আজ রাজ্যের ১৫ বছরের উন্নয়নের খতিয়ান তুলে ধরবেন মুখ্যমন্ত্রী
দৈনিক স্টেটসম্যান | ০২ ডিসেম্বর ২০২৫
আসন্ন বিধানসভা নির্বাচনে চতুর্থবার ক্ষমতায় ফেরার লক্ষ্য সামনে রেখেই এখন থেকে ঘুঁটি সাজাচ্ছে রাজ্যের শাসকদল। দীর্ঘ পনেরো বছরের শাসনকাল পেরিয়ে চতুর্থ দফায় ভোটযুদ্ধে নামতে চলেছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তার ঠিক আগেই আজ মঙ্গলবার নবান্নের সভাঘর থেকে প্রকাশ পেতে চলেছে তাঁর সরকারের উন্নয়নের বিস্তারিত ‘খতিয়ান’। সরকারি দপ্তরগুলির কাজের পরিসংখ্যানভিত্তিক এই ‘প্রোগ্রেস রিপোর্ট’কে নির্বাচন-পূর্ব এক গুরুত্বপূর্ণ রাজনৈতিক বার্তা হিসেবেই দেখা হচ্ছে।
নবান্ন সূত্রে জানা গিয়েছে, ২০১১ সালে রাজনৈতিক পালাবদলের পর থেকে ২০২৫ সাল পর্যন্ত রাজ্যের উন্নয়ন কোন স্তরে পৌঁছেছে, তার বিস্তারিত তথ্য সম্বলিত একাধিক সরকারি রিপোর্ট এদিন প্রকাশ করবেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। স্বাস্থ্য, শিক্ষা, কৃষি, গ্রামীণ পরিকাঠামো, শিল্প— সব ক্ষেত্রের সাফল্যের তথ্য একত্রে তুলে ধরা হবে। প্রশাসনিক দপ্তরগুলির বক্তব্য, এটি নিছক অনুষ্ঠান নয়, বরং পরবর্তী নির্বাচনের আগে মানুষের কাছে সরকারের উন্নয়নের একটি দলিল উপস্থাপন করা।
Advertisement
মুখ্যমন্ত্রী এ ব্যাপারে ‘তথ্যভিত্তিক মূল্যায়ন’-এর উপর জোর দিচ্ছেন। কন্যাশ্রী, লক্ষ্মীর ভাণ্ডার, স্বাস্থ্যসাথীর মতো জনকল্যাণমুখী প্রকল্পগুলি সমাজের বিভিন্ন স্তরে কতজনকে কীভাবে সাহায্য করেছে, তা সংখ্যাগত ভাষায় তুলে ধরা হবে নবান্নের ওই সভায়। বিশেষত নারী কল্যাণ এবং সামাজিক সুরক্ষা খাতে রাজ্যের ব্যয়, প্রকল্পভোগীর সংখ্যা এবং বাস্তব সুফল— এই সমস্ত ক্ষেত্রেই থাকছে পুঙ্খানুপুঙ্খ উপস্থাপনা।
শাসকদলের মতে, বিরোধীরা বিগত কয়েক বছরে রাজ্যের ভাবমূর্তি নিয়ে পরিকল্পিতভাবে নেতিবাচক প্রচার চালিয়েছে। আইনশৃঙ্খলা, দুর্নীতি, শিল্প নিয়ে বিরোধীদের আক্রমণের জবাব মুখে নয়, বরং সরকারি নথিপত্রে দেওয়া তথ্য দিয়েই তুলে ধরা হবে। তৃণমূলের শীর্ষ নেতৃত্বের দাবি, এই রিপোর্ট কার্ড দেখলেই মানুষ নিজেরাই বিচার করতে পারবেন, ২০১১ সালের আগের বাংলা ও বর্তমান বাংলার পার্থক্য কতটা।
প্রসঙ্গত, রাজনৈতিক মহলের ধারণা, আসন্ন বিধানসভা ভোটের মুখে মমতার এই রিপোর্ট কার্ড প্রকাশ বিরোধীদের কুৎসা ও অপপ্রচারের বিরুদ্ধে একটি বড় হাতিয়ার হয়ে উঠতে চলেছে। ২০১১’র আগে বাম জমানায় যেখানে বেছে বেছে দলের অনুগত ও বামপন্থীদের সরকারি সুবিধা দেওয়া হতো, সেখানে মমতা কারো রাজনৈতিক রং বিচার না করে জাতি-ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সকলকেই তাঁর প্রণীত বিভিন্ন প্রকল্পের সরকারি সুবিধা দিয়ে চলেছেন। সেই তালিকায় লক্ষ্মীর ভান্ডার থেকে শুরু করে স্বাস্থ্যসাথী, সবুজ সাথী, কন্যাশ্রী, রূপশ্রী, বাংলার বাড়ি সহ নাগরিক জীবনের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্পে বাংলার আমূল বদল ঘটিয়েছে।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের ধারণা, টানা ১৫ বছরের শাসনে কিছুটা ‘অ্যান্টি-ইনকাম্বেন্সি’ তৈরি হওয়াই স্বাভাবিক। বিরোধীরা প্রশাসনিক জটিলতা ও দুর্নীতির অভিযোগ তুলে জনমত তৈরির চেষ্টা করছে। এই অবস্থায় মুখ্যমন্ত্রীর উন্নয়ন-খতিয়ান প্রকাশকে রাজনৈতিকভাবে ‘নেতিবাচক হাওয়া কাটানোর প্রচেষ্টা’ হিসেবে দেখা হচ্ছে। বিশেষজ্ঞদের মতে, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এবার ভোটের লড়াইকে সম্পূর্ণ ‘উন্নয়ন নির্ভর’ করে তুলতে চাইছেন। তাই ভোটের দামামা বাজার আগে থেকেই সরকারের ‘ট্র্যাক রেকর্ড’ সামনে আনার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
যদিও নবান্নের অনুষ্ঠানটি সরকারি, কিন্তু এর রাজনৈতিক প্রভাব যে ব্যাপক হতে চলেছে, তা খুবই স্পষ্ট। সূত্রের খবর, রিপোর্ট প্রকাশের পর তা জেলা-সম্মেলন, অঞ্চলভিত্তিক সভা, বুথস্তরের কর্মিসভা— সর্বত্রই রাজনৈতিক প্রচারের কাজে লাগাবে তৃণমূল। দলের সোশ্যাল মিডিয়া উইং ইতিমধ্যেই প্রস্তুতি শুরু করে দিয়েছে। গ্রাফিক্স, ভিডিয়ো এবং সংক্ষিপ্ত তথ্যের মাধ্যমে রিপোর্টের বিষয়বস্তু সাধারণ মানুষের মোবাইলে পৌঁছে দেওয়া হবে। পাশাপাশি কর্মীদেরও নির্দেশ দেওয়া হবে, তাঁরা বাড়ি বাড়ি গিয়ে ২০১১-র আগের পরিস্থিতি ও বর্তমান অবস্থার পার্থক্য তুলে ধরবেন।
সব মিলিয়ে, পনেরো বছরের উন্নয়ন ও পথচলার এই রিপোর্ট কার্ড প্রকাশকে শাসকদল আসন্ন নির্বাচনের প্রথম বড় রাজনৈতিক বার্তা হিসেবেই দেখছে।