শুভ্র চট্টোপাধ্যায়, কলকাতা: এটিএম কার্ড নাকি মোবাইল ফোন? চাকরির পরীক্ষার প্রশ্ন ফাঁসে জালিয়াতদের নতুন অস্ত্র অত্যাধুনিক প্রযুক্তি। ই-কমার্স সাইটে সহজলভ্য এই মোবাইল হ্যান্ডসেট। ডিভাইসটি দেখতে আর পাঁচটা এটিএম কার্ডের মতোই। কিন্তু তাতে ভরা যায় সিম। কথা বলার জন্য রয়েছে ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র একটি ইয়ারফোন। কুর্তি, সালোয়ার, প্যান্ট বা শার্টের পকেটে ওই কার্ড সদৃশ মোবাইলটি রেখে খুবই ক্ষুদ্র হেড ফোনের মাধ্যমে অনায়াসে কথা বলা যায়। হলের বাইরে থেকে প্রশ্ন ফাঁস কিংবা পরীক্ষার্থীকে সাহায্য—সবই করা যাচ্ছে সেটির মাধ্যমে। রাজ্য পুলিশের কনস্টেবল নিয়োগে জালিয়াতদের নতুন ‘মোডাস অপারেন্ডি’ ভাবাচ্ছে তদন্তকারীদের।
রবিবার ছিল রাজ্য পুলিশের কনস্টেবল নিয়োগের লিখিত পরীক্ষা। পরীক্ষা চলাকালীনই বীরভূম ও নদীয়ার তিনটি সেন্টার থেকে অত্যাধুনিক মোবাইল সহ তিন পরীক্ষার্থীকে গ্রেফতার করা হয়। ধৃতদের মধ্যে দু’জন মহিলা। পুলিশ জানিয়েছে, ধৃতদের কাছ উদ্ধার হওয়া তিনটি এটিএম কার্ড-মোবাইলের মধ্যে দু’টিতে রয়েছে শুধু ইনকামিংয়ের সুবিধা। কিন্তু বীরভূম জেলা স্কুলের সেন্টারে মহিলা পরীক্ষার্থী ইনকামিং ও আউটগোয়িং উভয় পরিষেবা যুক্ত ডিভাইস ব্যবহার করছিল। সংশ্লিষ্ট পরীক্ষা কেন্দ্রের এক পরিদর্শক সেটি উদ্ধার করেন। পরীক্ষা করে দেখা যায়, তাতে সিম কার্ড ভরা। পরীক্ষার্থীর কানের ভিতর ঢোকানো রয়েছে অতি ক্ষুদ্র ইয়ারফোন। ওই জেলারই দুবরাজপুরের সেন্টারে প্রবেশের সময় অপর এক মহিলা পরীক্ষার্থীর কাছ থেকেও মেলে এটিএম কার্ড মোবাইল। তাতে শুধু ইনকামিং কল আসার ব্যবস্থা ছিল। নদীয়ার তেহট্টে সেন্টারেও এই কায়দায় জালিয়াতির সময় ধরা পড়ে এক পুরুষ পরীক্ষার্থী। তার কাছেও মেলে ইনকামিং কলের সুবিধা থাকা একটি কার্ড-মোবাইল।
ধৃতদের জেরা করে তদন্তকারীরা জেনেছেন, প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষায় প্রশিক্ষণ দেওয়ার জন্য সোশ্যাল নেটওয়ার্কিং সাইটে বিভিন্ন বিজ্ঞাপন দেওয়া হয়। হলে বসে কেউ উত্তর জানতে চান কি না, এমনই টোপ দেওয়া হয় সেই পরীক্ষার্থীদের। আগ্রহ দেখালে জানানো হয়, বাড়তি টাকায় উত্তর সরবরাহের ব্যবস্থা করা হবে। জালিয়াত চক্রের লোকজনই পরামর্শ দেয়, ই-কমার্স সাইট থেকে এমন এটিএম কার্ড সদৃশ মোবাইল কিনতে। সেইমতো ডিভাইসটি কিনেছিলেন ধৃত তিন পরীক্ষার্থী। পুলিশ জানিয়েছে, তেহট্টের পুরুষ পরীক্ষার্থী ইনকামিং কলে যা শুনছিলেন, সেই উত্তর অবশ্য সংশ্লিষ্ট প্রশ্নপত্রের নয়। আর সেই কারণে পুলিশ কর্তারা নিশ্চিত, প্রশ্ন ফাঁস হয়নি। পরীক্ষার্থীদের সাহায্য করার অভিযোগে সোমবার ঝাড়খণ্ডের ঝরিয়ায় ধরা পড়া গ্যাংয়ের সদস্যদের কাছ থেকেও এমন কার্ড-মোবাইল মিলেছে। প্রশাসনিক সূত্রে জানানো হয়েছে, এহেন কার্ড-মোবাইল ব্যবহার করে ধরা পড়লে, সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি ন্যূনতম ৩ বছরের জন্য পুলিশের কোনও পরীক্ষায় বসতে পারবে না। আর যদি কোনও পরীক্ষার্থী নিজে জালিয়াত চক্রের সঙ্গে যুক্ত থাকে? সেক্ষেত্রে জারি হবে ‘আজীবন নিষেধাজ্ঞা’।