নিজস্ব প্রতিনিধি, কলকাতা: বছর ঘুরলেই বিধানসভা ভোট। তার আগে আজ, মঙ্গলবার নবান্ন সভাঘর থেকে বিগত ১৪ বছরে তাঁর সরকারের কাজের খতিয়ান তুলে ধরবেন স্বয়ং মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। প্রতিটি দপ্তরের কাজের চুলচেরা বিশ্লেষণও করবেন তিনি। সেই সঙ্গে আগামী দিনে তাঁর সরকার সাধারণ মানুষের জন্য আরও কী কী উপহার দিতে পারেন, সেদিকেও দিক নির্দেশের সম্ভাবনা উড়িয়ে দিচ্ছে না প্রশাসনিক মহল।
সোজা কথায়, আজ বিধানসভা ভোটের ময়দানে পুরোদস্তুর নেমে পড়তে চলেছেন মুখ্যমন্ত্রী। আর এই ‘যুদ্ধে’ তাঁর অস্ত্র একটাই—উন্নয়ন। ২০১১ থেকে ২০২৫। স্বাস্থ্য, শিক্ষাকে গুরুত্ব দিয়ে ধাপে ধাপে ৯৪টি সামাজিক সুরক্ষা প্রকল্প চালু করেছে তাঁর সরকার। লক্ষ্মীর ভাণ্ডার, কন্যাশ্রী, কৃষক বন্ধুর মতো প্রকল্প আম জনতাকে নগদের জোগান সুনিশ্চিত করেছে। কেন্দ্র প্রাপ্য আটকে দেওয়ার পরও কর্মশ্রী, বাংলার বাড়ি প্রকল্প চালু করে রাজ্যের প্রান্তিক মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছে নবান্ন। বর্তমানে কেন্দ্রের ঘরে রাজ্যের প্রায় ২ লক্ষ কোটি টাকা আটকে রয়েছে। এই পরিস্থিতিতে কোনও প্রকল্পের অর্থবরাদ্দ বৃদ্ধি কার্যত চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে রাজ্যের কাছে। তা সত্ত্বেও সমগ্র শিক্ষার অন্তর্গত পার্শ্বশিক্ষক, এসএসকে, এমএসকে হিসেবে কর্মরতদের প্রায় ৯২ হাজার অস্থায়ী কর্মীর বেতন বৃদ্ধি নিয়েও রাজ্যের শীর্ষস্তরে আলোচনা হয়েছে। পাশাপাশি, লক্ষ্মীর ভাণ্ডারের টাকা বাড়ানো যায় কি না, সে ব্যাপারেও চর্চা হয়েছে বলে সূত্রের খবর। আর তাই আজকের বৈঠকে রাজ্যের তরফে কোনও বড় ঘোষণা হয় কি না, তা নিয়ে জোর জল্পনা শুরু হয়েছে প্রশাসনের অন্দরে।
ইতিমধ্যে জেলায় জেলায় গিয়ে জনসভা শুরু করে দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী তথ্য তৃণমূল সুপ্রিমো। মঙ্গলবার বৈঠক সেরেই তাঁর মুর্শিদাবাদের উদ্দেশে রওনা দেওয়ার কথা। বুধ ও বৃহস্পতিবার তিনি জনসভা করবেন মালদহ, মুর্শিদাবাদে। পরের সপ্তাহে কোচবিহার। পুরোদমে জেলা সফর শুরুর আগে সাধারণ মানুষের সামনে রাজ্যের কাজের রিপোর্ট কার্ড তুলে ধরার এই সিদ্ধান্ত মমতার মাস্টার স্ট্রোক বলেই মনে করছে রাজনৈতিক মহল। কারণ, একেবারে তথ্য তুলে ধরেই মুখ্যমন্ত্রী বিজেপির প্রচারের জবাব দিতে চাইছেন বলে তাঁদের মত।
আজকের বৈঠকে উপস্থিত থাকতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে সকল মন্ত্রী এবং দপ্তরের সচিবদের। দুপুর একটার মধ্যে সকলকে নবান্ন সভাঘরে পৌঁছে যাওয়ার অনুরোধও জানানো হয়েছে। সোমবার এই নির্দেশ আসার পর থেকেই প্রতিটি দপ্তরে মন্ত্রী-আধিকারিকদের মধ্যে তৎপরতা বেড়েছে। নিজ নিজ প্রকল্পে বিগত ১৪ বছরে কী কী কাজ হয়েছে, তা নিয়ে পর্যালোচনায় বসতে দেখা গিয়েছে মন্ত্রী-আমলাদের। তবে গত সপ্তাহের মাঝামঝি দপ্তরগুলি থেকে তাদের কাজের খতিয়ান চেয়ে পাঠানো হয়েছিল মুখ্যমন্ত্রীর সচিবালয় থেকে। এমনকি বিগত ১৪ বছরে ই-কমার্স এবং বিভিন্ন ক্ষেত্রে অনলাইন পরিষেবা চালু করায় রাজ্য কতগুলি পুরস্কার পেয়েছে, তারও হিসেব হয়েছে। তবে বিশষ গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে সামাজিক সুরক্ষা ক্ষেত্রে কত টাকা ব্যয় করা হয়েছে, তার উপর। রাজ্যের তথ্য অনুযায়ী, ২০১০-১১ সালের তুলনায় সামাজিক সুরক্ষায় বরাদ্দ ৭ হাজার কোটি টাকা থেকে বেড়ে হয়েছে ৬২ হাজার কোটি টাকা।