নিজস্ব প্রতিনিধি, হাকিমপুর সীমান্ত: চোরাপথে ভারতে আসা বাংলাদেশিরা দেশে ফিরছে। এই সময়টাকে কারবারের ‘সুপার টাইম’ হিসেবে ধরে নিয়েছে সীমান্ত পারাপার করানোর দালাল বা ‘ধুরপার্টি’। একশ্রেণির মানুষ এই সুযোগে উপরি রোজগার করেছেন। মানুষকে ভুল বুঝিয়ে নিচ্ছেন মোটা টাকা। যত সময় বাড়ছে, ততই পাল্লা দিয়ে বাড়ছে সীমান্ত পারের ‘রেট’ও। শুধু তাই নয়, বদলে গিয়েছে দালালদের বাংলাদেশে পাঠানোর কৌশলও। না জেনে বুঝে এই টোপে পা দিচ্ছেন অনেক বাংলাদেশি। এছাড়া আগের তুলনায় বাংলাদেশ সীমান্ত স্বরূপনগরের হাকিমপুরে ভিড় কমে গিয়েছে। তাই কাঁটাতারের গেট খুলে বাংলাদেশিদের পুশব্যাক করছে বিএসএফ, এমনটাও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে।
এসআইআর শুরু হতেই বাংলাদেশি অনুপ্রবেশকারীরা স্বভূমিতে ফিরছেন। কেউ ১০ বছর কেউ কেউবা ২৫ বছর আগে এদেশে এসেছিলেন। অনেকের ভারতের প্রমাণপত্র তৈরি হয়েছিল। অনেকের আবার হয়নি। এসআইআর নিয়ে তৎপরতা শুরু হতেই ঝুঁকি নিতে চাইছেন না অনুপ্রবেশকারীরা। তড়িঘড়ি তাঁরা ওই দেশে ফিরছেন। আর এক্ষেত্রে কড়া নজরদারি ও তথ্য যাচাই করার পর তাঁদের দেশে পাঠাচ্ছে বিএসএফ। পুঙ্খানুপুঙ্খ ভাবে নেওয়া হচ্ছে তথ্য। তবে, সিংহভাগ মানুষই ছিলেন দিনমজুর। থাকতেন কলকাতা বা লাগোয়া জেলায়। কারও ছিল না স্থায়ী বাড়ি। বাড়ির মহিলারা পরিচারিকার কাজ করতেন।
মাসখানেক ধরে উত্তর ২৪ পরগনা স্বরূপনগরের হাকিমপুর সীমান্ত দিয়ে হাজার হাজার মানুষ বাংলাদেশে ফিরেছেন। বেশিরভাগ মানুষই এসেছিলেন চোরাপথে, রাতের অন্ধকারে। এখন তাঁরাই আবার ধুর ধরে দেশে ফিরতে চাইছেন। কিন্তু এত কড়াকড়ির মধ্যেই কীভাবে সক্রিয় রয়েছে দালাল চক্র? স্বরূপনগর সীমান্তে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক মাঝবয়সী ব্যক্তি বলেন, চোরাপথে আসার সময় বাংলাদেশিরা যেমন দালাল ধরেছিল, ঠিক তেমনভাবেই এপারে অনুপ্রবেশকারীরা দালালদের সন্ধান করছে। তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করে সীমান্তে আসছে। এর জন্য আবশ্য কম ঝক্কি পোহাতে হয়নি! সরাসরি যে রাস্তা দিয়ে সীমান্তে পৌঁছতে অটো বা টোটোতে ভাড়া ১০০ টাকা, সেখানে ঘুরপথে আসতে দিতে হচ্ছে ২ হাজার টাকা। কারণ, ওই গাড়ির চালক ঘুরপথে তাঁকে সীমান্তে নিরাপদে নিয়ে আসবেন। গল্পের ছলে পদ্ধতিটা শোনালেন ওই ব্যক্তি। বললেন, ধুররা বাংলাদেশিদের ভয় দেখিয়ে বলছে, এখনই ওদেশে যাওয়া যাবে না। বিএসএফ সময় নেবে। রাতের অন্ধকারে চোরাপথে তাড়াতাড়ি ফেরানোর ব্যবস্থা করব। এর জন্য লাগবে মোটা টাকা। খরচ হবে ১০-১৫ হাজার টাকা। এই টাকা দিলেই তাদের অনায়াসে একদিনের মধ্যেই দেশে ফেরানো হবে।
নিয়ম অনুযায়ী, হাকিমপুর সীমান্তে আসার পর এক থেকে দেড় দিনের মধ্যেই বাংলাদেশিরা দেশে ফিরতে পারছেন। কিন্তু মানুষের অসহায়তার সুযোগ নিয়ে দালালরা নিজেদের মতো করে ‘ব্যবসা’ করছে। এখানেই শেষ নয়। সূত্রের আরও দাবি, এখন লোকসংখ্যা কমে যাওয়ায় বিএসএফ কাঁটাতারের গেট খুলে বাংলাদেশে পাঠাচ্ছে অনুপ্রবেশকারীদের। তার সুযোগ নিচ্ছে ধুররাও। রাতের অন্ধকারে নিয়ম মেনে পুশব্যাক করা বাংলাদেশিদের সঙ্গে দালাল ধরা ওপারের লোকজনকে জুড়ে দেওয়া হচ্ছে বলেও স্থানীয় সূত্রে খবর। মাঝখান থেকে দেশে দ্রুত ফিরতে আগ্রহী বাংলাদেশিদের কাছ থেকে মোটা টাকা আদায় করে নিচ্ছে দালালচক্র। স্বরূপনগর, হাকিমপুর, আমুদিয়া, কৈজুরি, গোবিন্দপুর সহ বিভিন্ন গ্রামে ধুরপার্টির নয়া ‘কারসাজি’ কান পাতলেই শোনা যাচ্ছে।