্র