নিজস্ব প্রতিনিধি, কলকাতা: দেখতে সুসজ্জিত বিল্ডিংয়ের মতো। সামনে চিকিৎসা বিজ্ঞানের প্রাণ পুরুষদের আবক্ষ মূর্তি। জলজল করছে সাইনবোর্ড, ‘সেবাশ্রয় ২।’ বিল্ডিংয়ের ভিতরে প্রবেশ করলে চোখে পড়বে, একদিকে চিকিৎসক রোগী দেখছেন, অন্যদিকে ওষুধ বিলি হচ্ছে। আবার কোথাও রক্ত পরীক্ষা হচ্ছে, চলছে এক্স রে, ইসিজি। বিল্ডিংয়ের ফ্লোর জুড়ে চেয়ার সারি দিয়ে রাখা। আবার রোগীর জন্য হুইল চেয়ার, ট্রলি নিয়ে দাড়িয়ে আছেন ভলান্টিয়াররা। এহেন বিরাট কর্মযজ্ঞের এক কথায় নির্যাস, ‘মিনি হাসপাতাল।’
সোমবার থেকে ডায়মন্ড হারবারে শুরু হয়েছে বিনামূল্যে চিকিৎসা পরিষেবা শিবির। নাম সেবাশ্রয়। এটা দ্বিতীয় পর্যায়। এর আগে ৭৫ দিন ব্যাপী প্রথম পর্যায় অনুষ্ঠিত হয়েছিল ডায়মন্ড হারবার লোকসভা কেন্দ্রের সাতটি বিধানসভাজুড়ে। সাড়ে ১২ লক্ষ মানুষ বিনামূল্যে চিকিৎসা পেয়েছিলেন। আরও বেশি মানুষকে পরিষেবা দিতে ১ ডিসেম্বর শুরু হল দ্বিতীয় পর্যায়। জানুয়ারি মাসেও চলবে।
মহেশতলা বিধানসভা কেন্দ্রের অন্তর্গত চক চাঁন্দুল রথতলায় একটি শিবির হয়েছে। চিকিৎসা বিজ্ঞানে খ্যাতনামা ব্যক্তিত্বদের প্রতি শ্রদ্ধার্ঘ জ্ঞাপন করা হয়েছে সেবাশ্রয়-২ এর পক্ষ থেকে। নীলরতন সরকার, বিধানচন্দ্র রায়, মাদার টেরিজা, শম্ভুনাথ দে, মহর্ষি সুশ্রুত, কাদম্বিনী গঙ্গোপাধ্যায়, রাধাগোবিন্দ কর, আনন্দীবাঈ গোপালরাও যোশি এবং মধুসূদন গুপ্তের মতো ব্যক্তিত্ব যাঁরা মানব সেবায় দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন, তাঁদের আবক্ষ মূর্তি এবং সংক্ষিপ্ত জীবনী দেওয়া হয়েছে।
সেবাশ্রয় শিবিরের প্রাঙ্গণ জুড়ে সুন্দর পরিবেশ। একদিকে ফুলের বাগান, ঝরনা রয়েছে। অন্যদিকে, স্বাস্থ্য পরিষেবা সংক্রান্ত মানব দেহের একটি অবয়ব। শিবিরের ভিতরে প্রবেশ করলে প্রথমেই নজর পড়বে রোগীদের নাম, বয়স এবং শারীরিক কী কী সমস্যা রয়েছে তা রেজিস্ট্রেশনের মাধ্যমে নথিভুক্ত করা হচ্ছে। রোগীর সমস্যা বুঝে সংশ্লিষ্ট ডাক্তারের চেম্বারে পাঠানো হচ্ছে। সেখানে রয়েছেন কার্ডিয়োলজি, নিউরোলজি, জেনারেল মেডিসিন, অর্থপেডিক, পেড্রিয়াটিক, গাইনোকোলজি, ডার্মাটোলজি, জেনারেল সার্জারি বিভাগের চিকিৎসকরা। স্বাস্থ্য শিবিরের মধ্যেই একদিকে রক্ত পরীক্ষা চলছে আবার এক্স রে, ইসিজি, ব্রেস্ট ক্যান্সার ট্রিটমেন্ট ক্লিনিক রয়েছে। যাঁরা এখানে রক্তপরীক্ষা করাতে আসছেন, তাঁরা দু’দিনের মধ্যেই সরাসরি নিজেদের ফোনে বা হোয়াটসঅ্যাপে রিপোর্ট পেয়ে যাবেন। আইসিইউ ব্যবস্থা রয়েছে শিবিরে। সাধারণত একটি হাসপাতালে যে ধরনের চিকিৎসা সংক্রান্ত ব্যবস্থা চোখে পড়ে প্রায় সেরকমই ব্যবস্থা রয়েছে সেবাশ্রয়-২ স্বাস্থ্য শিবিরে। বাইরে অ্যাম্বুলেন্সও রয়েছে। শিবিরে আসা ৭১ বছরের পদ্মাবলি ঘোষ জানান, এর আগের শিবিরে এসে যথেষ্ট উপকার পেয়েছিলাম। তাই এবারও এলাম। পাশাপাশি ৯ বছরের নুসরত সিদ্দিকী এসেছিল, বাবার সঙ্গে। অস্থিমজ্জায় সমস্যা। নুসরতের বাবা জানিয়েছেন, আমার বিশ্বাস সেবাশ্রয় থেকেই আমার মেয়ে সুস্থ হয়ে উঠবে।
কেন এই সেবাশ্রয়-২ শিবির শুরু করেছেন, তার কারণ ব্যাখ্যা করেছেন প্রধান উদ্যোক্তা সাংসদ অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি বলেন, এলাকার মানুষ আমাকে সাংসদ হিসেবে নির্বাচিত করেছেন। তাঁদের প্রতি আমার দায়বদ্ধতা রয়েছে। আমার জন্মভূমি কলকাতার কালীঘাট, কিন্তু কর্মভূমি হল ডায়মন্ড হারবার।