• ২০ টাকার আংটি চুরির অপবাদ, তারাপীঠে বিহারের নয় পর্যটককে মার
    বর্তমান | ০২ ডিসেম্বর ২০২৫
  • সংবাদদাতা, রামপুরহাট: সামান্য ২০ টাকার আংটি মিসিং। আর তাতেই ভিন রাজ্য থেকে আসা একই পরিবারের মহিলা, শিশু সহ আট সদস্যকে নির্মমভাবে মারধর করার অভিযোগ উঠল দোকানদার ও আশেপাশের ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে। স্টিলের রড দিয়ে মেরে মাথা ফাটিয়ে দেওয়া হয় এক নাবালকের। রবিবার রাত সাড়ে ন’টা নাগাদ মর্মান্তিক এই ঘটনা ঘটেছে রাজ্যের অন্যতম পর্যটন কেন্দ্র তারাপীঠে। সকলের সামনে মারধর করলেও কেউ বাঁচাতে এগিয়ে আসেনি। পুলিশ অভিযুক্ত দোকান মালিক সহ দুজনকে গ্রেফতার করেছে। ঘটনার তীব্র নিন্দা করেছে মন্দির কমিটি।

    পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, বিহারের কাটিহার জেলার রৌসনা এলাকার দুই ভাই ও তাঁদের পরিবারের মোট ন’ জন সদস্য তারাপীঠে পুজো দিতে এসেছিলেন। পুজো দিয়ে হোটেলে ফেরার পথে মন্দির সংলগ্ন একটি ইমিটেশনের দোকান দেখে আংটি কেনার জন্য জেদ ধরে তাঁদেরই এক শিশু কন্যা। ওই দোকানে ২০ টাকা মূল্যের একটি আংটি পছন্দ হয় তাঁদের। অভিযোগ, দাম মেটাতে যাবে এমন সময় দোকানদার রাজীব মণ্ডল তাঁদের বলে একটি আংটি আপনারা চুরি করেছেন। বিনা দোষে এমন অপমান মেনে নিতে পারেনি পরিবারের সদস্যরা। এই নিয়ে তীব্র বাক বিতণ্ডা শুরু হতেই স্টিলের রড ও লাঠি দিয়ে ওই পুণ্যার্থীদের নির্মমভাবে মারতে শুরু করে দোকানদার। 

    শিশুকন্যার মা কাঞ্চন দেবী বলেন, আমরা এতদূর থেকে মায়ের কাছে পুজো দিতে এসেছি। ২০ টাকার আংটি চুরি করতে আসিনি। বারবার ওই দোকানদারকে বলা হয়, দোকানের সিসি ক্যামেরার ফুটেজ দেখুন, ব্যাগ খুঁজে দেখুন, আমরা আংটি চুরি করিনি। কিন্তু ওরা কোনও কথা না শুনে বলতে থাকে বিহারীরা চোর। এরপরই একটি স্টিলের রড দিয়ে আমাদের মারতে থাকে। আশেপাশের দোকানদারও লাঠি দিয়ে মারতে থাকে। সেই সঙ্গে চলে কিল, লাথি। আমার নাবালক ছেলেকে মেরে মাথা ফাটিয়ে দেওয়া হয়। আমার গলা থেকে সোনার চেন কেড়ে নেয়। অনেক লোক দাঁড়িয়ে দেখলেও কেউ বাঁচাতে এগিয়ে আসেনি। 

    কাঞ্চনের দেওর কৃষ্ণা কুমার বলেন, আমরা যদি চুরি করব, তাহলে সিসি ক্যামেরার ধরা পড়বে। সেই ফুটেজ দেখাতে বললেও শোনেনি। বিহারীরা চোর বলার পাশাপাশি অশ্লীল ভাষায় গালিগালাজও করে। প্রতিবাদ করতেই ওরা বেধরক মারতে শুরু করে। মহিলা, নাবালক কাউকে বাদ দেয়নি। আমরাও চড়, থাপ্পড় মেরেছি। নিমিষের ম঩ধ্যেই মারধরের ভিডিও সামাজিক মাধ্যমে ভাইরাল হয়ে যায়। রাতেই কৃষ্ণা কুমার থানায় অভিযোগ দায়ের করেন। যদিও ততক্ষণে দোকান বন্ধ করে পালিয়ে যায় অভিযুক্তরা। পরে পুলিশ খোঁজাখুঁজি করে ওই ঩দোকানের মালিক রাজীব মণ্ডল ও অপর অভিযুক্ত রঞ্জিত মেহেরা নামে দুই যুবককে গ্রেফতার করে। পুলিশ জানিয়েছে, অভিযুক্ত এক মহিলা গা ঢাকা দিয়েছে। সোমবার রামপুরহাট আদালতে অভিযুক্তদের তোলার পথে কেন এভাবে মারধর করা হল? প্রশ্ন করায় নিশ্চুপ থেকেছে দুই অভিযুক্ত। সরকারি আইনজীবী সৈকত হাটি বলেন, বিচারক ধৃতদের ১৪ দিন জেল হেফাজতের পাশাপাশি সাতদিনের মধ্যে আদালতে সিডি জমা করার জন্য পুলিশকে নির্দেশ দিয়েছেন। ঘটনার তীব্র নিন্দা করেছেন মন্দির কমিটির সভাপতি তারাময় মুখোপাধ্যায়। তিনি বলেন, এই ধরনের ঘটনা পর্যটন কেন্দ্রে সমর্থন যোগ্য নয়। তবে সব পর্যটকই যে ভালো তা নয়, কিছু দুষ্কৃতীও পর্যটক সেজে এসে দুষ্কর্ম চালায়। তবে ওই পর্যটকরা যদি কোনও অপরাধ করেই থাকে, তাহলে আটকে রেখে পুলিশে খবর দিতে পারত। 

                                    • নিজস্ব চিত্র
  • Link to this news (বর্তমান)