• রাঁচিতে গ্যালারি থেকে বিপজ্জনকভাবে ঝাঁপ দিয়ে মাঠে প্রবেশ, বিরাট কোহলিকে প্রণাম করে আটক সৌভিক, মুক্তির অপেক্ষায় আরামবাগ
    বর্তমান | ০২ ডিসেম্বর ২০২৫
  • রামকুমার আচার্য (মধুরপুর) আরামবাগ: ইডেনের পর এবার রাঁচি। ক্রিকেট তারকা বিরাট কোহলিকে ছুঁয়ে দেখলেন ফের এক বাঙালি যুবক। 

    চলতি বছরে মার্চ মাসে কলকাতার ইডেনের ফেন্সিং টপকে বিরাটের কাছে পৌঁছে গিয়েছিলেন বর্ধমানের যুবক ঋতুপর্ণ পাখিরা। মাটিতে শুয়ে প্রণাম করেছিলেন তাঁর ‘ঈশ্বর’ কে। এবার একই কায়দায় রাঁচিতে গ্যালারি থেকে ঝাঁপ দিয়ে বিরাটকে স্পর্শ করলেন আরামবাগের যুবক সৌভিক মুর্মু। মুহূর্তেই নিরাপত্তারক্ষীরা তাঁকে সরিয়ে দেন। পরে রাঁচির পুলিশ সৌভিককে আটক করে। ঘটনায় তাজ্জব সৌভিকের পরিবার। আইনি জটিলতা কাটিয়ে দ্রুত ছেলের ঘরে ফেরা নিয়ে চিন্তায় রয়েছেন পরিবারের সকলেই। মঙ্গলবার সকালেই তিন আত্মীয়কে সঙ্গে নিয়ে রাঁচিতে পৌঁছবেন বাবা সমর মুর্মু। নেমেই পুলিশের দেওয়া নম্বরে ফোন করবেন তিনি। তারপর নির্দেশমতো থানায় যাবেন। সেখানে ছেলেকে দ্রুত ছাড়িয়ে নিয়ে বাড়ি ফেরাই লক্ষ্য।

    আরামবাগের হরিণখোলা ১ পঞ্চায়েতের মধুরপুর গ্রামের বাসিন্দা সৌভিকের বয়স এখন ১৯ বছর। মেঠো পথ উজিয়ে, খাল পেরিয়ে যেতে হয় আদিবাসী পাড়ায়। সেখানে তাঁর অ্যাসবেষ্টসের ছাউনি দেওয়া এক চিলতে ঘর। কেশবপুরে কবি কঙ্কন মুকুন্দরাম মহাবিদ্যালয়ের বাংলা অনার্সের প্রথম বর্ষের পড়ুয়া তিনি। স্কুলে পড়ার সময় থেকেই কোহলির পরমভক্ত সৌভিক। মোবাইলে বা টিভিতে বিরাটের খেলা মিস করতেন না কখনও। গত বছর এপ্রিল মাসে বাড়িতে কিছু না জানিয়েই ধোনি-বিরাটের টানে আইপিএল দেখতে এক মাস ধরে সৌভিক সাইকেল চালিয়ে চলে যান চেন্নাইয়ে। কলকাতায় ইডেন গার্ডেন্সেও দেখেছেন খেলা। 

    গত রবিবার রাঁচিতে ভারত ও দক্ষিণ আফ্রিকার ম্যাচ দেখতে যান সৌভিক। শুক্রবার খেলা দেখার জন্য জমানো সাড়ে তিন হাজার টাকা নিয়ে মায়াপুর স্টেশন থেকে ট্রেন ধরে হাওড়া হয়ে রাঁচি যান সৌভিক। সেখানেই কোহলির সেঞ্চুরির পর সৌভিক গ্যালারি থেকে ঝাঁপ দিয়ে ছুটে মাঠে ঢুকে পড়েন। বিরাটের পা ছুঁয়ে প্রণাম করেন। মুহূর্তের মধ্যেই নিরাপত্তারক্ষীদের হাতে পাকড়াও হন তিনি। রবিবার বিকেল ৫টা নাগাদ রাঁচির পুলিশ ফোন করে সৌভিকের বাবাকে। পরিবারের সদস্যরা জানিয়েছেন, বিরাটের পাশাপাশি মহেন্দ্র সিং ধোনিরও ভক্ত সৌভিক। দু’জনের কারও খেলাই মিস করত না। কোনও ম্যাচে বিরাট আউট হয়ে গেলে মন ভারাক্রান্ত হয়ে পড়ত। ভালো করে খেতেও পারত না। 

    সৌভিকের বাড়িতে বাবা, মা ও বোন রয়েছে। বাবা গ্রামীণ চিকিৎসক, মা মঙ্গলী সরেন মুর্মু পেশায় অঙ্গনওয়াড়ি কর্মী। বোন শুভনীতা একাদশ শ্রেণির ছাত্রী। এদিন সমরবাবু বলছিলেন, ‘আমার ছেলে ক্রিকেট খেলতে খুব ভালোবাসে। খেলার প্রশিক্ষণকেন্দ্রে ভর্তি হওয়ার জন্য আবদার করত। আমরা ভালো করে পড়াশোনা করতে উৎসাহ দিতাম। কিন্তু বিরাট, ধোনিকে নিয়ে খেলার কথাই বেশি ভাবত। রাঁচিতে বিরাটের সেঞ্চুরির পর সেজন্যই আবেগাপ্লুত হয়ে মাঠে ঢুকে পা ছুঁয়ে প্রণাম করে। সেখান থেকে পুলিশ ফোন করে ঘটনাটি জানিয়েছে। বেশ চিন্তায় পড়েছি। এখন আমরা চাইছি, ছেলে যেন দ্রুত মুক্তি পায়। একটাই স্বস্তি যে থানায় না খেয়ে থাকতে হয়নি। মারধরও খায়নি। বরং কম্বল পেয়েছে শোওয়ার সময়।’

    সৌভিকের মায়ের কথায়, ‘কোহলিকে দেখার জন্য অনেকদিন ধরেই চেষ্টা করছিল ছেলে। প্রতিজ্ঞা করে চুল পর্যন্ত কাটেনি। ওর মোবাইলে বিরাটের অজস্র ছবি।’ সৌভিকের প্রতিবেশী সুশান্ত মান্ডি বলছিলেন, ‘ওর সঙ্গে আমরা খেলা দেখতে যেতাম। বিরাট, ধোনির বড় ভক্ত সৌভিক। সবসময় ওঁদের সঙ্গে দেখা করার ছক কষত।’
  • Link to this news (বর্তমান)